ব্যাংকনির্ভর অর্থ সংগ্রহের কারণে মূলধন বাজার হচ্ছে উপেক্ষিত - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু আর সে রাষ্ট্র নির্মাণের মূল চালিকাশক্তি শিক্ষক সমাজ আমরা কেন এই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে আজকে দাঁড়ালাম? একটা সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে আমরা উপহার দিতে পারি,সে ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই দ্রুত তদন্তের নির্দেশ,জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন নির্বাচন নিয়ে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে সজাগ থাকুন হজযাত্রী নিবন্ধনের সুবিধার্থে পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ শিথিল করেছে মাউশি মহাপরিচালকের আবেদন,পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা ,বদলি ও পদায়ন নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে

ব্যাংকনির্ভর অর্থ সংগ্রহের কারণে মূলধন বাজার হচ্ছে উপেক্ষিত


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :ব্যাংকনির্ভর অর্থ সংগ্রহের কারণে মূলধন বাজার হচ্ছে উপেক্ষিত। বিশ্বজুড়ে যেসব দেশ দ্রুত শিল্পোন্নয়ন ঘটাতে পেরেছে, তাদের পুঁজিবাজারগুলোও হয়েছে গতিশীল ও শক্তিশালী।বিশ্বব্যাপী শিল্পায়নের অন্যতম প্রধান উৎস শেয়ারবাজার হলেও বাংলাদেশে এর অবদান এখনো সীমিত।বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশের উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজারের পরিবর্তে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণেই বেশি আগ্রহী। ফলে শিল্পায়নে শেয়ারবাজারের ভূমিকা প্রায় নেই বললেই চলে।উদ্যোক্তারা ব্যাংকনির্ভর হওয়ায় দেশের শেয়ারবাজার রয়ে গেছে মূলধারার বাইরে। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা তিন হাজার ৭৭৭টি। অথচ দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ৩৯৭টি। অর্থাৎ, যত সংখ্যক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির নিবন্ধন রয়েছে তার মাত্র ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে এসেছে। বাকি ৯০ শতাংশই শেয়ারবাজারের বাইরে রয়ে গেছে।

এদিকে, শেয়ারবাজারে যে কোম্পানিগুলো এসেছে, তার একটি বড় অংশের আর্থিক ভিত্তি বেশ দুর্বল। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ফলে বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারী দেশের শেয়ারবাজার ছেড়ে চলে গেছেন।

আরজেএসসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা তিন হাজার ৭৭৭টি। এছাড়া প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি আছে দুই লাখ ২১ হাজার ২৭৫টি। বিদেশি কোম্পানির লিয়াজোঁ অফিস আছে এক হাজার ২৩৮টি। অন্যদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৩৩টি। এর মধ্যে ৩৯৭টি কোম্পানি এবং ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে।

আবার তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বড় অংশের আর্থিক ভিত্তি বেশ দুর্বল। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘এ’ গ্রুপে আছে ২১৯টি, বি গ্রুপে ৮১টি এবং জেড গ্রুপে ৯৭টি। অর্থাৎ, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বর্তমানে ২৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জেড গ্রুপে রয়েছে। যেগুলো বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ দিতে পারে না। এমনকি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না।

আইপিও খরা
প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওকে শেয়ারবাজারের ‘নতুন রক্ত’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২৪ সালের জুনের পর শেয়ারবাজার থেকে কোনো কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে অর্থ তোলেনি। অর্থাৎ, এক বছরের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজার আইপিওহীন।

এর আগের ২০২৪ সালে চারটি কোম্পানি, ২০২৩ সালে তিনটি কোম্পানি ও একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ২০২২ সালে ছয়টি, ২০২১ সালে ১৫টি, ২০২০ সালে আটটি, ২০১৯ সালে ৯টি, ২০১৮ সালে ১৪টি, ২০১৭ সালে আটটি, ২০১৬ সালে ১১টি, ২০১৫ সালে ১২টি, ২০১৪ সালে ২০টি, ২০১৩ সালে ১২টি, ২০১২ সালে ১৭টি, ২০১১ সালে ১৩টি, ২০১০ সালে ১৮টি এবং ২০০৯ সালে ১৭টি প্রতিষ্ঠান আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে।

