ভোক্তার জীবনমান উন্নয়নে সরকারি ব্যয় সর্বনিম্ন - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোক্তার জীবনমান উন্নয়নে সরকারি ব্যয় সর্বনিম্ন


মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন:সরকার জিডিপির মাত্র ১৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় করছে। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ ব্যয় ২০ থেকে সাড়ে ২৮ শতাংশ। এমনকি ভুটান সরকারও বাংলাদেশের দ্বিগুণ অর্থ খরচ করে। এদিকে গত কয়েক বছর ধরে দেশে সরকারি ব্যয় কমছে। গত বছর সামান্য বাড়লেও চলতি অর্থবছরে তা কমে যাবে।ভোক্তার জীবনমান উন্নয়নে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় সরকারি খাতের ব্যয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকারি খাতের ব্যয় ও রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোক্তার জীবনমান উন্নয়নে সরকারি খাতের ব্যয় না বাড়ায় অবকাঠামোগতভাবে দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণযোগাযোগ, মানবসম্পদেও উন্নয়ন হচ্ছে ধীরগতিতে। গত ৪ দশক ধরেই স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি খাতের ব্যয় কমছে। দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার যেভাবে বাড়ছে, ওই হারে বাড়ছে না এই ব্যয়। ফলে কর্মসংস্থান ও মানুষের আয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি শুধু বেসরকারি খাতের বিকাশের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকায় থাকা বাংলাদেশের অবস্থাও একই। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশসহ অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে দেশ। এর জন্য রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে থাকাকে দায়ী করা হচ্ছে। রাজস্ব আহরণ ও জিডিপির অনুপাতেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। রাজস্ব আয় কম হচ্ছে বলে ভোক্তার জীবনমান বাড়াতে বেশি অর্থ খরচ করতে পারছে না।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরে সরকারি ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় নানা সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় হয়েছিল ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর পরের টানা ৩ বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারি ব্যয় ছিল ১৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় আরও কমে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে ১২ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে। আলোচ্য সময়ে করোনার সংক্রমণ ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে সরকারের রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। ওই সময়ে সরকার ব্যাপকভাবে ঋণ নিয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যে কারণে মানুষের কল্যাণে সরকারি খাতের ব্যয় কমেছে। গত অর্থবছরে তা সামান্য বেড়ে আবার ১৩ দশমিক ২ শতাংশে ওঠে। চলতি অর্থবছরে সরকারি ব্যয় আবার কমে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ এই ২ অর্থবছরেও সরকারি ব্যয় খুব একটা বাড়বে না। ওই সময়ে তা ১২ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৪ দশকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সরকারি ব্যয়ে দক্ষতার অবনতি ঘটেছে। যেসব অর্থ ব্যয় হচ্ছে তার একটি বড় অংশ যথাযথ কাজে আসছে না। তবে বাংলাদেশ ও আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার মতো কিছু দেশে গত এক দশকে সরকারি খরচে দক্ষতা বেড়েছে।

১৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত ফিসকাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সরকারি আয় তথা রাজস্ব ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। একই সঙ্গে বাজেট ও সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছতায় ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ ৬৯টি দেশকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশের নতুন সরকার আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে বেশকিছু সংস্কার শুরু করেছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বচ্ছতার মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ দেশগুলোর তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান ও মালদ্বীপও রয়েছে।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ খাতে সরকারি খরচ শুধু উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে বেড়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এ খাতে খরচ জিডিপির তুলনায় বাড়েনি। স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও একই চিত্র।

আইএমএফের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের মোট জিডিপির তুলনায় ২০২৪ সালে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি ব্যয় ছিল ১৩ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশ ভুটান এক্ষেত্রে মোট জিডিপির ২৮ শতাংশ ব্যয় করেছে। ভারতের ব্যয় ছিল জিডিপির ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালের ২৩ শতাংশ ও পাকিস্তানের ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সরকারি ব্যয় ছিল তাদের জিডিপির ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ছিল ২৩ শতাংশ। মোট জিডিপির ১৮ শতাংশ সরকারি ব্যয় ছিল ভিয়েতনামের, থাইল্যান্ডে ছিল ২২ শতাংশ। কম্বোডিয়াতে সরকারি ব্যয় ছিল ১৮ শতাংশ, মিসরে ছিল ২৪ শতাংশ। ২০২৪ সালে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে মোট জিডিপির সবচেয়ে বেশি সরকারি ব্যয় ছিল জার্মানিতে। দেশটি জিডিপির ৪৮ শতাংশ ব্যয় করেছে। যুক্তরাষ্ট্র করেছে ৩৫ শতাংশ। আলোচ্য বছরে সরকারি ব্যয় সবচেয়ে কম ছিল বাংলাদেশে।

Top