কালো উইকেটে আলো ছড়াল বাংলাদেশ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :সেই একই মিরপুর। অথচ দৃশ্যপট একেবারে ভিন্ন। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে যে উইকেট ব্যাটারদের জন্য ছিল মৃত্যুকূপ, সেই কালো উইকেটেই বৃহস্পতিবার আলো ছড়ালেন সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান। তাদের ঝলমলে ব্যাটিংয়ে রঙিন হয়ে উঠল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। অলিখিত ফাইনালে রূপ নেওয়া তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ১৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ভর করে বাংলাদেশ তুলে ফেলে আট উইকেটে ২৯৬ রান। সেই রান-পাহাড়ে পিষ্ট হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেনদের ঘূর্ণিতে নাকাল হয়ে ৩০.১ ওভারে মাত্র ১১৭ রানে অলআউট সফরকারীরা। ১৭৯ রানের বিশাল জয়ে দেড় বছর পর ওয়ানডে সিরিজ জয়ের (২-১ ব্যবধানে) স্বাদ পেল টাইগাররা। টানা চারটি সিরিজ হারের পর ওয়ানডে অধিনায়ক হিসাবে এই প্রথম সিরিজ জিতলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের টি ২০ সিরিজ খেলবে দুদল। রানের ব্যবধানে ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয় এটি। এর চেয়ে বড় জয় আছে শুধু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০২৩ সালে ১৮৩ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগের বড় জয়টা ছিল ১৬০ রানের, ২০১২ সালে খুলনায়। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করতে না পারার আক্ষেপ থেকে গেল। সিরিজটা ৩-০ ব্যবধানে জিতলে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে (৭৯) টপকে নয়ে উঠে যেত বাংলাদেশ (৭৬)। সেটি না হলেও এই জয়ে ঘুচেছে দেড় বছরের খরা। এর আগে বাংলাদেশ সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল ২০২৪ সালের মার্চে।
টানা তিন ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছে বাংলাদেশ। আগের দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের ধরন ও রান ছিল কাছাকাছি। কাল শেষ ওয়ানডেতে মিরপুরের কালো উইকেটের চরিত্রই যেন বদলে দিলেন সৌম্য ও সাইফ। শুরু থেকেই বাহারি সব শটে গ্যালারি মাতিয়ে তোলেন দুই ওপেনার। ২৫ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর যখন ১৭৬/০, মনে হচ্ছিল সাড়ে তিনশ রানও অসম্ভব নয়। কিন্তু শুরুর জুটি ভাঙার পরই ছন্দপতন। টর্নেডো ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ওডিআই ফিফটি তুলে নেওয়া সাইফ ছয়টি করে চার-ছক্কায় ৭২ বলে ৮০ রান করে আউট হন। একটু পর ৮৬ বলে ৯১ রানে থামেন সৌম্য। তার ইনিংসে ছিল সাতটি চার ও চারটি ছক্কা। সেঞ্চুরির দুয়ারে গিয়ে ছক্কার চেষ্টায় আউট হন তিনি আকিল হোসেনের বলে। সেঞ্চুরি মিসের দুঃখ হয়তো পরে কিছুটা কমেছে ম্যাচসেরা হওয়ায়। ১৭৬ রানের জুটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি। পরের ব্যাটাররা কেউই সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। নাজমুল হোসেন ৪৪ এবং তাওহিদ হৃদয় ২৮ রান করেন। শেষদিকে নুরুল হাসানের আট বলে ১৬* রানের ইনিংস দলকে তিনশর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এক ওভারে তিনটিসহ মোট চার উইকেট নেন আকিল হোসেন।
২৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের চার স্পিনারের মিলিত তাণ্ডবে জয়ের সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি উইন্ডিজ। টপঅর্ডার ধসিয়ে দেওয়া নাসুম আহমেদ মাত্র ১১ রানে নেন তিন উইকেট। সিরিজসেরা রিশাদ হোসেনও ধরেন তিন শিকার। তিন ম্যাচে তার উইকেট ১২টি। ২০১৫ সালের পর কোনো ওয়ানডে সিরিজে ১০টির বেশি উইকেট পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি রিশাদ। এছাড়া অধিনায়ক মিরাজ ও তানভীর ইসলাম নেন দুটি করে উইকেট। শেষ ব্যাটার হিসাবে আউট হওয়া আকিল হোসেন দশে নেমে ১৫ বলে করেন সর্বোচ্চ ২৭ রান।