অভিযোগের অন্ত নেই রাজউক পরিচালক মোবারকের বিরুদ্ধে - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অভিযোগের অন্ত নেই রাজউক পরিচালক মোবারকের বিরুদ্ধে


এবি সিদ্দীক ভূইঁয়া : অথচ অদৃশ্য শক্তির বলে বহাল তবিয়তে রয়েছেন এ কর্মকর্তা। ছাত্র জনতার আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ,শ্রমিক লীগকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ! থাকা সত্ত্বেও
রয়েছে বহাল তবিয়তে।সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে থাকা আওয়ামীলীগের গোপনীয় বাবে অনুসারীরা গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।কর্মস্থলে বসে অবৈধভাবে ঘুষ নেয়া তার পেশা এবং নেশায় পরিণত হয়েছে।সরকার যায় সরকার আসে বহাল থাকে শুধু মোবারকেরা। বলছিলাম রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( রাজউক)’র মোঃ মোবারক হোসেনের কথা। গ্রামের বাড়ী পাবনা জেলার ভাঙ্গুরাতে। বিভিন্ন মানুষের কাছে বলেন, আমি পাবনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সবাইকে মনে রাখতে হবে ওই একই কমিটির সভাপতি বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পু। আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে কেউ কিছু করতে পারবেনা। যে কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এত বড় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কিভাবে এখনো বীরদর্পে বহাল তবিয়তে থাকতে পারে। এ যেন মগের মুল্লুক, দেখার কেউ নেই, যে যেমন পেরেছে সে তেমন করে দুর্নীতির সাজে সেজেছে। দেশে এমন একটি খাত পাওয়া যাবেনা যেখানে ইচ্ছমতো স্বৈরাচারী আমলে স্বৈরাচারী কায়দায় দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম হয়নি। যে কারনে বিশ্বের দুর্নীতিবাজ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম উপরের দিকে পাওয়া যায়। দুর্নীতি শুধু পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং ছাগল কান্ডের হোতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলোনা। সেই দুর্নীতির রেশ না কাটতেই পতন হয় সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের। তাদের দুর্নীতির ফিরিস্তি জানতে বাকি নেই এদেশের কারোরই। এবার পাওয়া গেল সাবেক স্বৈরশাসকের অন্যতম দোসর শেখ হাসিনাকে প্রশাসন ব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বার বার ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার অন্যতম কারিগরদের একজন মোবারক হোসেনকে। সুত্রে জানা যায়, পতিত স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মাধ্যমে নিজের চেয়ার ঠিক রাখতে কোটি কোটি টাকা সহযোগিতা করেছেন বলেও জনশ্রুতি আছে । কিন্তু দুর্ভাগ্য, মোবারকের সেই আশা পুরণ হওয়ার আগেই পালিয়ে যায় হাসিনা সরকার। শোনা যাচ্ছে, তিনি এখন অফিস করেন ঠিকই তবে অনিয়মিত। মোবারকের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,
মোবারক হোসন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-২ এর পরিচালক। তার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে  ঢাকায় একাধিক আলিশান বাড়ি,  প্লটসহ নিজ জেলা পাবনা শহর ও গ্রামের বাড়িতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।  মহাখালী জোন-৪ এ অথরাইজ অফিসার থাকাকালীন মিরপুর-১ ও ১০, মার্কেট পরিচালনা কমিটি, বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানি ও বাড়ির মালিকদের থেকে উচ্ছেদ অভিযানের চিঠি দিয়ে ও উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে মার্কেট ও বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে ।
সূত্র জানায়, প্রকৌশলী মোবারক হোসেন তৎকালীন অথরাইজ অফিসার হিসাবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে শত শত প্লান পাস করিয়ে দিয়ে অবৈধভাবে উৎকোচ গ্রহণ করে নিজে  বিত্ত- বৈভবের মালিক বনে গেছেন। তিনি রাজউককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, উচ্ছেদ অভিযানের নামে মার্কেট ও ভবনের সামান্য কিছু অংশ ভেঙ্গে  মালিকদের কাছ থেকে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা নিয়ে/পানি, বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চলে যেতেন। পরবর্তীতে তার ঘনিষ্ঠ পরিদর্শক এবং তার দালাল সিন্ডিকেট দিয়ে ভবন মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিতেন মোবারক হোসেন।
বর্তমান এই প্রকৌশলী রাজউক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-২) এর পরিচালক হওয়ার পর থেকে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। এখনোও তিনি বিভিন্ন ভবন মালিকদের কাছ থেকে অবৈধ ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে গোপনে ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, এই কর্মকর্তার রয়েছে বিশাল ক্ষমতাসীল একটা সিন্ডিকেট ও দালাল চক্র। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতি অনিয়মে শত শত অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ঘুষ বাণিজ্য অনিয়ম স্বেচ্ছারিতা ও অবৈধভাবে অর্জিত কালো টাকায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত পাঁচ বছর আগে ২০১৭-১৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক প্রকৌশলী মোঃ মোবারক হোসেনকে ও তার স্ত্রীকে অনুসন্ধানের বিষয়ে নোটির জারী করেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, এবার স্ত্রীকে বাদ দিয়ে পুনরায় গত ৩০/০৭/২০২৩ ইং তারিখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-২ এর পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ মোবারক হোসেনেকে স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধভাবে অর্জিত কালো টাকায় সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানের বিষয়ে নোটির জারী করেন। আর এসব অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে গত কয়েক মাসে, উত্তরা দিয়াবাড়ির বাসিন্দা মোঃ আব্দুস সালাম, পিতা-জামাল উদ্দিন, মাতা-সালমা, বাসা নং-১৫৬, দিয়াবাড়ি, তুরাগ ঢাকা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-২ এর পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে আবেদন করেছেন।
সূত্রমতে, অনৈতিক উপায়ে অর্জিত মোবারক হোসেনের সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- 
১। ফ্ল্যাট নং-এ–৪, বি-৪, প্লট নং- ৪৩, রোড নং- ৯, সেক্টর -১৩, উত্তরা, ঢাকা।
 উক্ত ৮ তলা বিশিষ্ট বাসার ৪ তলায় তার দুটি ফ্লাট রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।
২। জি -ব্লকে, রোড নং- ৩/এ, সেক্টর -১৫, উত্তরা, ঢাকা। 
৩ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।
৩। জি -ব্লকে, এভিনিউ রোডে, প্লট নং-৯, সেক্টর -১৫, 
উত্তরা, ঢাকা। 
৩ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা।
৪। মৌজা দিয়াবাড়ি, হরিরামপুর, তুরাগ ঢাকা। ০৫৭৮ অযুতাংশ জমি রয়েছে। টিন সেটে বাড়িটির যার বাজার ৩ কোটি টাকা।
৫। আরেকটি টিন সেট বাড়ি রয়েছে, মৌজা দিয়াবাড়ি, হরিরামপুর, তুরাগ ঢাকা। ০২০৬ অযুতাংশ জমি রয়েছে। টিন সেটে বাড়িটির যার বাজার ৩.৫ কোটি টাকা।
৬। মৌজা হাটগ্রাম, দাগ নং- ৪৬০৪, ২৩ শতাংশ জমিতে, থানা-ভাংগুড়া, জেলা-পাবনা। 
টিন সেট বাড়ি রয়েছে, যার বাজার কোটি টাকা।
৭। খালি জমি পরিমান, মৌজা হাটগ্রাম, দাগ নং- ৬৫৪৭, জমি পরিমান ১০.৫ শতাংশ, থানা-ভাংগুড়া, জেলা-পাবনা। যার বাজার কোটি টাকা।
৮। এছাড়াও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে দামি গাড়ি যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা, উক্ত গাড়িটির নাম্বার- ঢাকা মেট্রো চ ১৬-০৫৫৫। 
পাবনা জেলার ভাংগুড়া থানায় তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের নামে বিঘায় বিঘায় জমি রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। যা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাবে। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, রাজউকের একজন কর্মকর্তা জানান, পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ মোবারক হোসেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এবং চেয়ারম্যান, সচিব, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়ে অনিয়ম- দুর্নীতি করে আসছেন।
 মোঃ মোবারক হোসেনের এলাকায় গিয়ে জানা যায়- মোঃ মোবারক হোসেন শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। আইনগত ঝামেলা এড়ানোর জন্যে নিজের স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের নামে সম্পদ গড়েছেন। তার পরিবার ও আত্বীয় স্বজনের সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স তদন্ত করলেই প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। রাজউকের মোঃ মোবারক হোসেনের আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের তদন্তের জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন রাজউকের সাধারণ কর্মচারীগণ। ইতোমধ্যে অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন জমা পড়েছে। এসকল বিষয়ে তার ০১৬১১-১২৪২৪৩ নম্বরে কথা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া আছে বিষয়টি তারা দেখবেন।

কর্মস্থলে বসে অবৈধভাবে ঘুষ নেয়া তার পেশা এবং নেশায় পরিণত হয়েছে।আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা বতর্মানেও ছাত্র জনতার মহান উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এখনো সক্রিয় রয়েছেন।

তার নিজ এলাকায় একাধিক ব‍্যক্তি নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীত সাথে জড়িত তার পরিবার।
ছাত্র অবস্থায় আওয়ামী লীগের ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন । তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটা সত্য।একথা গুলো তার নিজ এলাকায় বিভিন্ন ব‍্যক্তির কাছ থেকে জানাযায়। আওয়ামী লীগে বড় নেতাদের সাথে বতর্মানে ও কথা হয়।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেন,
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের নানা অনিয়ম রাজউকের মোঃ মোবারক হোসেনের আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের তদন্তের জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন রাজউকের সাধারণ কর্মচারীগণ তাকে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছেন এটি সত্যি হতে পারে ।অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন এটি কোন ছোট্ট অপরাধ নয়।দুর্নীতি কখনো ছোট বড় নয় দুর্নীতি তো দুর্নীতিই সেটি যেমনই হোক। ছোট ছোট দুর্নীতি থেকেই বড় বড় দুর্নীতির জন্ম দেয়। দুদক আগের চেয়ে ভালো কাজ করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। দুদকের দুর্নীতির বিষয়ে আর বিশদ অনুসন্ধান প্রয়োজন। একইসঙ্গে দুদকের জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে সেগুলোর সমাধান প্রয়োজন। কেননা যে তুলনায় দুর্নীতির অভিযোগ আসে সেই তুলনায় দুদক অনুসন্ধান করতে পারে না। যদি সকল দুর্নীতি দুদক অনুসন্ধান করতে পারতো তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসত। তবে আমরা আশাবাদী দুর্নীতিবাজদের শিকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব সেটি একদিন হবেই।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান
বলেন,আমরা অনেক দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছি।অভিযোগ পেয়েছি সেটা তদন্তের মাধ্যমে আইন আনুগব‍‍্যবস্থা গ্রহন করা হবে। যারাই অপরাধ করুক না কেন আমাদের অনুসন্ধানে যদি কোনোভাবে প্রমাণিত হয়।তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব এবং প্রয়োজনীয় যত ব্যবস্থা আছে তা নেব। কোনো দুর্নীতিবাজকে ছাড় দেওয়া হবে না।

রাজউকের চেয়ারম্যান বলেন, যদি কেহ অপরাধ করে থাকেন তাহলে অভিযোগ পেলে অভিযোগ গুলো তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব‍্যবস্থা করা হবে।

Top