জুলাই সনদ যেন প্রতারণায় পরিণত না হয় - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ যেন প্রতারণায় পরিণত না হয়


মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন:এক দল সনদ থেকে স্বাক্ষর মুছে দিতে চায়। আরেক দল সনদ বাস্তবায়নকে ভেস্তে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে। বৈঠকে কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং সদস্য-বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া। এনসিপির পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা। এনসিপি নেতারা জানান, এখন কোনো দলের সঙ্গে জোট নিয়ে তাদের আলোচনা হয়নি।আখতার হোসেন বলেন, আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে।জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নে একটি আদেশ প্রস্তুত করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি ইতিবাচক। সনদ বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি অগ্রগতি। তবে কোনো দলের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত এই সনদ যাতে প্রতারণার বস্তুতে পরিণত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। শনিবার দুপুরে জাতীয় সংসদের এলডি হলে এক ব্রিফিংয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এসব কথা বলেন। এর আগে একই স্থানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির নেতারা। তার মতে, অনেক দল জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেও এখন দুই ভাগে বিভক্ত। তবে এই আদেশের মূল বক্তব্য কী, সে বিষয়গুলো জানাতে ঐকমত্য কমিশন ‘অপারগতা’ প্রকাশ করেছে। ফলে এনসিপি এখনো আশাবাদী হতে পারছে না। তিনি বলেন, এনসিপির প্রত্যাশা-কমিশন যে খসড়া প্রস্তুত করছে, সেটা তাদের সঙ্গে শেয়ার করবে। এর ফলে পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়ে সনদ স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, সেখানকার টেক্সট, কনটেন্ট এবং এর কার্যকারিতার জায়গাগুলো কী হবে? এখন পর্যন্ত তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আমরা আমাদের দাবিগুলো কমিশনে উপস্থাপন করেছি। তারা সেই দাবিগুলো নিজেদের মধ্যে এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, জুলাই সনদের জন্য কমিশন যে খসড়া করেছে, তা যেন কোনোভাবেই কোনো এক দলের পক্ষপাতিত্বমূলক না হয়।

এই খসড়া যেন জাতির সবার একটা সম্পদ হতে পারে, সেটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এর ব্যতিক্রম হলে আমরা ধরে নেব ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে লন্ডনে যে বৈঠক হয়েছে, সরকার সেটিই বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের আন্তরিকতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেটা যেন কোনোভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো কোনো দলের চাপে পড়ে একটা কাগুজে দলিল হিসাবে জাতির কাছে বাস্তবায়ন পরিপন্থি হিসাবে উপস্থাপিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এনসিপি নেতাদের দাবি-সংস্কারের আলোচনা বাংলাদেশের মেইন স্ট্রিম জায়গায় রাখতে তাদের দল থেকেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। জুলাই সনদ যেন একটা আইনি ভিত্তি পরিপূর্ণভাবে লাভ করতে পারে, সে কারণে দীর্ঘসময় ধরে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত ছিল। যতক্ষণ সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হয়, ততক্ষণ তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের যতটুকুতে এনসিপি একমত হতে পেরেছে, সেটাও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথে বড় ধরনের অগ্রগতি সাধন করবে। এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নিলেও যতটুকু অর্জন, সেটাকেও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে পথরেখা জাতির কাছে পরিষ্কার করতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকবে বলে জানান এই নেতা। সে কারণেই ঐকমত্য কমিশন ও এনসিপির মধ্যে শনিবার একটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অনানুষ্ঠানিকভাবে হয়েছে। এনসিপি মনে করে, জুলাই সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নই কেবল সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে। শাপলা প্রতীকেই নির্বাচন করতে চান জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে যে কোনো দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জোট হতে পারে।’ প্রসঙ্গত, জুলাই সনদ ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। ১৭ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি দল সনদে স্বাক্ষর করেছে। পরের দিন স্বাক্ষর করে গণফোরাম। অর্থাৎ ২৫টি দল ইতোমধ্যে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অংশীজন এনসিপি এখনো সই করেনি। দলটি বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের লিখিত কপি এবং গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। তবে গণভোটের ব্যাপারে দলগুলো একমত হলেও ভোটের সময় নিয়ে আপত্তি আছে। বিএনপি বলছে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে ভিন্ন ব্যালটে হবে। জামায়াত ও এনসিপি বলছে আগে গণভোট, পরে জাতীয় নির্বাচন। এ নিয়ে বর্তমানে মাঠে আন্দোলন করছে জামায়াতসহ ৮টি দল। এ অবস্থায় শনিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে এনসিপি।

Top