শুধু বাংলাদেশ নয়,সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুধু বাংলাদেশ নয়,সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :শুধু বাংলাদেশ নয়,সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।তার মতে,জুলাই সনদ তরুণের স্বপ্নের দ্বিতীয় ধাপ। প্রথম ধাপে স্বৈরাচার বিতাড়িত হয়েছে। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে এমন ব্যবস্থা গড়তে চাই,যাতে সারা বিশ্ব আমাদের অনুসরণ করে।তবে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ছয়টি দল সনদে স্বাক্ষর করেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রায় দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে,সেগুলো এই সনদে স্থান পেয়েছে। সেখানে রাষ্ট্র সংস্কারে ৭টি অঙ্গীকার ও ৮৪টি প্রস্তাব রয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তির সুপারিশ করবে কমিশন।গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্নে লালিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ অবশেষে স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের ২৪টি রাজনৈতিক দল বহু কাঙ্ক্ষিত এই দলিলে শুক্রবার সই করেছে। স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ছিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এর মাধ্যমে জুলাই সনদ নিয়ে দীর্ঘদিনের আশঙ্কা এবং অনিশ্চয়তার অবসান হলো। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়। এটি নাগরিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি। এটি বাস্তবায়ন হলে ‘আমি থেকে আমরায়’ রূপ নেবে বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় ‘নবজন্ম। এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা। বর্বরতা থেকে সভ্যতায় যাত্রা শুরু।তবে এখনো এটি কাগজে আছে। কাজে প্রমাণ করতে হবে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে।

সনদ স্বাক্ষর : অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাক্ষরিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত সনদ। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় খোলা আকাশের নিচে বসে এই মিলনমেলা। সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। শুক্রবার দুপুরের পর গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ছিল। এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই উপস্থিত হন আয়োজক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন-প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদ, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন অংশীজনের প্রতিনিধিরা। বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে ব্যান্ডদলের বাদ্যের তালে মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে স্বাগত জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় দিয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চে তার সঙ্গী হন জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। সামনের সারিতে আগেভাগেই আসন গ্রহণ করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। বিকাল ৫টায় জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। সনদ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতার পর সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শেষে দলগুলোর নেতাদের নিয়ে ফটোসেশনে অংশ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তবে জুলাই সনদের আনুষ্ঠানিকতা বিকাল ৪টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ায় কিছুটা দেরিতে শুরু করেন আয়োজকরা। আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয় সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায়। সেনাসদস্যরা সড়কের প্রবেশমুখ ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নেন। সংসদ ভবনের দিকে প্রবেশ বন্ধ রাখে পুলিশ। এছাড়া সেখানে র‌্যাব, বিজিবি, সোয়াত ও এপিবিএনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জুলাই যোদ্ধা ও শহীদের পরিবারের সদস্যদেরও দেখা গেছে। সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। অনুষ্ঠানের আগে সংসদ এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের একটি অংশ বিক্ষোভ করেছে। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তবে দেড় ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

স্বাক্ষর করেছেন যেসব দলের প্রতিনিধি : ১. বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, ২. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির, ৪. খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, ৫. আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ৬. নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ৭. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন, ৮. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, ৯. গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, ১০. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব, ১১. গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, ১২. বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, ১৩. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ১৪. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান, ১৫. বারো দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, ১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ১৭. জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া ও গাজীপুর জেলা ছাত্রফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ, ১৮. জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস, ১৯. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, ২০. বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম, ২১ ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম), ২২. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ২৩. ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী এবং ২৪. আমজনতার দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান। এছাড়া স্বাক্ষর করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য মো. আইয়ুব মিয়া, সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।

যেসব দল স্বাক্ষর করেনি : নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল ৫২টি। শুরুতে সনদ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে ৩৩টি। তবে ৩০টি দলকে চিঠি দেয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ৫টি দল সই করেনি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা। তবে গণফোরাম তাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমানের নাম স্বাক্ষরের জন্য পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা স্বাক্ষর করেননি। যদিও তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দলটির পক্ষ থেকে যুগান্তরকে জানানো হয়, তারা পরে স্বাক্ষর করবেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনা ‘বর্বরতা’ থেকে সভ্যতায় আসার প্রমাণ। এখন এটি কাগজে আছে। কিন্তু কাজে প্রমাণ করতে হবে, আমরা সেই সভ্যতা অর্জন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। যে সুর আজকে বাজালাম, সেই ঐক্যের সুর নিয়ে নির্বাচনে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সেখানে এই ঐক্য যেন বজায় থাকে। তিনি বলেন, আজকে ঐকমত্যে যেভাবে আমরা সনদ তৈরি করলাম, নির্বাচনের ব্যাপারেও কীভাবে নির্বাচন করবেন সেজন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বসে একটি সনদ করেন। যেনতেন করে নির্বাচন করার মানে হলো আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে যাওয়া। এটি হলে এতকিছু করে লাভ কী! এ কথা লিখে আমার লাভ কী হলো? সনদে কথা লিখলাম কিন্তু কাজের মধ্য দিয়ে মানলাম না।’ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিজেরা বসুন, নির্বাচনটা কীভাবে সুন্দর, উৎসবমুখরভাবে করবেন, ইতিহাসে স্মরণীয় করবেন সেটি নিশ্চিত করুন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কীভাবে নির্বাচন সুন্দরভাবে করতে হয়? সেটা শুধু জাতির জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য যেন উদাহরণ হিসাবে থাকে। নির্বাচন আমরা এমনভাবে করব, দুনিয়ার কেউ এসে বলতে পারবে না এখানে খুঁত হয়েছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এই সনদ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। গণতান্ত্রিক কারণেই রাজনীতিতে মতের পার্থক্য থাকবে। কিন্তু একটি জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই প্রত্যাশিত জায়গা হলো গণতন্ত্র। তিনি বলেন, বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে। কিন্তু আমরা যেন বলতে পারি, অনেক স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হচ্ছে, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। সবাই আমরা যে কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকব। তিনি বলেন, এই দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব এবং অনন্য সময়। একটি ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের জন্য এটি দীর্ঘপথের যাত্রার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শের রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা, ৫৩ বছর ধরে বারবার হোঁচট খেয়েছে। এর পরও দেশের নাগরিকরা গণতন্ত্র এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছে। এরপর ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় এই সনদ। একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এই জাতীয় সনদে উপনীত হয়েছে। এই সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়, এটা নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ও রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে। তার মতে, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সবার যে চেষ্টা, তা একদিনে সাফল্য অর্জন করবে না। আবার একটি দলিল কেবল সেই নিশ্চয়তা দেবে না। কিন্তু যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে তার বাস্তবায়ন ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে।

মঞ্চের প্রথম সারিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, জয়নুল আবদিন ফারুক, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, জয়নাল আবেদিন (ভিপি জয়নাল), খায়রুল কবির খোকন, লুৎফুজ্জামান বাবর এবং মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ।

Top