আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ



মোহাম্মাদ মহাব্বাতুল্লাহ মাহাদ : প্রতিশোধ নিলো বাংলাদেশ।২০১৮ সালে আফগানদের কাছে ধবলধোলাই হওয়ার তিক্ততায় প্রলেপ দিলো টাইগাররা। শারজায় এবার তাদের ৩-০ তে বিধ্বস্ত করলো জাকের আলির দল।টানা দুই ম্যাচে জিতে সিরিজ আগেই নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচেও ব্যতিক্রম হয়নি, ৬ উইকেটের জয়ে ইতি টানলো সিরিজের। জয়ের নায়ক দুই ‘সাইফ’। সাইফ হাসান ও সাইফুদ্দিন।
রোববার আগে ব্যাট করা আফগানদের ইনিংস থামে ৯ উইকেটে করে ১৪৩ রানে। সাইফুদ্দিন ১৫ রানে নেন ৩ উইকেট। অন্যদিকে ব্যাট হাতে সাইফ হাসান খেলেন ৭ ছক্কায় ৩৮ বলে অপরাজিত ৬৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস।অবশ্য রান তাড়ায় পারভেজ ইমন আত্মবিশ্বাসী শুরু করেছিলেন বটে, তবে ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। ফেরেন ৪.১ ওভারে ১৬ বলে ১৪ রান নিয়ে। ২৪ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে বাংলাদেশের।তবে এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তানজিদ তামিম ও সাইফ হাসান মিলে পরের ৩৫ বলে কোনো বিপদ ছাড়াই ৫৫ রান যোগ করেন। ১০ ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ৭৯/১।
জয়ের জন্য যখন শেষ ১০ ওভারে আর মাত্র ৬৫ রান চাই টাইগারদের, তখন ফেরেন তানজিদ তামিম। ৩৩ বলে ৩৩ করে আব্দুলাহর বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। যদিও আগের বলেই ক্যাচ দিয়ে জীবন পেয়েছিলেন!চারে নেমে জাকের আলির শুরুটা ছিল নড়বড়ে। ফলে ১১ ও ১২ নম্বর ওভার থেকে আসে মাত্র ৫ রান। তবে পরের ওভারেই তা পুষিয়ে দেন সাইফ। আব্দুল্লাহর থেকে নেন ২২ রান।তবে নাটকের তখনো বাকি। ১৪তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে জোড়া উইকেট তুলে নেন মুজিবুর রহমান। ১৫.৫ ওভারে জাকের আলিকে (১০) ফেরানোর পর, পরের বলেই বোল্ড করেন শামিম পাটোয়ারিকে।১৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১০৯। এমনকি রশিদ খানের পরের ওভার থেকে আসেনি কোনো রান! ১ম ওভারে ৯ রান দেয়া রশিদ পরের ৩ ওভারে দেন মাত্র ৪ রান।তবে পরের ওভারেই বশিরকে জোড়া ছক্কা হাঁকান সাইফ, নেন ১৭ রান। সেই সাথে মাত্র ৩২ বলে করেন ফিফটি। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার চতুর্থ ফিফটি, শেষ ৩টাই করেছেন ৬ ইনিংসের মাঝে।পরের ওভারে মাত্র ৩ রান নিলে শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। তবে যেন আর তর সইলো না সাইফ-সোহানের। আব্দুল্লাহর সেই ওভারেই নিশ্চিত করেছেন জয়। ২ ওভার হাতে রেখেই ৬ উইকেটে জিতেছে দল।২ চার ৭ ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন সাইফ। অন্যদিকে নুরুল হাসান সোহান অপরাজিত ছিলেন ৯ বলে ১০ রানে।
এর আগে শারজায় বল হাতে তৃতীয় ওভারেই দলকে উইকেট এনে দেন শরিফুল ইসলাম। ইবরাহীম জাদরানকে ফিরিয়ে ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। দলীয় ২০ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানরা। জাদরান আউট হন ৭ রানে।
দ্বিতীয় উইকেটের জন্য অপেক্ষা বাড়েনি। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই রাহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফেরান নাসুম আহমেদ। শামিম পাটোয়ারির দারুণ ক্যাচ হবার আগে ৯ বলে ১২ রান করেন তিনি।
২৪ রানে ২ উইকেট হারানো আফগানিস্তান পাওয়ার প্লের শেষ বলে হারায় ওয়াফিউল্লাহ তারাখিলের উইকেট। ১১ বলে ১৩ রানে আউট হন তিনি। ৬ ওভার শেষে আফগানদের স্কোর ৩৯/৩।
এরপর সেদিকুল্লাহ আতাল চেষ্টা করেন পাল্টা আক্রমণের। সুবাদে ১০ ওভারে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে যোগ হয় ৭৩ রান। তবে পরের ওভারে এসেই উইকেট তুলে নেন সাইফুদ্দিন। ফেরান সেই আতালকেই।
আতাল আউট হন ২৩ বলে ২৮ রান করে। পরের উইকেট এনে দেন রিশাদ হোসেন। ১১.৩ ওভারে ফেরান আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে (৩)। ৮১ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগানরা।
৬ষ্ঠ উইকেট আসে পরের ওভারেই, মোহাম্মদ নাবিকে ফেরান ১ রানেই থামান নাসুম। এরপর ১৫তম ওভারে জোড়া আঘাত আনেন তানজিম সাকিব। ১৪.৩ ওভারে রশিদ খান (১২) ও পরের বলেই আব্দুল্লাহকে (০) ফেরান তিনি।
১৫ ওভার শেষে স্কোর ছিল ৯৮/৮। তবে সেখান থেকেই দরবেশ রাসুলি ও মুজিবুর রহমান মিলে গড়েন ইনিংস সর্বোচ্চ ২২ বলে ৩৪ রানের জুটি। ১৮.২ ওভারে এসে এই জুটি ভাঙেন সাইফুদ্দিন, ২৯ বলে ৩২ করে আউট হন রাসুলি।
শেষ পর্যন্ত মুজিব অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ২৩ রানে। ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে থামে আফগানরা। ৩ ওভারে ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন সাইফুদ্দিন। ২টি করে উইকেট নেন সাকিব ও নাসুম আহমেদ।
যেখানে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ঘরের বাইরে কখনো আফগানিস্তানের সাথে জিততেই পারেনি বাংলাদেশ, সেখানে তাদের ধবলধোলাই করা বড় অর্জনই বটে।