ভোটসহ গুচ্ছ সংশোধনীর সিদ্ধান্ত,আরপিওতে ‘না’ - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোটসহ গুচ্ছ সংশোধনীর সিদ্ধান্ত,আরপিওতে ‘না’


মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক প্রার্থী থাকলে ব্যালটে ‘না ভোট’-এর বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) একগুচ্ছ সংশোধন আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে-এমপি নির্বাচিত হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে হলফনামায় অসত্য তথ্যের প্রমাণ মিললে সংসদ-সদস্য পদ বাতিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী ও কোস্ট গার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তা অপরাধ করলে কঠোর শাস্তি, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত হলে, ইসি সেই দলের নিবন্ধন স্থগিত করতে পারবে-এমন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।এছাড়া নির্বাচনে সমান সংখ্যক ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে লটারিতে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত করার বিধান বাতিল করে পুনঃভোটের বিধান যুক্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকটি দল মিলে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। ভোট গণনার সময় সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকতে পারবেন কিন্তু গণনার মাঝপথে বের হতে পারবেন না। আরপিও থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সংক্রান্ত সব বিধান বাতিলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি (নির্বাচন কমিশন)। সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কমিশনের মুলতবি সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। এর আগে বৃহস্পতিবার কমিশনের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে ওইদিন আরপিওর সব ধারাগুলো পর্যালোচনা শেষ না হওয়ায় সভা মুলতবি করা হয়েছিল। ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রধান আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)। আরপিও সংশোধন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ সংশ্লিষ্ট অন্য বিধিমালা ও নীতিমালা চূড়ান্ত করতে পারছে না কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরপিও সংশোধনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলো ইসি। এর মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ আরেকধাপ এগুলো।এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পর্যায়ে আরপিও সংশোধনী চূড়ান্ত বলতে পারেন। যেসব সংশোধনীর বিষয় জানিয়েছি, সেগুলো আমরা (ইসির) সংশোধন করার প্রয়োজন বলে মনে করছি। এর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের রেলেভেন্স নাই। ঐকমত্য কমিশন থেকে আরপিও সংশোধনসংক্রান্ত কিছু প্রভিশন আসতে পারে এবং সংশোধনীর প্রয়োজন হতে পারে, সে বিষয়ও মাথায় রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি এই সপ্তাহের মধ্যে আরপিও সংশোধনীর খসড়া ফাইনাল করে ফেলব। আগামী সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে পাঠাব।

একক প্রার্থীর আসনে না ভোট : আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, না ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কোনো নির্বাচনে যাতে একক প্রার্থী বিনাভোটে নির্বাচিত হতে না পারেন সেজন্য না ভোটের বিধান আনা হয়েছে। সার্বিকভাবে না ভোট নয়। তিনি বলেন, যদি কোনো আসনে মাত্র একজন ক্যান্ডিডেট হয়, তাকেও নির্বাচনে যেতে হবে। তার বিপক্ষে ‘না’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।ইসির কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সব আসনে না ভোট ছিল। একজন ভোটারের কোনো প্রার্থী পছন্দ না হলে তিনি না ভোট দিতে পারতেন। এবার ইসি শুধুমাত্র একক প্রার্থীর আসনে না ভোটের বিধান যুক্ত করেছে। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ হবে। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার : আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ফলাফল স্থগিত এবং বাতিল নিয়ে যে বিধানগুলো ছিল, যেখানে পুরো কনস্টিটিয়োন্সির নির্বাচন বাতিল বা ফলাফল বাতিল করার যে সক্ষমতা সেটাকে সীমিত করা হয়েছিল, সেটা আবার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন অবস্থা বুঝে নির্বাচন স্থগিত করা এক বা একাধিক বা সব আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে।

হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে জয়ী হওয়ার পরও এমপি পদ বাতিল : ইসি জানিয়েছে, হলফনামায় যদি কেউ মিথ্যাচার করে, মিথ্যা তথ্য দেয়, তাহলে সেটার ব্যাপারে তদন্ত করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আরও সুনির্দিষ্টভাবে আরপিওতে সন্নিবেশ করা হয়েছে। এই সময়কালটা হবে এমপি যে ডিউরেশনের জন্য নির্বাচিত হলেন এই সময়কালের জন্য। সুতরাং এই সময়কালে যদি হলফনামায় কোনো ধরনের অত্যুক্তি বিচ্যুতি মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয় তবে তদন্ত করে রিকল করে প্রয়োজনে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। নির্বাচিত এমপিও আইনের আওতায় আসতে পারেন এবং তার পদ চলে যেতে পারে। তবে এই পাঁচ বছরের পর আর নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে থাকবে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংজ্ঞায় যুক্ত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী : এ নির্বাচন কমিশনার জানান, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনসিসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞার মধ্যে না পড়ায় তা যুক্ত করা হয়নি।

কর্মকর্তাদের শাস্তি কঠোর হচ্ছে : নির্বাচন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অবহেলাজনিত শাস্তিগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তা তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করা হবে এবং ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি ইসিকে জানাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বাধ্য থাকবে। ওই কর্মকর্তা এসিআরে তা উল্লেখ থাকবে।

লটারির মাধ্যমে প্রার্থী জয়ের বিধান বাতিল : আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, দুজন প্রার্থী সমান সংখ্যক ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনের যে বিধান ছিল, কমিশন সেটা থেকে সরে এসেছে। আমরা বলছি, এক্ষেত্রে পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। লটারির মাধ্যমে সংসদ-সদস্য নির্বাচনের বিষয়টি কমিশন সঠিক বলে মনে করে না।

ইভিএম বাদ : যেহেতু ইভিএমের ব্যবহার হবে না মর্মে আমরা ইতঃপূর্বেই কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই ইভিএমসংক্রান্ত যাবতীয় প্রভিশন বিলুপ্ত করা হয়েছে।

অন্য যেসব সিদ্ধান্ত : আরপিওতে আরও যেসব সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত হলে, ওই দলের নিবন্ধন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত আরপিওতে যুক্ত হচ্ছে। একাধিক রাজনৈতিক দল মিলে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। ভোট গণনার সময় সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকতে পারবেন কিন্তু গণনার মাঝপথে বের হতে পারবেন না। বিলবোর্ডে আলোকসজ্জা করা যাবে না। তবে ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলোর ব্যবহার করা যাবে। প্রার্থীদের ব্যয় অডিট করার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তি পর্যায় থেকে ১০ লাখ টাকা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান বা ডোনেশন নিতে পারত। এটাকে ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে যে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই ট্রানজেকশনটা হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ট্যাক্স রিটার্নে এটা দেখাতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের মিথ্যাচার বা অপবাদ ছড়ানো ব্যাপারে প্রার্থী, দল, সংস্থা, মিডিয়াসহ সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রভিশন করা হয়েছে।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ খসড়ায় ৮২টি আসনের উপর আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদনের উপর শুনানি হবে। এছাড়া নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনার খসড়া আগামী ১৮ আগস্ট উপস্থাপন করতে ইসি সচিবালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Top