গণভোটের সময় নিয়ে আটকে আছে ঐক্য
মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:গণভোটে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নে রাজি রাজনৈতিক দলগুলো। তবে গণভোটের সময় নিয়ে শেষ দিনেও দলগুলো একমতে আসতে পারেনি।এ অবস্থায় আগামীকালের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে ঐকমত্য কমিশন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখনই হোক ব্যালটে গণভোটের দুইটি অংশ থাকবে। সনদের যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে একটি প্রশ্ন। আবার যেসব প্রস্তাবে কোনো দল নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দিয়েছে, সেগুলো থাকবে আলাদা। ভোটাররা সেখানে দুইটিতেই আলাদাভাবে ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ ভোট দিতে পারবেন।বিএনপি চায় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট। জামায়াতে ইসলামী চায় আগামী নভেম্বরে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন। আর সনদের ভিত্তিতেই হবে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন। ফলে এ বিষয়ে কোনো ধরনের ঐকমত্য ছাড়াই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জুলাই সনদে ৮৪টি প্রস্তাবের মধ্যে ২৯টি নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা হবে। ২১টি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এবং ৩৪টি প্রস্তাব বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত ধারার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিনের মতভিন্নতা কাটিয়ে উঠলেও সময়ের ব্যাপারে তারা একমত হতে পারছে না।
আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। এখন গণভোট কখন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনের আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা এক জায়গায় আসতে পেরেছি একটি ধাপ হিসাবে। তিনি বলেন সব দল একভাবে সম্মতি না দিলেও জনগণের চূড়ান্ত মত নেওয়ার সময় এসব আপত্তি স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। জুলাই জাতীয় সনদে যে বিষয়গুলো আছে সেখানে যেহেতু কিছু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, সেটাকে আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। সবই একভাবে বিবেচনা করা যাবে তা আমরা মনে করছি না। কারণ হচ্ছে যেসব রাজনৈতিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন তারা তাদের অবস্থানের দিক থেকে দিয়েছেন। এটা তাদের শুধু দলীয় অবস্থান নয় অন্যান্য বিবেচনা থেকেও দিয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণের সম্মতি নিশ্চিত করার সময় এসব ভিন্নমত যেন যথাযথভাবে জানানো হয়, সেটিই হবে গণভোটের মূল উদ্দেশ্য। আমাদের দেখতে হবে জনগণের সম্মতি। সে সম্মতির ক্ষেত্রে যেন তারা এটা জেনেশুনেই সম্মতি দিতে পারেন।
এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার দ্রুত সমাধান চায় বিএনপি। এজন্য সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট নেওয়ার প্রস্তাবকে বুধবার সমর্থন করেছে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। বুধবারের বৈঠকে এই বিষয়টি তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, গণভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত সংসদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং তা বাস্তবায়ন করবে। বৈঠকে তিনি বলেন, জুলাই নিয়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, যা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তারমতে, সংবিধান অনুসারে এই সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই সরকারের নতুন সংবিধান প্রণয়নের ইখতিয়ার নেই। এটি নির্বাচিত সংসদ করবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘অতীতে জাতীয় নির্বাচনে নানা রকম ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন স্থগিত হয়। ফলে একইদিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কারণ কোনো এলাকায় নির্বাচন স্থগিত হলে গণভোটের রায়ও স্থগিত হয়ে যাবে। সুতরাং নির্বাচন প্রশ্নবোধক হলে জুলাই সনদও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি বলেন, গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আমরা একমত হয়েছি। তবে ভোটের সময় নিয়ে ভিন্নতা আছে। কেউ কেউ বলছেন, গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে হলে ভালো হয়। আমরা বলেছি, ‘না’। কারণ গণভোট একটি আলাদা বিষয়। এটি আমাদের সব সংস্কারের বৈধতা দেবে। ফলে গণভোট আগেই হয়ে যাওয়া দরকার। জনগণ যদি এটাকে গ্রহণ করে সেই ভিত্তিতেই পরবর্তী নির্বাচন হবে। আর প্রত্যাখ্যান করলে এখানেই শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং বিষয়টা খুব স্পষ্ট হবে। তিনি বলেন, অনেকে বলছেন, নির্বাচন দুইটা না করে একসঙ্গে করে ফেলা যায়। এটার একটা ভালো দিক আছে। কিন্তু এর মন্দ দিক অনেক বেশি। প্রথম মন্দ দিক হচ্ছে জুলাই সনদে এমন কিছু ইস্যু আছে, যেটি আগামী নির্বাচনের একটা বিষয় হবে। যেমন সংসদে উচ্চকক্ষের একটা বিষয় আছে। গণভোট আগে হলে উচ্চকক্ষ আগামী নির্বাচনের একটা অংশ হবে। কিন্তু একই দিনে নির্বাচন করলে উচ্চকক্ষের কী হবে। সেটি টিকবে কি টিকবে না তা অনিশ্চিতই রয়ে গেল।