একাধিক জোট গঠনের গুঞ্জনের আলোচনাও রয়েছে অন্দরমহলে - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একাধিক জোট গঠনের গুঞ্জনের আলোচনাও রয়েছে অন্দরমহলে


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :একাধিক জোট গঠনের গুঞ্জনের আলোচনাও রয়েছে অন্দরমহলে। তবে আপাতত জুলাই সনদ নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির মধ্যে যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, তা থেকে উত্তরণে এগিয়ে এসেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এই জোটের ছয় শরিক দল সমমনা আরও তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ডান-বাম-ইসলামিক-সব পক্ষের সঙ্গেই এ ইস্যু নিয়ে তারা ধারাবাহিকভাবে বৈঠকে বসবেন। বিভক্তি দূর করার উদ্যোগ নেবেন।ভোটের দিনক্ষণ এগিয়ে আসতেই রাজনীতির মাঠে নয়া মেরুকরণ শুরু হয়েছে। একপক্ষ রাজপথে, আরেকপক্ষ আলোচনার টেবিলে। সবমিলিয়ে বইতে শুরু করেছে উত্তাপের হাওয়া।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে হাতিরপুলে ‘চায়না কিচেন’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ছয়টি রাজনৈতিক দল-জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ভাসানী জনশক্তি পার্টি ছাড়াও সমমনা আরও তিনটি রাজনৈতিক দল-আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির শীর্ষ নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ নয়টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের এই বৈঠক ব্যাপক কৌতূলের জন্ম দিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক দলের নেতা জুলাই সনদ নিয়ে মতৈক্য দূর করতেই এই উদ্যোগ বলে দাবি করেন। আবার দু-একজন নেতা এমনও জানিয়েছেন, এই বৈঠকে পৃথক জোট গঠন নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রাজনীতিতে উত্তাপ তত বাড়ছে। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল অভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে। যা বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। তাদের উল্লেখযোগ্য দাবির মধ্যে রয়েছে-জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন, পিআর পদ্ধতি চালু, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারী শক্তির দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। বিশ্লেষকদের মতে, গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখার কৌশল হিসাবেই দলগুলো এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে থাকতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরকম একটি পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় শরিক এবং আরও তিনটিসহ নয়টি রাজনৈতিক দলের বৈঠক দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের বার্তা দিচ্ছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছে, তারা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ইসলামী ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন। এছাড়া ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী), গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদসহ বিভিন্ন বামপন্থি দলগুলোর সঙ্গেও বসবেন।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বৃহস্পতিবার বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির মথ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ বাড়ছে।কেউ গণভোট চান। কেউ গণপরিষদ নির্বাচন চান।কেউ কেউ আবার একই দিনে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান।কেউ আবার পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে অনড়।কেউ আবার এর বিরুদ্ধে। এরকম নানা ইস্যুতে মতদ্বৈততা বাড়ছে। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে এই মতদ্বৈততা দূর করতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই প্রথম দফায় এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পৃথক জোট গঠনের দিকে আগাচ্ছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ছয় দল মিলে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করেছি। এটা একটি জোট। এরপরেও কেউ কেউ আরও বৃহৎ পরিসরে জোট গঠনের কথা ভাবতে পারেন, তবে সেটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। এখন এই মুহূর্তে আমরা মতবিরোধ বা মতভিন্নতা কিভাবে কমানো যায়, সেটা নিয়ে ভাবছি।

সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির পক্ষে দলটির সহসভাপতি তানিয়া রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, প্রধান নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল ও রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আক্তার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা মনজুর মোর্শেদ অংশ নেন। এছাড়াও গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, মুখপাত্র ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, অর্থ সম্পাদক দিদারুল ভূঁইয়া, মিডিয়া সম্পাদক হাসিব উদ্দিন হোসেন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং মহাসচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Top