যে প্রশ্ন শেখ হাসিনা তুলতেন, এখন সেই প্রশ্ন তুলছে বিএনপি



মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :যে প্রশ্ন শেখ হাসিনা তুলতেন, এখন সেই প্রশ্ন তুলছে বিএনপি। গতবছর ৫ আগস্ট হাসিনা ভারত পালিয়ে যান। সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল রেফারেন্সের ভিত্তিতে ওই বছর ৮ আগস্ট সংবিধান অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার।মহামান্য প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ত্বরিত সিদ্ধান্তে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল চেয়ে পাঠান। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি নিয়ে এই মর্মে মতামত দেন যে, প্রেসিডেন্ট একজনকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের মতামত ও বৈধতা পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট গতবছর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ পাঠ করান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামানের বক্তব্য শোনা হলো। এ অবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কোনো বিধান না থাকায় উল্লিখিত প্রশ্নের বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই মতামত প্রদান করছে যে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি উক্তরূপে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাগণকে শপথ পাঠ করাতে পারবেন।
এ রকম স্পষ্ট রেফারেন্স প্রায় সকল সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়ে সৃষ্ট সংশয় ও ধূম্রজাল কাটে। তা সত্তে¡ও ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারকে ‘অবৈধ সরকার’ বলে সারিন্দা বাজিয়ে আসছেন ২০২৪ সালের ৮ আগস্টের পর থেকে। হাসিনার যারা দোহার-আইনজীবী রয়েছেন তারাও হুক্কাহুয়া রবে একই সারিন্দা বাজাচ্ছেন। অথচ বহুবার, বহুভাবে এ কথা বলা হয়েছে যে,তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের চাওয়া রেফারেন্ডামের ওপর অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানি নিয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের চাওয়া রেফারেন্ডামের প্রেক্ষিতে স্পেশাল রেফারেন্সে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি বলেন, ‘দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং মহামান্য প্রেসিডেন্ট বিগত ৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছেন, সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ (৩) অনুসারে মহামান্য প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করা সম্ভবপর নয়।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ হতে ০৮/০৮/২০২৪ তারিখের ১০.০০.০০০০.১২৭,৯৯.০০৭.২০.৪৭৫ নং স্মারকে প্রেরিত পত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মতামত যাচনা করা হয়েছে।
বহুল ব্যাখ্যায়িত এবং চর্বিত প্রসঙ্গটি বিএনপি আবারো উত্থাপন করেছে সম্প্রতি। বিষয়টি তখনই উত্থাপন করেছে, যখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রæয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে। প্রশ্নটি তোলা হয়েছে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মাসের পর মাস সংলাপ পরিচালনার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সামনে। যার ভিডিও ক্লিপটি কাট-ছাট করে হাসিনার ন্যারেটিভ ও প্রোপাগান্ডার খোরাক যোগাচ্ছে।
যার অন্য অর্থ দাঁড়ায়, হাসিনা যে প্রশ্নটি শুরু থেকে করে আসছেন সেই একই প্রশ্ন এখন বিএনপি মুখে। উৎখাত হওয়া সরকার প্রধানের মুখের কথাটি টেনে নিয়ে উৎখাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল বিএনপি নিজেই এখন ব্যবহার করছে। উদ্দেশ্য, ভবিষ্যতে, বিশেষত: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিদ্যমান পরিস্থিতি বুঝে এই ন্যারেটিভ যাতে জোর গলায় উচ্চারণ করা যায়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রকৃত নিয়োগদাতা কারা-এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতেই বিএনপি হাসিনার আপ্ত বাক্য নিজেদের মুখে আওড়াচ্ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে-এমন প্রশ্ন আবারো বাজারে ছেড়েছে দলটি। আলাপটি ছাড়া হয়েছে, ইউনূস সরকারের ১৩ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর। তখনই পুনর্বার প্রশ্নটি তোলা হলো, যখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রæয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। এমন একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সামনে এ প্রসঙ্গটি তোলা হলো যে প্রসঙ্গ হাসিনা উৎখাতের পর আওয়ামী ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা বারবার তুলে আসছে। হাসিনা এবং বিএনপি প্রশ্ন অদ্ভুতরকম অভিন্ন। তা হচ্ছে, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা কোথায় ?
