দুর্গাপূজায় বেশি ঝুঁকিতে ১১ জেলা,গোয়েন্দা প্রতিবেদন - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্গাপূজায় বেশি ঝুঁকিতে ১১ জেলা,গোয়েন্দা প্রতিবেদন


মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন:আসন্ন দুর্গপূজাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সহিসংতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১১ জেলা। উচ্চ ঝুঁকিতে আছে সাত হাজার ৫৪টি পূজামণ্ডপ। ৮২৭৯টি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা নেই। সিসি ক্যামেরা নেই এবং অরক্ষিত স্থানে তৈরি মণ্ডপগুলোকে টার্গেট করতে পারে সরকারবিরোধী চক্র। কয়েকটি জেলার কোনো পূজামণ্ডপই যেন অরক্ষিত না থাকে, সে ব্যাপারে জোর দিতে হবে। পূজা শুরুর আগে দর্শনার্থী বা ভক্ত বেশে মণ্ডপে প্রবেশ করে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা চালানো হতে পারে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগসহ স্বার্থান্বেষী মহল দেশকে অস্থিতিশীল করতে সক্রিয়। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণ করতে তারা দেশের যে কোনো স্থানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে পারে। এরাসহ সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ ১১ জেলা হচ্ছে-ফরিদপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, পঞ্চগড়, কুমিল্লা, নওগাঁ এবং বরিশাল। এতে বলা হয়, ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে, ২০১৩ সালে পাবনার সাঁথিয়ায়, ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরে, ২০১৭ সালে রংপুরের গংগাচড়ায়, ২০১৯ সালে ভোলার বোরহান উদ্দিনে, ২০২১ সালে কুমিল্লার নানুয়া দীঘিরপাড়ে এবং গত বছর ফরিদপুরের মুধখালীর মতো ঘটনা ঘটিয়ে দেশকে অশান্ত করতে চাচ্ছে অপশক্তি। এবারও স্পটগুলোকে টার্গেট করা হতে পারে।

পূজায় নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে, এমন শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি চেষ্টা চালাতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব এবং টুইটারে গুজব ছড়িয়ে কুচক্রীমহল তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে। পূজা উদযাপন কমিটি গঠন, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাকে কেন্দ্র করেও পূজামণ্ডপ ঘিরে পরস্পর বিরোধী গ্রুপের মধ্যেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।

প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বার্থান্বেষী মহল হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের নামে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়াগুলোতে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনসংক্রান্ত ব্যাপক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব সৃষ্টিকারীরা পূজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে মন্দিরে আগুন, প্রতিমা ভাঙচুর, পুরোহিতদের ওপর আক্রমণের ভুয়া ঘটনা তৈরি ও প্রচারের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। ফরিদপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, পঞ্চগড়, কুমিল্লা, নওগাঁ এবং বরিশাল জেলার কোনো পূজামণ্ডপই যেন অরক্ষিত না থাকে, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, দেশের অনেক স্থানে মন্দিরের জমি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় ও মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ আছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে এই বিরোধের জেরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার সারা দেশে ৩১ হাজার ৫৭৬টি মণ্ডপে পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হবে। এসবের মধ্যে আট হাজার ২৭৯টি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা নেই। অপরদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটনে পূজা অনুষ্ঠিত হবে ৫৭৭টি মণ্ডপে। এগুলোর মধ্যে সিসি ক্যামেরা নেই ৪৩টিতে। এছাড়া সারা দেশের ৫৭ ভাগ মণ্ডপে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। আর্চওয়ে বা মেটাল ডিটেক্টর নেই ৭৯ ভাগ পূজামণ্ডপে। প্রতিমা বিসর্জনে র‌্যালি বা শোভাযাত্রার সময় রাস্তার দুই পাশের ভবন ও ভবনের ছাদ থেকে বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনাও ঘটতে পারে। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় ভারত এবং বাংলাদেশের মানুষের মিলনমেলা ঘটতে পারে। এই মিলনমেলাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মগ্রন্থের অবমাননাসূচক ছবি ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপগুলোতে স্যুইপিং, আর্চওয়ে গেট স্থাপন, হ্যান্ড হেল্ড ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা রাখার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। নারী দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশির জন্য নারী পুলিশের পাশাপাশি পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে। মণ্ডপগুলোতে আইপি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে রিচার্জেবল আইপি ক্যামেরা স্থাপন করে স্থানীয় থানার সঙ্গে সংযুক্ত থাকার কথাও বলা হয়। সাইবার পেট্রোলিং জোরদার করতে হবে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্র ধরে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যাতে কেউ আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য সব মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মুসল্লিদের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। সব মণ্ডপে নিরবচ্ছিন্ন পাহারার ব্যবস্থা রাখতে হবে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুবিধাজনক স্থানে অগ্নিনির্বাপক গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, ডুবুরি দল, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান ও পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও ক্রসিংয়ে চেকপোস্ট স্থাপন করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের স্থির ও ভিডিও চিত্র ধারণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

দুর্গাপূজার নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) রোববার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকবে। বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসাবে এবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়া হবে। পূজা নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

Top