নির্বাচন কমিশন একা নয়, সবার সহযোগিতা নিয়েই সামনে এগোতে চাই - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন কমিশন একা নয়, সবার সহযোগিতা নিয়েই সামনে এগোতে চাই


মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন:নির্বাচন কমিশন একা নয়, সবার সহযোগিতা নিয়েই সামনে এগোতে চাই। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল সোসাইটি এবং সর্বস্তরের জনগণের সম্মিলিত ভূমিকা জরুরি। আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই, আমরা চাই আমাদের হয়ে আপনারা কাজ করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন শুধু একটি ভোট আয়োজন নয়, বরং একটি সুন্দর, নিরপেক্ষ এবং আয়নার মতো স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করতে চাই। আমরা কী করেছি, না করেছি এটা আপনারা প্রচার করুন। আপনাদের মূল্যবান মতামত নিয়ে আমরা বাকিটা পথ এগিয়ে যেতে চাই।গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। তারপর দ্বিতীয় ধাপে দুপুর ২.৩০ মিনিটে প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন- নির্বাচন কমিশনের চার নির্বাচন কমিশনার, অতিরিক্ত সচিবসহ অন্য কর্মকর্তারা। সংলাপে সাংবাদিকদের জন্য গণমাধ্যম নীতিমালা যেন সহায়ক হয় এমনভাবে তৈরি করা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

সংলাপে দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সিইসি যেভাবে তার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ইতোমধ্যে পুরো বাংলাদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। পূর্বের নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশের মানুষ যে দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর ব্যাপকভাবে বিক্ষুব্ধ এর মধ্যে একটি নির্বাচন কমিশন এবং দ্বিতীয়টি পুলিশ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনার যেভাবে কাজ করছেন আমরা আশাবাদী তার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন তার সুনাম ফিরেয়ে আনবেন। বিশ্বব্যাপী যে সুনাম ছিল সেটাকেও ফিরেয়ে আনবেন। বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও মর্যাদাহানি হয়েছে ২৪, ১৮ নির্বাচনে। সবার জন্যই এই নির্বাচন একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। আশা করি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করে তার ভাব-মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পারবে।

শ্রীলঙ্কার নির্বাচনের উদাহরণ উল্লেখ করে সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যেভাবে রসাতলে যাচ্ছে সেখান থেকে ফিরে আসতে হবে। কয়েকশ বছরের ইতিহাসে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ইতিহাস এত খারাপ ছিল না, গণঅভ্যুত্থানের আগে যেমন ছিল। সেখানে একটি নির্বাচনের পর ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সেক্ষেত্রে যে নির্বাচনের স্বপ্ন আপনারা দেখছেন সে নির্বাচন আপনারা করেন। একটি ভালো নির্বাচনই বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারবে। এআই, সাইবার কীভাবে মোকাবিলা করবেন তা সেনাবাহিনীসহ যেসকল সংস্থা আছে তাদের সাথে আলোচনা করে কাজ করবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, নির্বাচন ঘিরে কমিশন যেসব কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ। প্রায় ৭৭ লাখ মানুষের তথ্য হালনাগাদের এই বিশাল কর্মযজ্ঞে কমিশন বড় সফলতা পেয়েছে। এর মাধ্যমে ২১ লাখের বেশি মৃত ভোটার শনাক্ত করে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪৩ লাখের বেশি নতুন উপযুক্ত ভোটারকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যাদের নাম আগে ছিল না। এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তি রচনায় একটি বড় অগ্রগতি।

মিথ্যা তথ্য (মিসইনফরমেশন) এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তিমূলক প্রচার (ডিসইনফরমেশন) যেন নির্বাচনের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে, সেজন্য গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা খুব জরুরি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার ঠেকাতে সিইসি বলেন, সম্প্রতি কানাডায় নির্বাচন হয়েছে, সেখানকার হাই কমিশনারের অজিত সিংয়ের কাছে পরামর্শ নিয়ে জানতে পারি তারাও খুব বেশি সফল হয়নি। ইনফরমেশন ও এআই অপব্যবহারে আমরা কতটুকু কি করতে পারে তা আপনাদের কাছ থেকেই পরামর্শ আসবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট ভোটিং পদ্ধতি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকারের বিষয়ে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, বাংলাদেশে প্রতিটি পোস্টাল ব্যালটের ভোটে ব্যয় ৭০০ টাকা। পোস্টাল ব্যালটে মাত্র ২.৭% রেজিস্ট্রেশন করেন। সবশেষ লোকসভা নির্বাচনে ১ লাখ ১৯ হাজার রেজিস্ট্রেশন করে, ভোট দিয়েছে ২৯০০ জন। প্রত্যাশা অনেক। আমাদের ধারণা ভোট অনেক আসবে, কত হবে জানি না। প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ ব্যালট পেপার ছাপিয়ে রাখব। রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা দেখে পরবর্তী ধাপে যাব।

ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় দেশের শীর্ষ প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক, সহসম্পাদক ও সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শহিদ, ফিন্যান্সিয়াল এক্টিভেস পত্রিকার সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল, দৈনিক নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল, দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক এহসান মাহমুদ, বাংলাবাজার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক রাশেদুল হক, দৈনিক খবর সংযোগের সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল হাসান, বাংলা নিউজ টোয়েন্টি ফোরের সম্পাদক তৌহিদলি ইসলাম মিন্টুসহ দেশের শীর্ষ অনলাইন পোর্টাল ও পত্রিকার সম্পাদকরা। দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- একাত্তর টিভির বার্তা প্রধান শফিক আহমেদ, যমুনা টিভির সিনিয়র বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক মোস্তফা আকমল, চ্যানেল আইয়ে চিফ নিউজ এডিটর জাহিদ নেওয়াজ খান, ডিবিসি টিভির সম্পাদক লোটন একরাম, এটিএন নিউজের হেড অব ইনপুট শহিদুল আজম, জিটিভির বার্তা প্রধান গাউসুল আজম বিপু, সময় টিভির সিনিয়র বার্তা সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জনি, নিউজ২৪এর হেড অব নিউজ শরিফুল ইসলাম খান ,বিটিভির বার্তা সম্পাদক মঈনুল ইসলাম, স্টার নিউজের হেড অব নিউজ ওয়ালিউর রহমান মিরাজ, মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি নিয়াজ মোর্শেদ, আনন্দ টিভির নিউজ ইনচার্জ জয়নাল আবেদীন, এটিএন বাংলার চিফ রিপোর্টার একরামুল হক সায়েম।

Top