গতবছর ৫ আগস্ট ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনা বারবার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে আসছেন। বিএনপি পক্ষে সেই একই প্রশ্ন তুললেন দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সেই প্রশ্নের ভিডিও ক্লিপের সুবিধাজনক অংশ কাটছাট করে বারবার তুলে ধরা হচ্ছে হাসিনার ধামাধরা সংবাদকর্মীরাই। হাসিনার অভিযোগকেই প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক নামের ইউটিউবার-অ্যাক্টিভিস্টরা। সেফ জোনে থেকে এসব আওয়ামী অ্যাক্টিভিস্ট অতি সাধারণ বিষয়টিকে মুখ বাঁকিয়ে এমন ভাবে পোট্রে করছেন যেন, দেশে সাংঘাতিক রকম সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়ে গেছে। আওয়ামী অ্যাক্টিভিস্টদের হাতে এভাবে খোরাক তুলে দেয়া মূলত জামায়াতে ইসলামীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনারই একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হাসিনা আমলের ‘একাত্তর টিভি’র নবনীতা চৌধুরীরা কী না করেছে হাসিনার জন্য ? কী অপপ্রচার চালায়নি মুক্তিকামী মানুষ এবং জামায়াত- বিএনপিবিরুদ্ধে ? সেই নবনীতা তার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে চর্বণ শুরু করছেন ড. ইউনূস সরকারের বৈধতার ইস্যু। বলতে চাইছেন, ধরা যাক আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনটি বিএনপি মনঃপূত হলো না। নির্বাচনে বিএনপির প্রত্যাশিত ফলাফল এলো না। তখন বিএনপি সরাসরি এই প্রশ্ন তুলতে পারে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারই অবৈধ। তার সকল কার্যক্রম অবৈধ। একই কারণে আয়োজিত অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনও অবৈধ। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ১৩ মাস পর বিএনপি নতুন আইনি ব্যাখ্যা হাজির করেছে। সরাসরি বলেছে,‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার অসাংবিধানিক! এ সরকারের কোনো আইনি ভিত্তি নেই!’ যে ব্যাখ্যা দিয়ে এতোদিন ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগ ১১ মাস ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারকে বারবার ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে আসছে।
আওয়ামী ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা বারবার প্রশ্ন করছিলেন, কোথায় সেই রেফারেন্স? যেটির ভিত্তিতে সরকার গঠিত হলো? কীভাবে তারা সেই রেফারেন্সটি দেখতে পারে। এতোদিন পর এই এখন একই প্রশ্ন। নবনীতার ভাষায়, বিএনপি অভিযোগ এবং অবিশ্বাস সরাসরি উত্থাপন করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সামনে। দিনের পর দিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর বৈঠক করে যাওয়া এ কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. আলী রিয়াজের সামনে তুললেন। ১৩ মাস পর সরাসরি ব্যাখ্যা হাজির করে বলছে, ড. ইউনূসের সরকার অসাংবিধানিক। এর কোনো আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর যা যা ঘটেছে সবই সংবিধানের বাইরে ঘটেছে। আইনের বাইরে গিয়ে ঘটেছে। প্রতিটি পদক্ষেপে বারবার সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। নবনীতা চৌধুরীর ভাষায়, বিএনপি এখন বলছে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রেফারেন্স এনে, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে-এ দাবিটি যে মিথ্যা ! যে রেফারেন্সের ভিত্তিতে সরকারটি গঠিত হলো। এ রেফান্সেটি কোথায় তারা দেখতে পাবেন ?
