রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার
মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে। দলগুলোও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চেষ্টা করবে। দলগুলোর আবেদনের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে সরকার। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত। বহু কাঙ্ক্ষিত এই সনদের বাস্তবায়ন কোনো দলের দয়া বা মর্জির ওপর ছেড়ে দেবে না।সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে আগের মেয়াদ। এদিকে দলগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে বলে আশাবাদী ঐকমত্য কমিশন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।জানতে চাইলে কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার সোমবার, সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। তবে রাজনীতিবিদরা সময় নিয়েছেন, তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সমাধানে আসার চেষ্টা করবেন। সমাধানে আসতে না পারলে আমরা ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ দেব। পরবর্তী সময়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রোববার বলে দিয়েছেন যে কোনোভাবেই হোক ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। আশা করি সমাধান হবে।
প্রসঙ্গত গত ২০ মার্চ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫টি দলের সঙ্গে প্রায় ৭০টি বৈঠকের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ চূড়ান্ত করেছে ঐকমত্য কমিশন। তবে আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া মূল সনদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। সনদে যারা স্বাক্ষর করবেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সেই প্রতিনিধিদের নাম চেয়েছে কমিশন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবারের মধ্যে প্রত্যেক দলকে দুজন প্রতিনিধির নাম পাঠাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অনেকগুলো দল প্রতিনিধির নাম পাঠায়নি। বক্তব্য আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত না হলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবেন না। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল (বিএনপি)সহ সমমনা দলগুলো প্রতিনিধির নাম পাঠিয়েছে।
জুলাই সনদে মোট ৮৪টি ধারা বা সিদ্ধান্ত আছে। এর মধ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্তে কোনো কোনো দলের নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) রয়েছে। আবার সনদ বাস্তবায়নে তিন ধরনের প্রক্রিয়া রয়েছে। বেশকিছু সিদ্ধান্ত সরকারের নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা যায়। কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। আর প্রায় ৩৪টি ধারা বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশ এবং অধ্যাদেশ দিয়ে যেসব ধারা বাস্তবায়ন করা যাবে, সেক্ষেত্রে সবগুলো দল একমত। তবে যেসব ধারা বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত। বিএনপি বলছে, সংসদ ছাড়া সংবিধান সংশোধন সম্ভব নয়। ফলে আগামী নির্বাচিত সরকার পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংবিধানসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করবে। জামায়াতে ইসলামী বলছে, গণভোট অথবা বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এনসিপি চায় গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা চলছে। সর্বশেষ আলোচনার টেবিলের পাশাপাশি রাজপথেও গড়িয়েছে সনদ বাস্তবায়নের আন্দোলন। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রকাশ্যে কথা না বললেও নির্বাচনের আগে সনদ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর সরকার। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোর অবস্থানে যাবে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সংস্কারসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। সর্বশেষ গত রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর কমিশনের বৈঠক হয়। বৈঠকে কমিশনের প্রধান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়ন করে সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। সরকারের বার্তা বুঝতে পেরে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার জন্য কমিশনের মেয়াদ বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধে মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্র জানায়, সনদ বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় অংশজন হলো বিএনপি। এতদিন তারা কঠোর অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে কিছুটা নমনীয়। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারা কিছুটা ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে স্বৈরাচার ফিরে আসার সব পথ বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সদস্যরা দীর্ঘ আলোচনা শেষে সনদ তৈরি করেছে। দলগুলোর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা মূল কাজটা করে ফেলেছেন। সামান্য রাস্তা বাকি। সবকিছু নির্ভর করছে শেষ অংশটুকুর ওপর। বাকি রাস্তাটুকু যেন আপনারা সুন্দরভাবে সমাপ্ত করেন, পৃথিবীর জন্য নজির সৃষ্টি করেন।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, সমঝোতার পথ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।