জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামিরা জামিন পাওয়ায় আইন উপদেষ্টাকে দায়ী করে তার পদত্যাগসহ চার দফা দাবি - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামিরা জামিন পাওয়ায় আইন উপদেষ্টাকে দায়ী করে তার পদত্যাগসহ চার দফা দাবি


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ও পুলিশের আইজির পদত্যাগ এবং সংশ্লিষ্ট বিচারকদের অপসারণ। এছাড়া আন্দোলনকারীরা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জুলাই আহত পরিবারের ওপর হামলাকারী সদ্য জামিনপ্রাপ্ত যাত্রাবাড়ী থানার এসআই সাজ্জাদুর জামানকে গ্রেফতার করতে হবে।জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামিরা জামিন পাওয়ায় আইন উপদেষ্টাকে দায়ী করে তার পদত্যাগসহ চার দফা দাবি করেছেন জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা। মঙ্গলবার সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি থেকে তারা এ দাবি জানান। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা সোয়া ৩টা পর্যন্ত সচিবালয়ের ২ নম্বর ফটকের সামনের সড়ক অবরোধের করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা ‘আলটিমেটাম’ দিয়ে বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে রোববারের মধ্যে এ বিষয়ে (জুলাইয়ের হত্যা মামলার আসামিদের জামিন) প্রধান উপদেষ্টার কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে। সেই ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টাকে জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে।অবস্থান চলাকালে আন্দোলনকারীরা নানা স্লোগান দেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল-‘পদত্যাগ পদত্যাগ, পদত্যাগ চাই-আসিফ নজরুলের পদত্যাগ চাই’ দফা এক দাবি এক-আসিফ নজরুলের পদত্যাগ, খুনিরা বাইরে ঘোরে-বিচার বিভাগ কী করে, ‘আমার ভাই কবরে-খুনি কেন বাইরে, আমার ভাইয়ের রক্ত-বৃথা যেতে দেব না। ’ জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা বলেন, অর্থের বিনিময়ে জুলাই গণহত্যার আসামিরা জামিন নিচ্ছেন। অবিলম্বে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে পদত্যাগ করতে হবে। যেসব বিচারক হত্যা মামলার আসামিদের জামিন দিয়েছেন তারা সেই সব বিচারকদেরও অপসারণ দাবি করেন।

বেলা সোয়া ৩টার সময় সড়ক ছেড়ে দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের আসামিরা কেন জামিন পাচ্ছে? এ সময় জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও আহতরা ৪ দফা দাবি পেশ করেন। তাদের প্রথম দাবি হচ্ছে-হাইকোর্টের যেসব বেঞ্চ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামিদের জামিন দিয়েছেন সেসব বিচারপতিদের বরখাস্ত করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি-আসামিদের জামিন দেওয়া হচ্ছে, তারপরও আইন উপদেষ্টা জামিনের বিরোধিতা করে কোনো পদক্ষেপ নেননি। সে কারণে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে পদত্যাগ করতে হবে। তাদের তৃতীয় দাবি হচ্ছে-আসামিদের সঙ্গে স্বজনপ্রীতি অথবা আর্থিক লেনদেনের কারণে আসামি গ্রেফতার না করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী খোদাবক্স চৌধুরীকে পদত্যাগ করতে হবে। এবং তাদের চতুর্থ দাবি হচ্ছে-আসামিদের সঙ্গে স্বজনপ্রীতি অথবা আর্থিক লেনদেনের কারণে গ্রেফতার না করায় পুলিশের আইজিপিকে পদত্যাগ করতে হবে। এসব দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে শহীদ তায়িমের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, আইন উপদেষ্টা আমাদের আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। রোববার পর্যন্ত তারা সময় দিয়েছেন। এর মধ্যে আসামিদের জামিনের বিষয়ে আইন উপদেষ্টার ব্যাখ্যা ও পুলিশি হামলার ঘটনায় দৃশ্যমান বিচার না হলে তারা আবার আন্দোলন শুরু করবেন। রবিউল আউয়াল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রোববারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করবেন তারা। সেই কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। সেই আন্দোলন সচিবালয়ের ২ নম্বর গেটের সামনেই হবে।

এ সময় রবিউল আউয়াল আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জুলাই আহত পরিবারের ওপরে হামলাকারী সদ্য জামিনপ্রাপ্ত যাত্রাবাড়ী থানার এসআই সাজ্জাদুর জামানকে গ্রেফতার করতে হবে। এই এসআইকে জামিন দেওয়ার কারণে নিম্ন আদালতের ২১ নম্বর কোর্টের দুজন বিচারক আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ও গাজী এবাদত হোসেনকে বহিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়াও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আইন উপদেষ্টাকে শোকজ করতে হবে। এই দাবিগুলো না মানলে রোববার থেকে সচিবালয় অথবা যমুনা ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।বেলা সোয়া ১১টার দিকে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা প্রথমে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের ২ নম্বর ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এতে সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির মধ্যে কর্মসূচি চালিয়ে যান জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা।

অবস্থান কর্মসূচির আগে শহীদ পরিবার ও জুলাই আহত ব্যক্তিরা সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাথি ও গালি দেয় বলে অভিযোগ করেছেন শহীদ আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী। তিনি বলেন, পুলিশ জুলাই শহীদ পরিবারকে গালি দিয়েছে। আমি সেটা উল্লেখ করতে পারব না। আমাকে পুলিশ লাথি দিয়েছে। আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। আমরা দাবি আদায় করেই ছাড়ব। অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, এমনটি হলে আমরা যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

এদিকে মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা তার ভেরিফাইড পেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারের করা একটি মামলায় পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্যকে জামিন দিয়েছে। এটি নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্বাভাবিক কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে এই জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। হাইকোর্ট দেশের উচ্চ আদালত। হাইকোর্ট বা উচ্চ আদালত আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারের অধীনে নয়। জামিন বা হাইকোর্টের অন্য সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাই আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।আইন উপদেষ্টা ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন, হাইকোর্ট উচ্চ আদালত হলেও তার সিদ্ধান্ত প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে উপরোক্ত জামিন আদেশের বিরুদ্ধে তাই আপিল করা হয়েছে। আগামীকাল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। জামিন বাতিল হলে পুলিশ উপরোক্ত আসামিকে গ্র্রেফতার করবে।

Top