জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৪ দফা দাবির কর্মসূচি দিচ্ছে জামায়াত চরমোনাইসহ কয়েকটি দল
মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ কিছু বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের এক ধরনের বোঝাপড়া রয়েছে। জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা কয়েকটি দলের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি গ্রহণে তাদের সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবির বিষয়েও দলগুলোর নেতারা একমত হয়েছেন। তারা বলছেন, ফ্যাসিবাদী দল হিসাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলে ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর কার্যক্রম কেন নিষিদ্ধ হবে না।জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। এরই অংশ হিসাবে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে যুগপৎ কর্মসূচিতে নামছে।
অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ চার দফা দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ইসলামি রাজনৈতিক দল। এতে যুক্ত হওয়া অন্যান্য দলের মধ্যে রয়েছে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস এবং সরওয়ার কামাল আজিজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো যুগান্তরকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।এদিকে এখন পর্যন্ত কোনো যুগপৎ কর্মসূচি বা জোটে যাচ্ছে না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এমনটি জানিয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ প্রধান আরিফুল ইসলাম। এছাড়া কোনো যুগপৎ কর্মসূচি তো দূরের কথা, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। অপরদিকে যুগপৎ কর্মসূচির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে যুগান্তরকে জানান এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
সূত্র জানায়, কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি এবং বাস্তবায়নসহ এর ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ চার দফা দাবিতে কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল যুগপৎ কর্মসূচি শুরুর বিষয়ে একমত হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এক বিবৃতিতে জানায়, চার দফা দাবি আদায়ে রোববার (আজ) তারা পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে যুগপৎ কর্মসূচির ঘোষণা করবে। সোমবার কর্মসূচি ঘোষণা করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্য দলগুলোরও শিগগির কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে যুগপৎ কর্মসূচি শুরু হতে পারে।চার দফা দাবি হলো-জুলাই সনদের অবিলম্বে বাস্তবায়ন, ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। তবে কোনো কোনো দলের আবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবি রয়েছে।ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, চারটি দাবির বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। এ দাবিতে সব দল অভিন্ন কর্মসূচি দেবে।
এদিকে জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামি দলের নেতারা বলছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন চান। তবে সেই নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতেই হতে হবে। পিআর পদ্ধতির যে দাবি, তা নিয়ে তাদের মধ্যে মতভিন্নতা আছে। কোনো কোনো দল সংসদের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ দুকক্ষেই পিআর চায়। আর কোনো কোনো দল শুধু উচ্চকক্ষে পিআর চায়। এ কারণে দলগুলো পিআরের দাবি যার যার মতো করে উপস্থাপন করবে। এছাড়া পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করা হবে অভিন্ন কর্মসূচি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নিজস্ব মতামত আছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে যুগপৎ কর্মসূচি পালনে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, এনসিপি এখনো কোনো জোট বা যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের যে দাবি- তার সঙ্গে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পূর্ণ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে এনসিপির কোনো অবস্থান নেই। বরং এনসিপি শুধু উচ্চকক্ষে পিআর বিষয়ে একমত। এছাড়া সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসাবে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতের দাবির সঙ্গে এনসিপির সমর্থন থাকবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়া তো দূরের কথা, এ ধরনের কিছু এখনো পর্যন্ত জানি না। নানা ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। তবে যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে-ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা।