ইসির সংলাপ সুশীল সমাজের সঙ্গে - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসির সংলাপ সুশীল সমাজের সঙ্গে


নুর নবী জনী : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সুশীল সমাজ, নারী প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ আগামী সপ্তাহে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। আর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অক্টোবরে সংলাপে বসবে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।ইসি সূত্রগুলো জানায়, সংলাপের সময়সূচি প্রস্তুত করে রেখেছে ইসি সচিবালয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা নথিতে অনুমোদন করলেই অংশীজনদের চিঠি দিয়ে ও ফোনে জানানো হবে।কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় এক মাস ধরে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, নারী নেত্রী, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও জুলাই যোদ্ধাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রতিনিধিদের তালিকাও চূড়ান্ত করার কাজ শেষ করে রেখেছে ইসি।বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫০টি। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রেখেছে ইসি। এছাড়া জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের নিবন্ধিত শরিক দলগুলোর বিষয়ে আপত্তি রয়েছে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর। এসব দলকে সংলাপে ডাকা হবে কি-না এখনও স্পষ্ট করেনি ইসি। প্রধান উপদেষ্টাসহ জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকগুলোতে ডাক পায় না দলগুলো।এছাড়া বর্তমানে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২টি দলের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) চার-পাঁচটি দল ইসির নিবন্ধন পেতে পারে বলে আভাস মিলেছে। তাদেরও সংলাপে রাখতে চায় ইসি। এজন্য দলগুলোর সঙ্গে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর বসা হবে। সেক্ষেত্রে নতুন দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ মধ্য অক্টোবরের পরে হতে পারে।

সূত্রমতে, এনসিপিসহ ২২টি নতুন দলের নিবন্ধন কার্যক্রমও প্রায় শেষের পথে। মাঠ পর্যায় থেকে দলগুলোর বিষয়ে আসা তদন্ত প্রতিবেদনও পর্যালোচনা প্রায় শেষ। চলতি সপ্তাহেই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এমন দলগুলোর নাম উল্লেখ করে সবার কাছে দাবি-আপত্তি চাওয়া হবে। এতে কোনো দলের বিরুদ্ধে আপত্তি না থাকলে সেই দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে। আর আপত্তি থাকলে তার শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে বর্তমানের নিবন্ধিত দলগুলোকে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে এবং বড় দলগুলোকে আলাদা আলাদা করে সংলাপ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সবগুলো দলকেই বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই বড় দলগুলোকে আলাদা এবং অন্যান্য দলগুলোকে গ্রুপে ভাগ করে নিয়ে সংলাপে বসার পরিকল্পনা করা হয়েছে।এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ জানান, রোডম্যাপ অনুযায়ী সংলাপ ও দল নিবন্ধনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। রোডম্যাপে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দল নিবন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সংলাপ আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সংলাপ চলতি মাসের শেষের দিকে শুরু হতে পারে। আমাদের সবকিছু প্রস্তুত করা আছে। এখন কমিশন অনুমোদন দিলেই হবে।তিনি বলেন, দলগুলোর ক্ষেত্রে কয়েকটি গ্রুপ হতে পারে। কারণ একটা একটা করে বসতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। আমরা দেখবো যেটি সবচেয়ে ভালো হবে, সেটির দিকে যেতে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশে নির্বাচনী সংলাপ প্রথা চালু করে। সংলাপে দলগুলো ও অংশীজনদের কাছ থেকে আইনি সংস্কার, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকে ইসি। পরে কমিশনের জন্য আমলযোগ্য পরামর্শগুলো আইনি কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও এবার আইনি বিভিন্ন ধরনের সংস্কার ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ফেলেছে ইসি। তবে সংসদ নির্বাচনের মূল আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন এখনো বাকি রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ভোটের প্রস্তুতির অনেকটাই সম্পন্ন করে ফেলেছে। এর মধ্যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রায় শেষের পথে, চলছে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়ায়ও, নির্বাচনী কেনাকাটাও ৭০ শতাংশের মতো শেষ। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থাও করছে ইসি। এজন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। ডাক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যালট পেপার ও বিভিন্ন ধরনের মুদ্রণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য বিজি প্রেসকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। দল নিবন্ধন ও সংলাপ শেষ হলে বড় বড় সব কাজই গোছানো হয়ে যাবে।সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন ইতোমধ্যে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করে তার কমিশন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ করতে চায়। আর সেই লক্ষ্যে ‘ফুল গিয়ারে’ চলছে তাদের প্রস্তুতি।

Top