বিএনপি আত্মবিশ্বাসে যে পরিবর্তন আসবে তাতে কোন সালে রাজনৈতিক কৌশলে, রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। ড. ইউনূসের বস কে এ কথাটি বিএনপি আবারো মনে করিয়ে দেবে। বিএনপিএমন এক আইনি ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয়েছে যে আইনি ব্যাখ্যা রীতিমতো ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের। অন্তর্বর্তী সরকারেরতো বটেই, বিএনপি নেতা বলেছেন যে, এই অসাংবিধানিক পরিস্থিতি রীতিমতো ঝুঁকি তৈরি করছে সকল রাজনৈতিক দলের জন্য। যে ছাত্র-জনতা বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলো, তাদের জন্যও ঝুুঁকি নিয়ে আসছে।
নবনীতা তার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, আমাদের জানানো হয়েছিলো, যেহেতু আগের সরকার চলে গেছে, এই শূন্যতা নিরসনে কী করা যায়-এই মতামত চেয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মতামত চেয়েছিলো। এবং তারই ভিত্তিতে গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিলো। তখন আমাদের জানানো হয়েছিলো, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সহ আপিল বিভাগের সাত জন বিচারপতি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পক্ষে মতামত দিয়ে স্পেশাল রেফারেন্স দিয়েছেন। এবং সুপ্রিমকোর্টের মতামত ও বৈধতা পাওয়ার পরই প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারকে শপথ পাঠ করান। এমন একটা স্পেশাল রেফারেন্সের কথাও আমাদের বলা হয়, যেখানে নাকি আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি বলেছিলেন যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন সেহেতু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহামান্য প্রেসিডেন্ট ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছেন, সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে পারছেন না,এই অবস্থায় সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার বিষয়ে মতামত যাচাই করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামানের বক্তব্য শোনা হয়েছে। শুনে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এই মতামত প্রদান করেছেন যে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগ করতে পারবেন। এখন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে প্রশ্ন করছেন, যে ১০৬ অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে রেফারেন্স নিলো কে ? তিনি এমন প্রশ্নও করছেন, সেই রেফারেন্সে অ্যাটর্নি জেনারেল কিংবা কোন্ আইনজীবী স্বাক্ষর করেছেন ? তিনি প্রশ্ন করছেন, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সকল বিচারপতি পলায়ন করেছেন। তখন তারা কোথায় ছিলেন ? তাদের জাজেস কোয়ার্টারসহ ভেঙ্গে চুরে যাচ্ছে তাই অবস্থা। পরে আমরা জেনেছি প্রধান বিচারপতিসহ সকল বিচারপতি নিরাপত্তার খাতিরে ক্যান্টনমেন্টের আশ্রয়ে ছিলেন। তাহলে কোর্টে কী করে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হলো ? শিশির মনির সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বলছেন, তখন কোনো শুনানি হয়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠবেই।
ঐকমত্য কমিশনের সামনে জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ১০৬ অনুচ্ছেদের রেফারেন্স নেয়া হলো। কে নিলো ? কখন নিলো ? এটি মিস্টেরিয়াস ব্যাপার। এটির গ্রাউন্ডসটা কী ?শুধু সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভাইজারি ওপেনিয়নের কপিটা দেখানো হোক। এটিতে কোনো আইনজীবীর স্বাক্ষর নেই। শুধু বলা আছে, ‘বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল’। আর কেউ নেই। এটির ওপর ওপেন কোর্টে কখনোই শুনানি হয়নি। এ জিনিসটি কিন্তু চ্যালেঞ্জে পড়বে একদিন !
নবনীতার বিশ্লেষণ হচ্ছে, শিশির মনির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি তুলেছেন। প্রেসিডেন্ট কিন্তু সেই বিষয়েই রেফারেন্স চাইতে পারেন, যেটি সংবিধানে আছে। যেটি নেই এমন কোনো বিষয়ে রেফারেন্স চাইতে পারেন না। যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধারণা সংবিধানে নেই সে বিষয়ে কী করে প্রেসিডেন্ট রেফারেন্স চান ?