বাজারের চিত্র
বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা যায়। এরপর বাজারে কয়েকবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফেরার ইঙ্গিত দিলেও মূলত বাজার এখনো পতনের বৃত্তেই রয়েছে। গত কয়েক বছরে শেয়ারবাজারে যে কয়টি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ফ্লোর প্রাইস। দরপতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই এক নির্দেশনা দিয়ে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি।

৩১ জুলাই ফ্লোর প্রাইস কার্যকর হওয়ার পর থেকেই শেয়ারবাজারে লেনদেন খরা দেখা দেয়। দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠে যাওয়া লেনদেন ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এক পর্যায়ে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে। আর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর বাজারে ব্যাপক দরপতন হয়। এতে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ৬০-৭০ শতাংশ লোকসানের মধ্যে পড়েন।

শেয়ারবাজার খুঁড়িয়ে চলার মধ্যেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে বেশ কিছু সংস্কার আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনো ফেরেনি। যে কারণে শেয়ারবাজারে মাঝে মধ্যে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও পরক্ষণেই বড় দরপতনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। ফলে এখনো অনেক বিনিয়োগকারী ৬০ শতাংশের বেশি লোকসানে রয়েছেন।গত ৩১ আগস্ট প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৫৯৪ পয়েন্ট। সেখান থেকে এখন ডিএসইএক্স ৫ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১৭৯ পয়েন্ট। অন্যদিকে, ৩১ আগস্ট ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। এখন ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বাজার মূলধন কমেছে দুই হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এদিকে হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠে যাওয়া লেনদেন এখন ছয়শ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। শেষ ১৫ কার্যদিবসে ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।

বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের চিত্র
ফ্লোর প্রাইস যে শেয়ারবাজারের বড় ধরনের ক্ষতি করেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাবের দিকে তাকালেই। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৪০টি। এতে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৮০১টি। সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বাড়লেও এর আগে বিপুল সংখ্যক বিও হিসাব বন্ধ হয়ে যায়। বিদেশিদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা শুরু হয় ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে। অর্থাৎ, ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি। এ হিসাবে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবরের তুলনায় বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব কম আছে ১১ হাজার ৭১১টি।

ছয় বছরে অর্ধেকে নেমেছে বিও হিসাব
শুধু বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারী নয়, গত কয়েক বছরে স্থানীয় অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছেন। তবে সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ৮২৬টি। এতে বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ২২৭টি। এখন বিও হিসাবের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও এর আগে বিপুল সংখ্যক বিও হিসাব বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালের জুনের শুরুতে বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৬টি। অর্থাৎ, ছয় বছরের ব্যবধানে বিও হিসাবের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে চলে এসেছে।

ব্যাংকের শেয়ারের চিত্র
এক সময় দেশের শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো ব্যাংকখাত। লেনদেনের বড় অংশজুড়েই থাকতো ব্যাংকের শেয়ার। তবে গত কয়েক বছর ধরে শেয়ারবাজারে ব্যাংক কোম্পানিগুলো তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। ব্যাংকখাতের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসায় এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। একাধিক কোম্পানির শেয়ার এখন দুই টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে বর্তমানে ১৭টির শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে। এর মধ্যে সাতটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৫ টাকার নিচে।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে শেয়ারবাজারের নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শেয়ারবাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই এমন বিনিয়োগকারীরা সাধারণত মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ধুঁকছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা অনেক বিনিয়োগকারী বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে রয়েছেন। বর্তমানে অনেক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম এনএভির অনেক নিচে। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩টির দাম ফেস ভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। এর মধ্যে ২০টির দাম ৫ টাকার নিচে।

Top