ইসির ৪৪টি সংস্কার দৃশ্যমান নির্বাচন আয়োজনে
মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনরাও আস্থাশীল হবেন। তবে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে রোডম্যাপে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রস্তুতিমূলক সব কাজ শেষ করা এবং তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের দিন ও ভোট পরবর্তী নানা পরিস্থিতি তাদের মোকাবিলা করতে হবে।নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য সংসদ নির্বাচনের মতো ইসির এবারের নির্বাচনী রোডম্যাপে থাকবে ভিন্ন আয়োজন। পূর্বের নির্বাচনে অনেক কিছু স্পষ্ট না থাকলেও এবার তা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনে সকল কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ও কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনী খসড়া রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রবাসী ভোটার কার্যক্রম উদ্বোধনের জন্য কানাডায় ও ইসির সিনিয়র সচিব জাপানে অবস্থান করায় তাদের উপস্থিতিতে ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। ইসির কর্মক্ষেত্রে এখন আলোচনার বিষয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার অপেক্ষায় আছে দেশের রাজনৈতিক দল ও জনগণ। নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের চিঠি পাওয়ার পর কমিশন আগামী ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার সময় নির্ধারণ করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আইন অনুযায়ী ইসির জারি করা নির্বাচনী রোডম্যাপে সব ধরনের প্রস্তুতি নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। যেহেতু ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার কথা বলা হয়েছে, রোডম্যাপের মাধ্যমে মানুষ জানবে কত তারিখে ইসি কোন কাজটা করবে। এতে জনমনে ভোটের ব্যাপারে একধরনের পজিটিভ ধারণা তৈরি হবে। ফলে ইসির কার্যকরণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন এবং নির্বাচন ও অংশীজনদের মধ্যে বার বার দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। জানা যায়, এবার ইসির দুই ডজনের বেশি নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম রয়েছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে অন্তত ১০টি কার্যক্রম। সেগুলো হলো নির্বাচনী আইন (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংস্কার, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধাারণ, নতুন দলের নিবন্ধন, দল ও অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত, প্রবাসীদের ভোট, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা। এছাড়াও তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের সময় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ ইসির সামনে রয়েছে সাতটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। সেগুলো হলো- লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, ভোটারদের আস্থায় আনা ও উপস্থিতি নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, অপপ্রচার ও এআইয়ের ব্যবহার বন্ধ করা, প্রার্থীদের আচরণবিধি মানানো, মাঠে দায়িত্বরতদের নিরপেক্ষ এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমুক্ত রাখা।
সম্প্রতি সরকারের নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় এবং ইসির রোডম্যাপ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে। তবে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের নির্বাচনের সময় নিয়ে রয়েছে আপত্তি। এ ছাড়া ভোটের মাঠে ও দেশের পরিস্থিতিসহ সার্বিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা ইসির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। কারণ এমন পরিস্থিতিতে সব দলের সহায়তার সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং ভোটারদের আস্থা ফেরানো সংস্থাটির জন্য এবার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।এদিকে রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক অনেক কাজই এগিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপে থাকা কার্যক্রমগুলোর সম্ভাব্য সময়ও জানা গেছে। অক্টোবরের মধ্যে মূল প্রস্তুতির কাজ সীমানা নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কার, আচরণবিধিমালা জারি, ভোটার তালিকাসহ সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট নিতে প্রয়োজনীয় অ্যাপসহ আনুষঙ্গিক কাজ এবং তরুণ ভোটারদের নিয়ে সম্পূরক ভোটার তালিকার কাজ নভেম্বরে শেষ করতে চায় ইসি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ছোটখাটোসহ অন্তত ৪৪টি সংস্কার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বরে দল নিবন্ধন, অংশীজনের সংলাপ, প্রশিক্ষণ, কর্মকর্তাদের ব্রিফিং, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, পোস্টাল ব্যালট নিয়ে কার্যক্রম, ম্যানুয়াল ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা মুদ্রণ, ভোটকেন্দ্রের সম্ভাব্য তালিকা ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা সরবরাহ, বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।
হালনাগাদের পর খসড়া ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে ৩১ আগস্ট। আর সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে অক্টোবরে। ৩১ অক্টোবর ভোটারযোগ্য তরুণসহ বাদ পড়াদেরও জাতীয় নির্বাচনে ভোটের সুযোগ দিতে সম্পূরক তালিকা হবে, যা নভেম্বরে চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়া প্রবাসী ভোটারদের প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার দিতে অনলাইন নিবন্ধন অ্যাপ ও পোস্টাল ব্যালটের বিষয়টি নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ২৪ আগস্ট থেকে সংসদীয় এসব আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে আপত্তি আবেদনের শুনানি শুরু হবে। চলবে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। নতুন দলের নিবন্ধন বাছাই শেষে বাদ পড়েছে ১২১টি আবেদন। বাছাইয়ে টিকে থাকা ২২টি দলের ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে তদন্ত চলছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এবার অন্তত ৩১৮টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদন বাছাই করছে ইসির কমিটি। আর নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।নির্বাচনের রোডম্যাপের ঘোষণা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার আবুল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আগামী রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। আমরা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক শুরু করেছি। যেহেতু অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আছে, তাই এটি শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের রোববার বা সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। কমিশনার এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর, সামগ্রিক অগ্রগতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানানো হবে। তারপর চূড়ান্ত পরিকল্পনা পরে ঘোষণা করা হবে।