১০৮৯ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা এমপিওভুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত
মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম :শর্তসাপেক্ষে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা এমপিওভুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের মাদরাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক গতকাল সোমবার বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা এমপিওভুক্তির আবেদন করা ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা এমপিওভুক্তির অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। শর্ত সাপেক্ষে মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তির অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়। এই এক হাজার ৮৯টি ইবতেদায়ী মাদরাসার মধ্যে যেগুলো চলতি বছর জারি করা এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করেছে, সেগুলোকে এমপিওভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্ত করা হবে।দেড় হাজারের বেশি অনুদানভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা এমপিওভুক্তির আবেদন গত ৮ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রহণ করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, সেই আলিয়া মাদরাসা পদ্ধতিতে পঠন-পাঠন হয় ইবতেদায়ী মাদরাসায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমমান এই ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন হয় ১৯৮৪ সালে।
মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা তিন হাজার টাকা করে অনুদান পেয়ে থাকেন। এর বাইরে দেশে আরও ৫ হাজার ৯৩২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা রয়েছে, যেগুলো সরকারি কোনো অনুদান পায় না।শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে এ বছরের শুরুতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলোকে প্রথমে এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছিল কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।
দীর্ঘদিন ধরে জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। এর মধ্যে তাদের এক পদযাত্রায় পুলিশ লাঠিপেটা ও জলকামান ব্যবহার করে। শিক্ষকদের পিটুনির সেই ঘটনা আলোড়ন তোলে। তারই একপর্যায়ে গত ২৮ জানুয়ারি ইবতেদায়ী মাদরাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দেন মাদরাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।গত ২৫ জুন ইবতেদায়ী মাদরাসা এমপিওভুক্তির নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নীতিমালা অনুসারে, মাদরাসাগুলোর মোট ছয়টি পদ এমপিওভুক্ত হবে। ইবতেদায়ী প্রধান বেতন পাবেন ১০ম গ্রেডে। আর সাধারণ,বিজ্ঞান ও আরবি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে। আর ক্বারী বা নূরানী বিষয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৬তম গ্রেডে বেতন পাবেন। আর প্রতিটি ইবতেদায়ী মাদরাসার অফিস সহায়ক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যে পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা ২০ তম গ্রেডে বেতন পাবেন।নীতিমালা অনুসারে, মাদরাসাগুলোর শিক্ষক পদে এনটিআরসিএর সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। আর নীতিমালায় মাদরাসাগুলোর ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা এসেছে। প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হবে বলে নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
এমপিওভুক্তির জন্য ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলোর গ্রেডিং পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। একাডেমিক স্বীকৃতি, প্রতিষ্ঠানের জমি, প্রতিষ্ঠানিক অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, বার্ষিক পরীক্ষার গড় নম্বর, পরিবেশ ইত্যাদি সূচকে নম্বর নির্ধারণ করে মাদরাসাগুলোর গ্রেডিং করা হবে।
নীতিমালায় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আহ্বাায়ক করে ৭ সদস্যর এমপিও কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর মাদরাসাগুলোর কাগজপত্র যাচাই করে এমপিও দেবে। প্রথমে মাদরাসাগুলোকে এমপিও কোড দেওয়া হবে। শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির তারিখ থেকে বা এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে যোগদানের তারিখ থেকে এমপিও পাবেন।
বিক্ষোভ মিছিল করেননি শিক্ষকরা : সব ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণসহ ৫ দাবিতে গত ১৩ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। সোমবার তারা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ মিছিল করার পরিকল্পনা করলেও প্রধান উপদেষ্টা ১ হাজার ৮৯টি শিক্ষার্থীর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা এমপিওভুক্তির অনুমোদন দেওয়ায় তারা তা করেননি। তবে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।জানতে চাইলে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্য জোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলম সোমবার বিকালে বলেন, ১ হাজার ৮৯টি মাদরাসা এমপিওভুক্তির জন্য প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় অনুমোদন দিয়েছেন বলে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন। তারা আমাদের বিক্ষোভ মিছিল না করার অনুরোধ করেছেন। তাই আমরা বিক্ষোভ মিছিল করিনি। আমরা লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাব। তবে আপাতত আমরা নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করছি না।