মুমিন কখনো হতাশ হয় না - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু আর সে রাষ্ট্র নির্মাণের মূল চালিকাশক্তি শিক্ষক সমাজ আমরা কেন এই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে আজকে দাঁড়ালাম? একটা সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে আমরা উপহার দিতে পারি,সে ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই দ্রুত তদন্তের নির্দেশ,জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন নির্বাচন নিয়ে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে সজাগ থাকুন হজযাত্রী নিবন্ধনের সুবিধার্থে পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ শিথিল করেছে মাউশি মহাপরিচালকের আবেদন,পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা ,বদলি ও পদায়ন নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে

মুমিন কখনো হতাশ হয় না


আলোকিত বার্তা : দুনিয়ার এ জীবনে বিপদ আসেই।নানান সময় নানান দিক থেকে বিপদ এসে হামলে পড়ে আমাদের ওপর। অর্থসম্পদ-সন্তানাদি-সম্মান-মর্যাদাÑ আক্রান্ত হয় সবকিছুই। দুনিয়ার জীবনে এ বিপদের মুখে পড়ার কথা অবশ্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো মসিবত এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।” (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬)

বোঝা গেল, বিপদ আসবেই। বিপদের মুহূর্তে কী করতে হবে সেই নির্দেশনাও দেয়া আছে এ আয়াতে। কিন্তু বিপদ যখন কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা কেটে যাওয়ার মতো কোনো স্বাভাবিক সম্ভাবনা যখন মানুষের সামনে থাকে না, তখন আঘাত হানে হতাশা। হতাশা তাকে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর কুদরত থেকে তার দৃষ্টিকে সরিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দিতে চায়। অথচ পবিত্র কুরআনের ভাষ্য মতেÑ ‘মুমিন কখনোই হতাশ হতে পারে না।কুরআনে বর্ণিত ঘটনা ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন বার্ধক্যে উপনীত, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাঁকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনাল। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ! কিসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছ?

ফেরেশতারা বললেন ‘আমরা তো সত্য কথাই বলছি। আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি। বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে করুক, এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে। আপনি নিরাশদের দলে যাবেন না। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের কথার জবাবে বললেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে?’ (সূরা-হিজর, ৫৩-৫৬ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)

আরেকজন নবীর আরেকটি ঘটনা। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সর্বাধিক প্রিয় সন্তান ছিলেন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা বাবার এই আদরকে সহজে মেনে নিতে পারেননি, তাই কৌশলে তাঁকে একদিন বাবার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে কূপে ফেলে দিল। আল্লাহর অসীম কুদরতে কূপ থেকে উঠে এসে একদিন তিনি মিশরের ধনভা-ারের দায়িত্বশীল হলেন। আর যে ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে চক্রান্ত করেছিল, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে তারা খাবার আনতে হাজির হলো তাঁর কাছে।

এরপর এক কৌশলে তিনি তাঁর সহোদর বিনইয়ামীনকে নিজের সঙ্গে রেখে দিলেন। দুই ছেলে হারিয়ে বাবা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম অন্য ছেলেদের বললেনÑ ‘হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তাঁর ভাইয়ের সন্ধান করো। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না।’ (সূরা ইউসুফ৮৭)

এ দুই নবীর শেষ কথা- এক আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে, যারা মুমিন, যারা সঠিক পথের অনুসারী, তারা তো কিছুতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। তাঁরা উভয়েই ছিলেন পার্থিব বিপদের শিকার। একজন সন্তানহীন অবস্থায় পুরো জীবন কাটিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, আরেকজন এক সন্তানের শোকেই যখন পাথর হওয়ার অবস্থা, তখন হারালেন আরেক সন্তান! তবুও তাঁরা আল্লাহর অসীম কুদরতের কাছে আশাবাদী ছিলেন। হতাশা তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। পরিশেষে তাঁরা উভয়েই এই পৃথিবীতে থেকেই এর ফল ভোগ করে গেছেন।

মুমিনের শান এমনই হওয়া উচিত। যতকাল বেঁচে থাকবে, আল্লাহর রহমতের কাছে আশাবাদী হয়েই সে বেঁচে থাকবে। সাধ্যে যতটুকু কুলায়, চেষ্টা করে যাবে। একবারের চেষ্টা ব্যর্থ হলে আবার করবে। বার বার করবে।

হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম দুই সন্তান হারিয়ে চরম সংকটের মুহূর্তেও ছেলেদের বলেছেনÑ ‘তোমরা গিয়ে ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো! অর্থাৎ তিনি নিজেও আশাবাদী, আশা পোষণ করেছেন। অন্যদের মনেও আশার সঞ্চার করতে চাচ্ছেন।’

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবীজী (সা.) তাঁকে বলেছেন ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’-এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক১৯৭০১)

কবি যেমনটি বলেছেন :পারিব না এ কথাটি বলিও না আর। একবার না পারিলে দেখ শতবার।

Top