নির্দেশনা না মানলে বাধ্যতামূলক অবসর
মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দুটি অধ্যাদেশ খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন। এ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হবে, কাজে গতি আসবে। আর যেসব কর্মকর্তা নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত, তারা আইন ও বিধি ভঙ্গ করলে শাস্তির আওতায় আনা যাবে। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক এ সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা সংক্রান্ত আইন (বিশেষ প্রধান আইন, ১৯৯১ সালের ১৩ নম্বর আইন) এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন (২০০৯ সালের ৫ নম্বর আইন) সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদ হয়েছে। অধ্যাদেশের ফলে নির্বাচন কমিশনের কাজে গতি আসবে। নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১-এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন বা কমিশনের দেওয়া ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, রিটার্নিং অফিসারের কোনো আদেশ-নির্দেশ পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হলে, অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে বা কোনো অপরাধ করলে, কর্তব্যে অবহেলা করলে তা অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হবে। আসদাচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
অপরাধ প্রমাণিত হলে এক বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কমিশনের দেওয়া শাস্তি বা দণ্ড কার্যকর করা না হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
আসদাচরণের শাস্তি হিসাবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করতে পারবে। চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করতে পারবে। এমনকি অপরাধীর পদাবনত ও দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করতে পারবে। অন্য কোনো আইনে উল্লিখিত অপরাধের শাস্তি দেওয়া হলেও এসব অপরাধের শাস্তি এই আইনে পুনরায় প্রদান প্রতিবন্ধক হবে না। অর্থাৎ অন্য আইনে ওইসব অপরাধের বিচার করা হলেও নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশে শাস্তি দেওয়ার বিধান ব্যাহত বা বারিত করবে না। অপরাধী শাস্তি পাবেই।
সংশোধিত অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, অসদারচণ করলে কমিশন বা কমিশনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কমিশনের সম্মতিক্রমে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক শাস্তি হিসাবে দুই মাসের জন্য বরখাস্ত করতে পারবে। এ শাস্তি দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দেওয়া দণ্ড হিসাবে গণ্য ও কার্যকর হবে। অসদাচরণের জন্য কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে ওই প্রস্তাব পাওয়ার ১ মাসের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করে তা কমিশনকে অবহিত করতে হবে। এ শাস্তির তথ্য তার ব্যক্তিগত নথি, চাকরি বই (সার্ভিস বুক), বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে লিপিবদ্ধ থাকবে। এ সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। সরকার ও কমিশনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রধান্য পাবে। কারও দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে কমিশন ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের আইন সংশোধন করে ট্রেজারি চালানে ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। আগে ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১০ শতাংশ এখন তা ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। তবে এটি ব্যক্তিশ্রেণির ট্রেজারি চালানের ক্ষেত্রে নয় বরং যারা প্রাতিষ্ঠানিক কাজে যেখানে ট্রেজারি চালান জমা দেবে, তাদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাট প্রযোজ্য হবে।
ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, মন্ত্রণালয় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে সংস্কার করেছে, সেগুলোর তালিকার প্রোফাইল তৈরি করতে বলেছেন। সংস্কার কমিশনগুলো যেসব বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, এর চেয়ে বেশি সংস্কারের কাজ মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টারা করেছেন। সেগুলোর একটি প্রোফাইল প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে যেসব সংস্কার বিগত কয়েক মাসে হয়েছে, সেগুলো বুকলেট আকারে প্রকাশ করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ৭৭টি অতি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মধ্যে ২৪টি এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে আরও ১৪টি। বাকি ৩৯টি খুবই দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। শফিকুল আলম আরও বলেন, প্রথম দফায় ১২১টি সংস্কার বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭৭টি সংস্কার চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন চলছে।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফরে চার রাজনৈতিক নেতা সফরসঙ্গী হওয়ার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংস্থাটির ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তারা সেখানে যাচ্ছেন। তারা আমাদের (সরকারের) অংশীদার। প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে তারা সঙ্গী হচ্ছেন। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি। আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান দেবে।