যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বিমান কিনবে সরকার - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বিমান কিনবে সরকার


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :অবশেষে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর) পালটা শুল্ক ইস্যুতে আলোচনার জন্য সম্মতি দিয়েছে। দুদিনব্যাপী কাঙ্ক্ষিত বৈঠকটি আগামীকাল (২৯-৩০ জুলাই) ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে যোগ দিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল আজ সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা ছাড়ছেন। রোববার সাংবাদিকদের কাছে খবরটি নিশ্চিত করেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ২৫টি বোয়িং কেনার অর্ডার দিয়েছে বাংলাদেশ। সচিবালয়ের দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘বোয়িংয়ের ব্যবসা কিন্তু সে দেশের সরকার করে না, করে বোয়িং কোম্পানি। আমরা বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত অর্ডার দিয়েছে ১০০টি, ভিয়েতনাম ১০০টি ও ইন্দোনেশিয়া ৫০টি।’ তিনি আরও জানান, ‘বোয়িং কোম্পানি তাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী এগুলো সরবরাহ করবে। এসব বোয়িং সরবরাহ করতে অনেক সময় লাগবে; হয়তো আমরা দুই-এক বছরের মধ্যে কিছু পাব।বাণিজ্য সচিব মনে করেন, বিমানের বহর বাড়াতে হবে। সেই পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। এর মধ্যে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ট্যারিফ ইস্যু সামনে আসে। ফলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বোয়িং উজোজাহাজ কেনার আদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে কেনার আদেশ ছিল ১৪টি, পরে সেটি বাড়িয়ে ২৫টি করা হয়েছে। বোয়িং ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, সয়াবিন ও গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ১৬২ সিটের ৪টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ৪১৯ সিটের ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার এবং ২টি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার এয়ারক্রাফট রয়েছে।

এদিকে পালটা শুল্ক ইস্যুতে ২৯ জুলাই মঙ্গলবার ইউএসটিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠক প্রসঙ্গে সচিব বলেন, বাংলাদেশের অবস্থানপত্র গত ২৩ জুলাই ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূরীকরণসহ নানা ইস্যুতে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এখন তৃতীয় দফা বা চূড়ান্ত বৈঠকে ইউএসটিআরের সঙ্গে সরাসরি বিষয়গুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে। সেখানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান উপস্থিত থাকবেন। এর আগে ইউএসটিআরের সঙ্গে গত ৯-১১ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়। সেখানে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা লুৎফে সিদ্দিকী ও পরে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল সরকার। শেষ ধাপে অর্থাৎ গত ৩ জুলাই আলোচনায় যুক্ত হন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এরপর গত ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি চিঠি পাঠিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়ে দেন বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা পালটা শুল্কের হার ৩৭ শতাংশ হবে না, এটা হবে ৩৫ শতাংশ। যা পহেলা আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে ইতোপূর্বে ইউএসটিআরের সঙ্গে দুই দফায় আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। এখন তৃতীয় দফার আলোচনা শেষ হবে ৩০ জুলাই। সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকা ইতোমধ্যে আমদানি-রফতানি বৈষম্য কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুল্কারোপ কিছুটা কমতে পারে। যে কারণে ইউএসটিআর বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছে। তৃতীয় দফার বৈঠকে সয়াবিন ও তুলা আমদানি প্রসঙ্গে কিছু উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরা হবে। সয়াবিন যারা বেসরকারিভাবে আমদানি করে, তারা চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের থেকে আনতে। ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বেসরকারি আমদানিকারকরা ওই দেশের সয়াবিন রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এতে বেসরকারি পর্যায়ে সয়াবিন ও তুলা আমদানির বিষয়ে একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্য সচিব তুলা আমদানি প্রসঙ্গে বলেন, তিন বছর আগে আমরা ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছি। এখন তা কমে গেছে। তবে আগের অবস্থায় নিতে পারলে ১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।

এদিকে পালটা শুল্কের হার কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক সাড়া পেতে বাংলাদেশ বোয়িং কেনা ছাড়াও ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আরও ৩ লাখ ৩০ হাজার টন আমদানির পরিকল্পনা আছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক প্রায় শতভাগ প্রত্যাহারের পক্ষেও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সয়াবিন, তেলবীজ, ডাল, চিনি, বার্লি, এলএনজি ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর আগে চলতি বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত ৬২৬টি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

Top