দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও এখনো চার ধরনের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও এখনো চার ধরনের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে


নুর নবী জনী : দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও এখনো চার ধরনের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মাসিক ইকোনমিক আপডেট প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার এটি প্রকাশ করা হয়।এর মধ্যে রয়েছে-বিনিয়োগে ভাটা, ঋণ সংকোচন, উচ্চ সুদের হার এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণে অর্থনীতিতে ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-জমা বাড়ছে, কিন্তু ঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এছাড়া ব্যবসায় আস্থাহীনতা রয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পর্যায়ে নেমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে। সরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। পাশাপাশি বাড়ছে সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা। এই অবস্থা বিনিয়োগ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্প্রসারণের প্রতি গভীর অনীহার ইঙ্গিত দেয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে। ক্রমাগত আর্থিক দুর্বলতার মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-উচ্চ সুদ হার, সতর্ক ঋণ প্রদান এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। এদিকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে ছিল, যা সামান্য ঊর্ধ্বমুখী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে-চাল ও খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমলেও সামগ্রিক মূল্যচাপ অব্যাহত আছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয় সেপ্টেম্বর মাসে কমে দাঁড়ায় ৩৬২৭ মিলিয়ন ডলারে। রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২১ শতাংশ, তবুও লক্ষ্য পূরণে ঘাটতি রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চালের অবদান হলো ৪৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। এরপরই রয়েছে মাছের-২৮ দশমিক ১১ শতাংশ। আড়া ফলের ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, সয়াবিন তেলের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ, মাংসের ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং দুধের অবদান ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরলেও বিনিয়োগে গতি আসছে না। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। আর সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা নতুন উদ্যোগ নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রেই স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগ নিলেও মূল সমস্যা এখন বিনিয়োগের গতি কমে যাওয়া। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় নতুন কারখানা স্থাপন, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ বা ব্যবসা বড় করার আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে। গত দশ বছরের মধ্যে এটি অন্যতম সর্বনিম্ন হার। এর আগে এ প্রবৃদ্ধির গড় ছিল ১২ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ঋণ প্রবৃদ্ধি না বাড়লে কর্মসংস্থান, শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানিসহ সবখানেই প্রভাব পড়বে। এছাড়া ব্যাংকগুলো বর্তমানে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকারি ঋণ বিতরণে। কারণ, সরকার উচ্চ সুদে বড় অঙ্কের ঋণ নিচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতের জন্য ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার যখন বেশি ঋণ নেয়, তখন বেসরকারি খাত দূরে চলে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ পান না। এতে বিনিয়োগ কমে যায়। উচ্চ সুদের হার আঘাত করছে উদ্যোক্তাদের পরিকল্পনায়। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের গড় সুদের হার ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ। অনেক ব্যাংক আবার গোপনে আরও বেশি সুদ নিচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ব্যবসাতো দূরের কথা, ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই বড় সমস্যা। সুদের হার নিয়ন্ত্রণে না আনলে বিনিয়োগে কোনো গতি ফেরানো সম্ভব নয়। ব্যাংক খাতে অনিয়ম, খেলাপি ঋণ এবং আমানতের কম সুদ মিলিয়ে একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

Top