খালেদা জিয়াকে কারাগারে চরম নির্যাতন করা হয়েছে - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়াকে কারাগারে চরম নির্যাতন করা হয়েছে


মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন: খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। এতে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি প্রধানের জন্মদিনে কেক না কেটে রাজধানীসহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয় ও মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে চরম নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন তিনি। শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন। এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসা ‘ফিরোজায়’ ফুল নিয়ে যান। বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তারের কাছে তারা প্রধান উপদেষ্টার ফুলের তোড়া হস্তান্তর করেন।

নয়াপল্টনের অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস বলেন, কারাগারে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে চরম নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষে রাখা হয়েছে, সে কক্ষে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করত, পোকামাকড় দৌড়াদৌড়ি করত। কয়েকজন ডেপুটি জেলার অন্যায়ভাবে তাকে ছাদের উপরে একটি কক্ষে রেখেছিল।তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জেলজীবনে তার ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, যে নির্যাতন হয়েছে, কারা কারা এর জন্য দায়ী তাদের সবার বিচার হওয়া উচিত। মির্জা আব্বাস বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের ১৫ দিন পরপর দেখা করার সুযোগ ছিল। দেখেছি, তিনি কীরকম মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। আমরা বাইরে থেকে চেষ্টা করেছি তাকে সহযোগিতা করার। পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু আমরা তার দৃঢ় মনোবল দেখেছি। দেখেছি, পর্যায়ক্রমে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। বুঝতে পেরেছি তাকে তখন বোধ হয় খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দেওয়া হতো।

বিএনপির দুর্দিনে দলের নেতৃত্ব দিয়ে খালেদা জিয়া যে ভূমিকা রেখেছেন তা তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা যারা নেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি তারা দেখেছি, নানা চাপের মধ্যে দেশনেত্রীর দৃঢ় মনোবল। গণতন্ত্রের প্রশ্নে তার আপসহীন নেতৃত্ব এবং নেতা-কর্মীদের প্রতি তার যে ভালোবাসা ও স্নেহ, তা তুলনাহীন। ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া প্রথমে নির্বাচনে যাবেন না বললেও পরে একটি দলের চাপ ও কর্মীদের কথা বিবেচনা করে নির্বাচনে গেছেন বলে জানান মির্জা আব্বাস।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কখনো খালেদা জিয়া জন্মদিন উদযাপন করা বা দাওয়াত দেওয়ার মতো কিছু করেননি। সুস্বাস্থ্যের জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি। গয়েশ্বর বলেন, যত রক্ত ঝরুক, এখনো গণতন্ত্র হাতের নাগালের বাইরে। নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। কারও পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে যেন গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বাকশালের পরিবর্তে গণতন্ত্র এনেছিলেন জিয়াউর রহমান। সামরিক স্বৈরশাসনের গোরস্থানে গণতন্ত্র এনেছিলেন খালেদা জিয়া। আর ফ্যাসিবাদের জায়গায় গণতন্ত্রের সূচনা করবেন তারেক রহমান-এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, যারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তাদের ক্ষমতায় আসতে আবার বহু বছর লেগেছে। মুসলিম লীগ আসতে পারেনি, আওয়ামী লীগের লেগেছিল ২১ বছর। আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি মাত্র ৯ বছরে আবার ক্ষমতায় এসেছিল। এই অর্জনের মূল কাণ্ডারি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। সামরিক স্বৈরশাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস তার হাত ধরেই রচিত হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ জিয়ার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পাওয়া বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। বহু মানুষ ছেড়ে গেছে। কিন্তু দারুণ দুঃসময়ে দলের হাল ধরেছিলেন খালেদা জিয়া। সামরিক স্বৈরশাসনের গোরস্থানে গণতন্ত্র এনেছিলেন তিনি।

নয়াপল্টনে বিএনপির আয়োজনে দোয়া ও মিলাদ-মাহফিল সঞ্চালনা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের সদস্য সচিব আবুল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নিরব, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়নসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, গণতন্ত্রের মা, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আজকে (শুক্রবার) জন্মদিন। তিনি কোনো অনুষ্ঠান পালন করেন না। তবে দল থেকে সারা দেশে মিলাদ-দোয়া মাহফিল হচ্ছে। বিকালে ম্যাডামের জন্য ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত উইংয়ের কর্মকর্তা মাসুদ রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে চীনা রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে জন্মদিনে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছে চীনা দূতাবাস। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বেগম খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে। তিনি এবার ৮১ বছরে পা দিয়েছেন।

Top