মামলায় পলাতক ব্যক্তিরা কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মামলায় পলাতক ব্যক্তিরা কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না


মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিন বাহিনীকে নির্বাচনি দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। এমন বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। সংশোধিত আরপিওতে ‘না’ ভোটের বিধান রাখা হয়েছে। যে সংসদীয় আসনে একজন প্রার্থী থাকবেন, সেখানে ভোটাররা ‘না’ ভোট দিতে পারবেন। কোনো সংসদীয় আসনে অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে নির্বাচন কমিশন। ভোট গণনার সময় মিডিয়া থাকতে পারবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সম্পর্কিত বিধানগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে।মামলায় পলাতক ব্যক্তিরা কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকেও যুক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঢাকার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এ সময় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সম্প্রতি ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় ৮শ মামলায় জামিন দিয়েছেন। এটি অস্বাভাবিক। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শ্রম আইন (সংশোধিত) চূড়ান্ত অনুমোদন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ও সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দায়িত্ব শেষ করে যত তাড়াতাড়ি যেতে পারি বাঁচব।’

আরপিও সংশোধন : আসিফ নজরুল বলেন, আদালত যাদের পলাতক বলবেন, তারা নির্বাচন করতে পারবেন না। বিচার চলাকালীনও পলাতক হয়। অর্থাৎ পলাতক ব্যক্তিদের আর কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে না। তিনি বলেন, আরপিও থেকে ইভিএমসংক্রান্ত বিধানগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা, নৌ এবং বিমানবাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে। জেলায় যেসব নির্বাচন অফিস আছে, সেটা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে থাকবে, এটা বিধান করা হয়েছে। যারা নির্বাচন করবেন, তাদের অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে যত আয় আছে, সম্পত্তি আছে, সবকিছুর বিবরণ দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচনে যারা প্রার্থী থাকবেন, তাদের সবকিছুর বিবরণ নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। এটা আমরা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করব। সবাই জানবে। এ সংক্রান্ত একটা বিধান এই আইনে থাকছে। নির্বাচনে জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান করা হয়েছে। যে আসনে একজন প্রার্থী থাকবে, সেখানে না ভোটের বিধান রাখা হয়েছে। ভোটাররা চাইলে একক প্রার্থীর বিপরীতে ‘না’ ভোট দিতে পারবেন। তিনি বলেন, আপনাদের ২০১৪ সালের ভুয়া ইলেকশনের স্মৃতি নিশ্চয়ই মনে আছে। ১৫৪টা আসনে একজন প্রার্থী ছিল। সাজানো নির্বাচন ছিল। এ ধরনের নির্বাচন যেন না হয়, একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে যারা ভোটার আছে, তারা না ভোট দিতে পারবে। প্রার্থী পছন্দ না হলে না ভোট দেবে। তখন সেখানে আবার নির্বাচন হবে। যদি নির্বাচনি জোট হয়, জোটের অংশ হলেও প্রার্থীকে দলের প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। যাতে ভোটাররা ক্লিয়ার আইডিয়া পান যে প্রার্থী কোন দলের। পোস্টাল ব্যালট প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, যারা নির্বাচনি কাজে ব্যস্ত থাকেন এবং প্রবাসীদের জন্য এই ব্যবস্থা। যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার বা অফিসার নির্বাচনি কাজে ব্যস্ত থাকেন। লাখ লাখ মানুষ নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। আমরা বিধান করেছি, পোস্টাল ব্যালটে তারা ভোট দেবেন। যারা প্রবাসী আছেন, তারা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন। ভোট গণনার জায়গায় মিডিয়া থাকতে পারবে, সেটার বিধান করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, যারা রাজনৈতিক দলকে টাকা-পয়সা দেবেন, দান অনুদান বা চাঁদা যেভাবে হোক না কেন, ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি হলে এটা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দিতে হবে। যিনি দেবেন তার ট্যাক্স রিটার্নটাও জমা দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগে বিধান ছিল, নির্বাচনি এলাকায় যদি কোনো ভোটকেন্দ্রে গণ্ডগোল হয় তবে সে কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করা হতো। এখন নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে একটা নির্বাচনি এলাকাতেই এত বেশি অনিয়ম হয়েছে যে পুরো নির্বাচনি এলাকার ভোট বাতিল করা উচিত, তাহলে ইলেকশন কমিশন সেটা করতে পারবে। সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন : আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সম্প্রতি ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় ৮শ মামলায় জামিন দিয়েছেন। জামিন উনি দিতেই পারেন। কিন্তু এই অল্প সময়ে এতগুলো মামলা কীভাবে শুনেছেন। সেখানে বিচারিক বিবেচনা ছিল কিনা? সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কেউ এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেননি। আমি মনে করি অনুসন্ধান করা উচিত।

সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ : এদিনের বৈঠকে সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছে। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। ড. আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় আইন নিয়ে আমরা প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে কথা বলেছি। এবার তা বাস্তবায়নের পথে।

শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ : আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। এই আইনটি যুগান্তকারী। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর কমিটি অব এক্সপার্টসের সুপারিশ, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও রাষ্ট্রের মতামত এবং ত্রিপক্ষীয় কমিটির (শ্রমিক-মালিক-সরকার) আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধনগুলো করা হয়েছে। নতুন সংশোধনীতে শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিল্প-কারখানায় বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াও আরও কার্যকর করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন অধ্যাদেশ : আসিফ নজরুল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন অধ্যাদেশের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে কেউ বাংলাদেশে অবস্থানকালে বিদেশে অপরাধ করে থাকলেও তার বিচার করা যাবে। দুদকের এজাহার দায়ের, অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দুদকে অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জুলাই স্মৃতি জাদুঘর অধ্যাদেশ : গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর অধ্যাদেশ নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। আসিফ নজরুল বলেন, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর হবে। এখানে লোকবল লাগবে। বাজেট লাগবে। সরকার সবকিছুই করবে। তবে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

নগর পরিকল্পনা : আবাসন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে যারা প্লট বা ফ্ল্যাট কেনে তারা বিভিন্ন ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হয়। তাদের হয়রানি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘স্থানিক পরিকল্পনা অধ্যাদেশ ২০২৫’র নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। এটি মূলত নগর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় কোম্পানিগুলো যাতে পরিবেশ আইন ও নীতিমালা মেনে চলে সেটি নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।

Top