জোটে গেলেও ভোট দলীয় প্রতীকে,পালটাপালটির মধ্যে আরপিও অধ্যাদেশ জারি - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জোটে গেলেও ভোট দলীয় প্রতীকে,পালটাপালটির মধ্যে আরপিও অধ্যাদেশ জারি


মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ হলেও তাদের নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে-এমন বিধান বহাল রেখেই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার।নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে।এ বিধান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পালটাপালটি দাবির মধ্যে সোমবার রাতে এ অধ্যাদেশ জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এতে আদালত কর্তৃক পলাতক ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত দল জোট করলেও প্রধান শরিকের প্রতীক বা অন্য কারও মার্কায় ভোট করতে পারবে না।২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন করে। আরপিওর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবিতে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয় বিএনপি। এরপর ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিও ইসিতে একই দাবি জানায়। অপরদিকে সংশোধিত আরপিও বহাল রাখার দাবি জানায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আট সমমনা দল এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। দুপক্ষের পালটাপালটি দাবির মধ্যে ওই ধারা বহাল রেখেই অধ্যাদেশ জারি করল ইসি।এদিকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে নির্বাচনি আইনের সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধন করেছে ইসি। এখন নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন বাকি রয়েছে।

সংশোধিত আরপিওতে যেসব নতুন বিধান : সংশোধিত আরপিওতে আদালত কর্তৃক পলাতক ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আরপিওর ১২ অনুচ্ছেদের (১) উপদফায় এই বিধান যুক্ত করায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির যেসব নেতাকে আদালত পলাতক ঘোষণা করেছেন তারা নির্বাচনে অযোগ্য হচ্ছেন। এছাড়া প্রার্থী বা তার প্রস্তাবকারী/সমর্থনকারীকে সশরীরে রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এ আইনে। এ বিধানের ফলে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা নেই, কিন্তু রোষানলে পড়ার আতঙ্কে পলাতক রয়েছেন। তাদেরও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল। অনলাইনে জমা দেওয়ার যে সুযোগ ছিল নতুন বিধানে তা রাখা হয়নি।এছাড়া আরপিওতে আরও যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে-কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে সেখানে ‘না’ ভোট; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং কোস্টগার্ড যুক্ত করা; হলফনামায় দেশে ও বিদেশে থাকা সম্পদ উল্লেখ করা এবং অসত্য তথ্য দিলে নির্বাচনের পর সংসদ-সদস্য পদ বাতিল করা; নির্বাচনি জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে ফিরিয়ে আনা। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসংক্রান্ত সব অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকার ভোটারকে নির্বাচনি এজেন্ট নিয়োগ করার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করেছে ইসি। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে যে কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনি এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারতেন প্রার্থীরা। এখন ওই নির্বাচনি এলাকার ভোটার হতে হবে-এমন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। ফলে বহিরাগতরা নির্বাচনি এজেন্ট হতে পারবেন না।

প্রস্তাবিত আরপিওর ২৭ অনুচ্ছেদে সরকারি চাকরিজীবী ও কারাগারে আটক ব্যক্তিদের ভোটাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পোস্টাল ব্যালটে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে যারা ভোটার এলাকা ছাড়া অন্য কোনো এলাকায় চাকরি বা সরকারি দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত আছেন, তারা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। এছাড়া কারাগারে আটক বা আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। আর পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আগের সুযোগও রয়েছে।

এছাড়া আরপিওর ৭৩ অনুচ্ছেদে নির্বাচনে তফশিল ঘোষণা থেকে ফলাফল পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বা নির্বাচনি ফলাফল প্রভাবিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য, ছবি, ভিডিও, অডিও প্রচার করা হলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে।

Top