সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঁচ বিচারপতির বিষয়ে চলছে তদন্ত
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে কাউন্সিল গঠিত হয়। প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হয়।সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল হাইকোর্ট বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই পাঁচ বিচারপতির মধ্যে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান।এর ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করেছেন।আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য–সংবলিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত কাউন্সিলের অপর দুই সদস্য হলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে সেদিন বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। আর ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বিচারপতিদের অপসারণের দাবিতে সেদনি সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইং।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা শেষে গত বছরের ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা বলেছিলেন, আপাতত হাইকোর্ট বিভাগে ১২ বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। তবে তাঁদের নাম তখন প্রকাশ করেনি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে তাঁদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে গত বছরের ২০ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ।
১২ বিচারপতির মধ্যে তদন্ত চলছে পাঁচজনের বিরুদ্ধে
সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের সই করা আজকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হলে বিচারপতি অপসারণ–সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়। ইতিমধ্যে ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতির বিষয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি তাঁদের বেঞ্চ প্রদান হতে বিরত থাকেন। তাঁদের মধ্যে একজন (বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন) গত ৩০ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুজন বিচারপতি (বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন) হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে তাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন। গত বছরের ৩০ জুলাই তাঁদের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে আরও ৬ মাসের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। ৩০ জানুয়ারি তাঁদের বর্ধিত ওই মেয়াদ শেষ হয়।অপর দুজন বিচারপতি (বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস) ইতিমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি তাঁদের চাকরিকালীন মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে যান।
সুগ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি দুজন বিচারপতিকে অপসারণ করেন উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিচারপতি খিজির হায়াতকে চলতি বছরের ১৮ মার্চ এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে চলতি বছরের ২১ মে অপসারণ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অপর পাঁচ বিচারপতির বিষয়ে বর্তমানে কাউন্সিলের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই পাঁচ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দেন।