আ.লীগের বিচারে শুরু হচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম ( জুলাই গণহত্যা )
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :ব্যক্তির অপরাধের দায় নির্ণয়ের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রসিকিউশন এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার দায়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে প্রসিকিউশন। যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনেও বিচারের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দলটিকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে কিনা তা নিয়ে এতদিন সিদ্ধান্তহীনতা ছিল। সম্প্রতি প্রসিকিউশনের তরফ থেকে এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ৩ ধারার উপধারা (২)-এর অধীন অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে-তাহলে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল ও তার অঙ্গসংগঠনকে শাস্তি দিতে পারবেন। আইনের এ ধারায় আওয়ামী লীগের বিচার করতে তদন্ত শুরু করতে চায় প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগকে অপরাধী সংগঠন হিসাবে বিচারের মুখোমুখি করতে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও প্রাথমিক তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে।
তাজুল ইসলাম রোববার সাংবাদিকদের বলেন,দল হিসাবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এনডিএম (জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন)নামের একটি রাজনৈতিক দল অভিযোগ করেছে।প্রসিকিউশন তার ভিত্তিতে তদন্ত করছে।তিনি বলেন, বলা যেতে পারে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দল ও অপরাধী সংগঠন হিসাবে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রাথমিক তদন্তের কাজটা শুরু হচ্ছে। সেটা পুরোদমে শুরু হলে বলা যাবে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টা কতদূর এগিয়েছে। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘এখন কি বলা যাবে আওয়ামী লীগের বিচার শুরু হয়েছে’-জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, হ্যাঁ, অভিযোগ এসেছে। তদন্ত সংস্থা এটা গুরুত্ব দিয়ে যাচাই-বাছাই করছে। এরপর শিগগিরই আনুষ্ঠানিক তদন্ত হবে। প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল হওয়া অভিযোগে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অপরাধ সংঘটনে সরাসরি জড়িত ছিল।
অপরদিকে, ট্রাইব্যুনালে দাখিল হওয়া বিভিন্ন অডিও-ভিডিও পরীক্ষায় দেখা গেছে, আন্দোলনকারীদের নিশ্চিহ্ন করতে দলীয় লোকজনকে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনেও একই রকম নির্দেশনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তার নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশের মাধ্যমে জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ অপরাপর অপরাধ সংঘটন করেন যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা বিভিন্ন অভিযোগ ও সাক্ষ্যসাবুদে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী শাসনের সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনা প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় লোকদের দানবে পরিণত করেন। জনগণের বিরুদ্ধে দলীয় লোকদের ব্যবহার করেন। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে দেশজুড়ে মানুষ হত্যায় তাদের সম্পৃক্ত করেন। এ অপরাধের দায় দলীয় লোকদের পাশাপাশি শেখ হাসিনার ওপর বর্তায়। ফলে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত।
ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক দলকে শাস্তি দিতে পারবে : ১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন। এতে বলা হয়, ‘এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারা উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যে কোনো ভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তবে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা থাকবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার।’ ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা থাকবে ‘সংগঠনের নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার। আইনে সংগঠন শব্দটির সংজ্ঞায়নও করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় সংগঠন বলতে যে কোনো রাজনৈতিক দলকেও বোঝাবে। পাশাপাশি দলের অধীনস্থ, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন অথবা গোষ্ঠীকে বোঝাবে।
আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রাথমিক তদন্ত : ‘কয়েক দিন আগে বরিশালে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা খুব শিগগিরই উঠছে না। তিনি আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে জানতে চাই- এর জবাবে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আইন উপদেষ্টা কোথায় কী বলেছেন, সেটার জবাব আমার দেওয়া উচিত হবে না।
আওয়ামী লীগ নেতা হানিফসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। বেলা পৌনে ১২টায় ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ নিয়ে শুনানি হয়। তবে প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশের জন্য সোমবার (৬ অক্টোবর) দিন ধার্য করা হয়। এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি নতুন ফরমাল চার্জ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে। এর ওপর শুনানিও হয়েছে। তবে অপরাধ আমলে নেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে প্রসিকিউশন। আদালত আগামীকাল (সোমবার) আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
হানিফের বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ : প্রসিকিউশন হানিফের বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপনসিবিলিটির অভিযোগে এনেছে। জুলাই আন্দোলনকারীদের জবাব দেওয়ার জন্য ‘ছাত্রলীগই যথেষ্ট’-ওই প্রেস কনফারেন্সে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে হানিফও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া গত বছরের ২৯ জুলাই কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বৈঠকের মাধ্যমে আন্দোলন দমনের ষড়যন্ত্র করেন তিনি। এছাড়া কুষ্টিয়া শহরে ৬ জনকে হত্যার দায়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
সিরাজগঞ্জে তিন হত্যায় হেনরির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ল : জুলাই আন্দোলনে ৩ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি ড. জান্নাত আরা হেনরিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আগামী দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর চানখাঁরপুলে স্কুলছাত্র আসানসহ ৬ জনকে হত্যা মামলায় ১৮তম সাক্ষ্য দিয়েছেন জব্দ তালিকার সাক্ষী এসআই আনিসুর রহমান। তিনি ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্বে আছেন।