এদিকে পুরো বিষয়টিকে ‘হাস্যকর’ এবং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের রেফারেন্স চাওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট এবং সুপ্রিমকোর্টের মধ্যকার একটি যোগাযোগের বিষয়। সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট সুপ্রিমকোর্টকে রেফার করেছেন। এটি একটি প্রিভিলেজড ডকুমেন্ট। কোনো মতেই এটি পাবলিক ডকুমেন্ট নয়। তবে আদালত কিংবা প্রেসিডেন্ট চাইলে যেই যোগাযোগ কিংবা বার্তা আদান-প্রদানের কথাগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারেন। সর্বসাধারণের জানার বিষয় এটি নয়। প্রেসিডেন্ট সুপ্রিমকোর্টকে রেফার করেছেন আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। রাষ্ট্রে প্রধান আইন কর্মকর্তা এবং একই সঙ্গে চীফ কোর্ট অফিসারও অ্যাটর্নি জেনারেল। সুপ্রিমকোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোটিফাই করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করেছেন। সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেছেন। এই শুনানি ভার্চুয়ালি হয়ে থাকতে পারে। বিচারপতিগণ কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেল তখন কোথায় অবস্থান করছেন-এটি ম্যাটার করে না। বিষয়টি পানির মতো পরিষ্কার। ধরুন, প্রেসিডেন্ট সুপ্রিমকোর্টের কাছে পরামর্শ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট সেই চিঠির আইনি উত্তর আসার পরই প্রধান উপদেষ্টার শপথ পড়িয়েছেন। রেফার করেছেন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিমকোর্টের কাছে। আইনমাফিক শুনানি গ্রহণের পর ফরোয়ার্ডিং এসেছে। এই শুনানি হতে পারে ভার্চুয়ালি। এ রকম দৃষ্টান্ত অনেক আছে। রেফারেন্স শুনানিতো করবেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এখানে অন্য কোনো আইনজীবী থাকার সুযোগ নেই। স্টেটের পক্ষে রিপ্রেজেন্ট করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। চীফ কোর্ট অফিসারও তিনি। শুনানি করার জন্য আর কাকে লাগবে ? তিনিতো চীফ ল অফিসার্স অব রিপাবলিক। শুধু আপিল বিভাগ নোটিশ দেবেন অ্যাটর্নি জেনারেলকে। তিনি নিশ্চয়ই নোটিশ পেয়ে শুনানি করেছেন। এটি বিটুইন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড চীফ জাস্টিসের বিষয়। তৃতীয় পক্ষের হয়ে কোনো আইনজীবীর যুক্ত হওয়ারইতো কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া, বিচারপতি যেখানে অবস্থান করেন সেখানেই কোর্ট।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র এ আইনজীবী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানসম্মত কি না-এ প্রশ্ন অবান্তর। এসব প্রশ্ন ভবিষ্যতে তোলার আশঙ্কাও অযৌক্তিক এবং হাস্যকর। বিএনপি যে কথা বলতে চাইছে এটির সঙ্গে আমি একমত নই। রেফারেন্ডাম একটি প্রিভিলেজড ডকুমেন্ট। সবার জন্য উন্মুুক্ত নয়। এটি একটি যোগাযোগ সংক্রান্ত নথি মাত্র। রেজাল্ট অব কমিউনিকেশন পিউরলি প্রিভিলেজড ডকুমেন্ট। পাবলিক ডকুমেন্ট নয়। এটি কি বললেই হলো ? হাসিনা পদত্যাগ করেনি- জাতির উদ্দেশ্যের ভাষণেই বলেছিলেন, পদত্যাগ করেছেন। এখন যদি আমি পাল্টা প্রশ্ন তুলি, শেখ হাসিনা কি এখন তাহলে ছুটিতে আছেন ? যদি গিয়ে থাকেন তাহলে তিনি কি কাউকে প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন ? তাহলে এখনকার স্টেটাস কী ? এমন অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু কোনোটি যুক্তিপূর্ণ নয়। সাংবিধানিকভাবে মীমাংসিত বিষয়ে অহেতুক ধূম্রজাল সৃষ্টি করা। পানি ঘোলা করার চেষ্টা আর কি!