আমরা শঙ্কিত এবং বৈদেশিক ক্রেতারাও উদ্বিগ্ন - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমরা শঙ্কিত এবং বৈদেশিক ক্রেতারাও উদ্বিগ্ন


নুর নবী জনী:আমরা শঙ্কিত এবং বৈদেশিক ক্রেতারাও উদ্বিগ্ন। এই অগ্নিকাণ্ডের দায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি), কাস্টম হাউজ এবং বিমান বাংলাদেশ কেউই এড়াতে পারে না। কারণ সিএএবি কার্গো ভিলেজের মালিক, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত পণ্যের তত্ত্বাবধায়ক এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পণ্য হ্যান্ডলিং এজেন্ট। এমন একটি সংবেদনশীল স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কেউই যথাযথ মনোযোগ দেয়নি। এই ঘটনায় শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয়নি, দেশের ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ শিল্পের ২৮ কোটি টাকা ও ওষুধশিল্পের ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়েছে। ফলে রপ্তানিমুখী শিল্পের সাপ্লাই চেইনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এ অগ্নিকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক ও পার্শ্ববর্তী দেশের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ী নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিজিপিএমইএ, লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস, ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল, ওষুধশিল্প সমিতি, জুয়েলারি সমিতি, ফ্রোজেন ফুডস্, প্লাস্টিক গুডস রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ব্যবসায়ী সমাজ ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা।

অগ্নিকাণ্ডের কারণে রপ্তানি শিল্প ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে উল্লেখ করে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, এখনই তা নির্ধারণ করা কঠিন। সরাসরি ক্ষতি হয়েছে আগুনে পুড়ে যাওয়া পণ্যে। পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি না হওয়ায় আরও বড় ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে বাজারে অবস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে, ক্রেতাদের আস্থা কমবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে সংগঠনগুলো তার সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। তবুও প্রাথমিকভাবে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত কয়েকদিনে আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেডে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ধারাবাহিকতা উদ্যোক্তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। কার্গো ভিলেজের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কার্যকর ফায়ার ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে হাতেম বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিতে হবে। প্রয়োজনে সরকার উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে পারে। যেসব পণ্যের বিমা ছিল না, সেগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দিতে হবে। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করতে হবে। ওষুধশিল্পের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আলাদা গুদামের ব্যবস্থা এবং নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম স্থাপন করতে হবে। কার্গো ভিলেজের গুদাম ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ৩০৭টি ওষুধ কোম্পানি আছে। এর মধ্যে ২৫০টি কোম্পানি সচল আছে। সাধারণত ওষুধশিল্পের দামি ও জরুরি কাঁচামাল বিমানের মাধ্যমে আনা হয়। বড় ওষুধ কোম্পানি গড়ে ১০-১২টি এবং ছোট কোম্পানির ১-২টি চালান বিমানবন্দরে আসে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এসব দামি ও জরুরি কাঁচামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় ৩২ কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের ২০০ কোটি টাকার বেশি কাঁচামাল পুড়ে গেছে। বাকি কোম্পানিগুলো হিসাব দিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে যাওয়ার কারণে ৩ হাজার কোটি টাকার ওষুধের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। কারণ একটি ওষুধ বানাতে ৫৩টি পর্যন্ত উপাদান লাগে।

গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিপিএমইএ) সভাপতি শাহরিয়ার বলেন, এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে অ্যাক্সেসরিজ শিল্পের ২৮ কোটি টাকার কাঁচামাল পোড়ার খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অগ্নিকাণ্ডের পেছনে সরকারের কোন সংস্থার গাফিলতি আছে, তা তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা এই আগুন যদি কোনো কারখানায় লাগত তাহলে শিল্পমালিকের কোমরে দড়ি দিয়ে ধরে আনা হতো।বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বিমানবন্দরে আগুন লজ্জাজনক ঘটনা। আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। এ ঘটনা কোনো শিল্পকারখানায় ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে মালিকের নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে যেত। বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় জড়িতদের গাফিলতি থাকলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।অগ্নিকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক ও পার্শ্ববর্তী দেশের ষড়যন্ত্র থাকার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের ওপর অনেকের চোখ রয়েছে। রাজনৈতিক এক ধরনের ষড়যন্ত্র আছে। বহির্বিশ্বে যেন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, তা নিয়ে এক ধরনের ষড়যন্ত্র আছে। পার্শ্ববর্তী দেশের এক ধরনের চিন্তাভাবনা আছে, যাতে তাদের ব্যবসা ভালো হয়, আমাদের ব্যবসা কমে যায়।শওকত আজিজ রাসেল আরও বলেন, এ বছর পোশাক খাতে ছয় শতাংশ বাজার কমেছে, নিট খাতে পাঁচ শতাংশ কমেছে। গত বছর জুলাই আন্দোলন হয়েছে, সে সময়ও এত রপ্তানি কমেনি। তাহলে এ বছর কেন বাজার কমল? এটা ষড়যন্ত্রের অংশ।

Top