এক বছরে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক বছরে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল


মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন:রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পুলিশ থানা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে এক বছরে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা অর্জন করতে চাই। আমাদের বিশ্বাস, আমরা পারব।পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং তাদের মোকাবিলা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৯টি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৫টি মামলা হয়েছে এবং ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আইজিপি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া ৭৬০টি মামলার মধ্যে মাত্র ৫৫টিতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। বাকি সব মামলাই এখনো তদন্তাধীন। এসব মামলার মধ্যে ৭৬৬টি হত্যা মামলা এবং অন্যান্য ধারায় মামলা রয়েছে ৯৭৪টি। চার্জশিট দেওয়া ৫৫টির মধ্যে ১৮টি হত্যা মামলায় এক হাজার ৯৪১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে অন্যান্য ধারার ৩৭ মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন দুই হাজার ১৮৫ জন আসামি। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩-এ ধারা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ১৩৬ জনকে মামলার দায় থেকে আদালত অব্যাহতি দিয়েছে। আরও ২৩৬ জনকে নির্দোষ বিবেচনা করে অব্যাহতির আবেদন আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

পুলিশ প্রধান বলেন, মিথ্যা মামলা বা নির্দোষ ব্যক্তিকে আসামি করার বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যেই রিলিফ ঘোষণা করেছে। কেউ নির্দোষ মনে করলে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করতে পারেন। তদন্ত শেষে আদালত তাদের দায়মুক্তি দিতে পারবেন। মাঠ পর্যায়ের পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, ভালো-মন্দ মিলেই সবাই। যদি নির্দিষ্টভাবে পুলিশের কারও সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়, অবশ্যই শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের দায়ের করা মামলাই অনেক সময় ভোগান্তির কারণ হয়। সেখানে পুলিশও যদি অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে, তবে মানুষের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা থাকে না। এ জন্য সদর দপ্তর থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।আইজিপি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। বর্তমানে পুলিশের মোট ২ লাখ ১৩ হাজার সদস্যের মধ্যে দেড় লাখ সদস্যকে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

বাহারুল আলম বলেন, পূজা উপলক্ষ্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সারাদেশে মোট ৩৩ হাজার মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হয়নি। সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবেই পূজা উদযাপন হচ্ছে। পুলিশের তালিকা অনুযায়ী পূজামণ্ডপকেন্দ্রিক ৪৯টি ঘটনায় ১৫টি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেকগুলো সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়েছে। তদন্ত করে দায়ী প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইজিপি বলেন, চট্টগ্রামে জামায়াত কর্মী পরিচয়ে হামলার একটি ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আইজিপি আশ্বস্ত করে বলেন, যে কোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার প্রচেষ্টা পুলিশ কঠোরভাবে দমন করবে। পূজা উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কম ঝুঁকিপূর্ণ বা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা না করে প্রত্যেকটি পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা কড়া নজরদারি রেখেছি। যাতে করে যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতি বজায় থাকে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের গুজব তৈরি হয়। যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। অনেক সময় পুরোনো ভিডিও কিংবা পুরোনো কোনো ঘটনা যেখানে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে সেগুলো আবার নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। এসব অপ্রীতিকর বিষয়েও আমাদের সাইবার ইউনিট চেষ্টা করছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এটা অনেকটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।

পুলিশের কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে কিনা জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, অভ্যন্তরীণভাবেও আমরা সতর্ক। পুলিশের ইন্টারনাল ওভারসাইট (পিআইও) টিম আছে। তারা দেখছে, আমরা যে কোনো মাধ্যমে খবর পেলেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশ সদস্যরা, ঘটনা শোনেন, নিষ্পত্তি করেন। কেউ সংক্ষুব্ধ থাকলে কথাবার্তা বলা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, মোহাম্মদপুরে আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। এখানে সামরিক বাহিনী বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে সেনাবাহিনী আছে। আমরা তাদের সহযোগিতা নিয়ে মোহাম্মদপুর আদাবর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এদের কীভাবে যেন গ্রেফতারের পর জামিন হয়ে যায়। জামিনে বেরিয়ে এসে বিপুল উৎসাহে আবারও অপরাধ করছে। অল্প বয়সি অপরাধীদের বিপুলসংখ্যক গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা তাদের আটকাতে নানাভাবে চেষ্টা করছি। আমরা কিছুকিছু ক্ষেত্রে চিন্তা করছি নিবর্তনমূলক আটক আদেশ দিতে হতে পারে।পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রগুলো কার হাতে আছে এবং অস্ত্রগুলো উদ্ধার না হলে ঝুঁকি আছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ প্রধান বলেন, এখন পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি ১৩৫০টি। আমরা নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধার করছি। আমরা যদি জানতাম অস্ত্র কার হাতে, তাহলে কথাই ছিল না। কিন্তু সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রাখছি। আমরা ধারণা করছি, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে যেতে পারে, কিছু পাহাড়ি কিংবা আরসার হাতে যেতে পারে। এগুলো সবই আমাদের সন্দেহ।

থানা থেকে ব্যক্তিগত অস্ত্র লুটের বিষয়ে আইজিপি বলেন, সাধারণ মানুষের অল্প কিছু ব্যক্তিগত অস্ত্র থানা থেকে লুট হয়েছে। পুলিশের অস্ত্রের সংখ্যা বেশি। বৈধ অস্ত্র সরকার জমা নিয়েছে। ২০০৯ সাল ২০২৪ সাল পর্যন্ত সব অস্ত্র আমরা জমা নিয়েছি। কিন্তু যারা জমা দেননি, আমরা তাদের বিরুদ্ধেও মামলা নিয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে।

পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন টিটিপিতে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি তরুণ ফয়সাল হোসেন (২২) সেনা অভিযানে নিহত হওয়ার বিষয়ে বাহারুল আলম বলেছেন, টিটিপির সংশ্লিষ্টতা সন্দেহে আমরা এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Top