নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ে প্রার্থী, আছে চমক
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। মনোনয়নে প্রাধান্য পেয়েছে বিগত আন্দোলনে ভূমিকা, এলাকায় জনপ্রিয়তাসহ কয়েকটি মানদণ্ড। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে করা হয়েছে প্রার্থীর তালিকা। তবে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া আর কোনো নেতাকেই দেওয়া হয়নি একের অধিক আসনে মনোনয়ন। বেশ কিছু আসনে এবার চমক দেখা গেছে। এর মধ্যে গুম নিয়ে সোচ্চার মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলিকে প্রার্থী করা হয়েছে ঢাকা-১৪ আসনে। গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে একটি আসন। চমকের মধ্যে আরও রয়েছে ফজলুর রহমান, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, লুৎফুজ্জামান বাবর, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজনের মনোনয়ন।এছাড়া অন্তত অর্ধশত আসনে তরুণদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ১২টি আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ১০ নারী। তবে আসাদুজ্জমান রিপন, শামসুজ্জামান দুদু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আব্দুস সালাম আজাদসহ আরও বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় নেতা মনোনয়ন পাননি। অভিনেতা, শিল্পী ও সাংবাদিকদের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। বিএনপি ঘোষিত সম্ভাব্য একক প্রার্থী তালিকা পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
স্থায়ী কমিটির নেতাদের মনোনয়ন : আগামী নির্বাচনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিন আসন থেকে নির্বাচন করবেন। একমাত্র তিনিই একাধিক আসন থেকে নির্বাচন করবেন। আসনগুলো হচ্ছে-দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বগুড়া-৬ আসন থেকে। অপর দিকে মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী হবেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনে। দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৪ সদস্যের মধ্যে আরও নয়জন প্রার্থী হচ্ছেন তাদের আসনগুলোতে। তারা হলেন-কুমিল্লা-১ আসনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস, ঢাকা-৩ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নরসিংদী-২ আসনে ড. আবদুল মঈন খান, চট্টগ্রাম-১০ আসনে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কক্সবাজার-১ আসনে সালাহউদ্দিন আহমদ, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভোলা-৩ আসনে হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও দিনাজপুর-৬ আসনে এজেডএম জাহিদ হোসেন।
মনোনয়নে চমক : এবার মনোনয়নে বেশ কয়েকটি আসনে চমক রয়েছে। এর মধ্যে আছে গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর মনোনয়ন। তাকে সিলেট-৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সানজিদা ইসলাম তুলি। তিনি ‘মায়ের ডাক’ নামের সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক। তার ভাই বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন গুম হওয়ার পর তিনি এ সংগঠন গড়ে তোলেন। গুম নিয়ে সোচ্চার ভূমিকায় দেশ-বিদেশে তিনি বেশ প্রশংসিত হন। মাদারীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আনিসুর রহমান। তাকে বিগত আন্দোলনের সময় গুম রাখা হয়েছিল। আরও চমক রয়েছে খুলনা-২ আসনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নেত্রকোনা-৪ আসনে লুৎফুজ্জামান বাবর, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে ফজলুর রহমান, পাবনা-৫ আসনে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চাঁদপুর-১ আ ন ম এহসানুল হক মিলন, নোয়াখালী-৬ মোহাম্মদ মাহবুরের রহমান শামীমসহ বেশ কয়েকটি আসনে।
একঝাঁক তরুণ : একঝাঁক তরুণ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে ঢাকা-১৬ আসনে আমিনুল হক, ঢাকা-৩ তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা-৬ ইশরাক হোসেন, পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ নওশাদ জমির, পঞ্চগড়-২ ফরহাদ হোসেন আজাদ, সিরাজগঞ্জ-৫ মো. আমিরুল ইসলাম খান, যশোর-৬ কাজী রওনাকুল ইসলাম, খুলনা-৩ রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আজিজুল বারী হেলাল, বরিশাল-৪ মো. রাজীব আহসান, টাঙ্গাইল-৩ এসএম ওবায়দুল হক নাসির, গাজীপুর-২ এম মঞ্জুরুল করিম রনি, গাজীপুর-৫ ফজলুল হক মিলন, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, নারায়ণগঞ্জ-১ মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপু, নারায়ণগঞ্জ-২ নজরুল ইসলাম আজাদ, ফরিদপুর-২ শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৪ শহীদুল ইসলাম বাবুল, গোপালগঞ্জ-১ মো. সেলিমুজ্জামান মোল্ল্যা, শরীয়তপুর-৩ মিয়া নুরুদ্দিন আহমেদ অপু, চট্টগ্রাম-৫ আসনে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৭ হুম্মাম কাদের চৌধুরীসহ অর্ধশত প্রার্থী।
১০ নারী : প্রার্থীর তালিকায় ১২টি আসনে ১০ নারীর নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে কেবল খালেদা জিয়ার জন্য তিনটি আসন ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১। এছাড়া ঢাকা-৪ আসনে সানজিদা ইসলাম তুলি, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খানম রিতা, সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর লুনা, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন পুতুল, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা ও যশোর-২ আসনে সাবিরা সুলতানা মুন্নী।
হেভিওয়েট যারা বাদ পড়েছেন : স্থায়ী কমিটির নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খানের পাশাপাশি সেলিমা রহমান প্রথম দফার তালিকায় নেই। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জমান রিপন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সহসম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আলমসহ আরো বেশ কয়েকজন হেবিওয়েট কেন্দ্রীয় নেতা মনোনয়ন পাননি। প্রথম দফার প্রার্থী তালিকায় নেই আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীমেরও নাম। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী না চাইলেও তাকে দল মনোনয়ন দেবে-এমন প্রত্যাশা করেছিলেন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। বেশ কয়েকজন নেতা যুগান্তরকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, রুহুল কবির রিজভীর দলের জন্য ত্যাগ ও জিয়া পরিবারের প্রতি আনুগত্যের মূল্যায়ন করা উচিত।