‘বিকল্প পদ্ধতিতে’ তথ্য অনুসন্ধান করেও সুরাহা হচ্ছে না
মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: ‘বিকল্প পদ্ধতিতে’ তথ্য অনুসন্ধান করেও সুরাহা হচ্ছে না। উলটো জটিলতা বাড়ছে। এর একটি হচ্ছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন। ৭৩টি পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকা প্রকাশের পর বিতর্কের মুখে আবারও নিবন্ধন প্রক্রিয়া যাচাইয়ের চিন্তা করছে কমিশন। বিষয়টি নিয়ে কমিশনে আলোচনা চলছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ইসি মনে করছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকা আরও ছোট হয়ে এলে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে একরকম তালগোল পাকিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব সিদ্ধান্ত নিতে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের ওপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছে না কমিশন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
যদিও ইসি বলছে, কয়েকটি দল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফের যাচাই করা হচ্ছে। বিগত কমিশনগুলোও অধিকতর যাচাই করেছিল। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, কোনো কোনো দলের তথ্যের ঘাটতি আছে। আবার কোনো তথ্যের ব্যাখ্যার পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এসব কারণে অধিকতর যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানে কারও প্রতিবেদন অবজ্ঞা করা হয়নি।
এদিকে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়ে ইসির সিদ্ধান্তে নতুন করে জটিলতা তৈরির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয়ে মঙ্গলবার কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নিবন্ধন দেওয়া এবং এ দুটি দলের বিষয়ে কারও আপত্তি আছে কি না, তা জানতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা। বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ)-এই তিনটি দলের নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনা করা। আইন অনুযায়ী নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া ৯টি রাজনৈতিক দলের জেলা ও উপজেলা কার্যালয় এবং কমিটির তথ্য অধিকতর তদন্ত করা। ওই দলগুলো হচ্ছে-আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা এবং জনতা পার্টি বাংলাদেশ। এছাড়া এনসিপিকে শাপলার বিকল্প অন্য প্রতীক বাছাইয়ে চিঠি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের এ প্রক্রিয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের দিয়ে এসব দলের তথ্য একবার যাচাই করা হয়েছে। এরপর আবারও ৯টি রাজনৈতিক দলের তথ্য ঘোষণা দিয়ে অধিকতর তদন্তের বিষয়টি খারাপ বার্তা হিসাবে মাঠপর্যায়ে যাবে। ফের তদন্তের প্রক্রিয়ায় কোনো দল নিবন্ধন পেলে ইসির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। তারা আরও জানান, ১৪ সেপ্টম্বরের মধ্যে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য রাজনৈতিক দলের নামের তালিকা প্রকাশ এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা চূড়ান্ত করার সময়সীমার কথা উল্লেখ রয়েছে রোডম্যাপে। ইসি ৩০ সেপ্টেম্বর অনেকটা তড়িঘড়ি করে রাজনৈতিক দলের নাম প্রকাশ করেছে। তবে কবে নিবন্ধন চূড়ান্ত করা হবে, তা উল্লেখ করেনি। এক্ষেত্রে ইসি রোডম্যাপের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করেন তারা।
ইসি সূত্র জানায়, এবার নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে ১৪৩টি রাজনৈতিক দল আবেদন করে। প্রতিটি দলের কাগজপত্রে কমতি থাকায় তা পূরণের সুযোগ দেয় ইসি। ওইসব ঘাটতি পূরণ করে কাগজপত্র জমা দেয় ৮৪টি রাজনৈতিক দল। বাকি ৫৯টি রাজনৈতিক দল কাগজপত্র না দেওয়ায় সেগুলো যাচাইয়ের দরকার হয়নি। যে ৮৪টি দল কাগজপত্র জমা দিয়েছে, সেখান থেকে কাগজপত্র যাচাই করে ২২টির তালিকা তৈরি করা হয়। ওই ২২টির মধ্যে ২টিকে নিবন্ধন, তিনটিকে নিবন্ধনের বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনা এবং ৯টির কার্যালয় ও কমিটির অস্তিত্ব অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। বাকি ৭টি রাজনৈতিক দলের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। ওই দলগুলো হলো : ফরওয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-সিপিবি (এম), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ বেকার সমাজ, বাংলাদেশ সলুশন পার্টি, নতুন বাংলাদেশ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি।
পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন রিভিউয়ের চিন্তা : ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন প্রক্রিয়া রিভিউ করার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত তালিকা নিয়ে বিতর্কের মুখে এ চিন্তা করছে কমিশন। পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ৫ অক্টোবর দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থা ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছিল, সেসব সংস্থা বাদ দিয়ে এবার নতুন তালিকা তৈরি করে ইসি। এতে তিন শতাধিক সংস্থা আবেদন করে। এ সংক্রান্ত ইসির বাছাই কমিটি ওইসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে। এছাড়া একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও পৃথকভাবে যাচাই করে ইসিকে অনানুষ্ঠানিক প্রতিবেদন দিয়েছে। ওইসব প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি ৭৩টি সংস্থার নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত তালিকায় নাম থাকা সংস্থাগুলোর বিষয়ে ১০ অক্টোবরের মধ্যে অভিযোগ জমা হলে সেগুলো শুনানি করে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।
আরও জানা যায়, বিগত নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা কম। এছাড়াও কিছু সংস্থার বিষয়ে অভিযোগ-আপত্তি আসছে। অভিযোগ আসা সংস্থাগুলোকে বাদ দিলে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা আরও কমে যাবে। এতে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন প্রক্রিয়া রিভিউ করা হতে পারে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন,পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়ে কমিশনে আবারও আলোচনা হবে। যেসব পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়ে আপত্তি আসবে,সেগুলো আমরা অ্যাড্রেস করব। আমরা চাই না নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠুক। এজন্য কমিশন হয়তো অন্য কোনো পদক্ষেপ নেবে।
বিকল্প প্রতীক চেয়ে এনসিপিকে চিঠি : দলীয় প্রতীক শাপলা দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দলটিকে শাপলার বিকল্প প্রতীকের নাম দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব জানান,নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় শাপলা প্রতীক নেই।তাদের চিঠির উত্তরে আমরা বিষয়টি জানিয়ে নতুন প্রতীক দেওয়ার প্রস্তাব করেছি।