সন্তান আল্লাহর নিয়ামত ,চাই যথাযথ তালিম-তারবিয়াত
আলোকিত বার্তা :শিশুরা পরিবারের সদস্যদের দেখে শেখে। এই শেখা শুরু হয় মুখ ফোটারও আগে। অনেক শিশু অন্যদের দেখাদেখি নামাজ পড়ে, হাত বাঁধে, রুকু-সিজদা করে। তাই শিশুর দ্বীনী তারবিয়াতের জন্য দ্বীনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার ব্যাপারে যতœবান হতে হবে। নিকট অতীতের বিখ্যাত আলেম মাওলানা মুহাম্মাদ মনযূর নোমানী রাহ. বলেন, ‘আম্বিয়ায়ে কেরামের দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি হলো : এটি মূলত আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনের প্রস্তুতির জন্য। এই দৃষ্টিভঙ্গির স্বাভাবিক ও অপরিহার্য দাবি এই যে, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মাসয়ালা হলোÑ আখিরাতে সফলতা অর্জন করা। তাই রাসূল (সা.) প্রত্যেক ব্যক্তির উপর তার সন্তানের এই হক সাব্যস্ত করেছেন যে, একেবারে প্রথম থেকেই তার দ্বীনী তালিম ও তারবিয়াতের ফিকির করবে। এতে অবহেলা করলে গুনাহগার হবে।’ (মাআরিফুল হাদিস-৩/২৭৪)অতএব সন্তানকে প্রথমে আল্লাহর নাম ও কালিমা শেখাতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন জিকির, মাসূর দোয়া এবং ইসলামি শিষ্টাচার শেখাতে হবে। নবীজির আমল দেখুন, ওমর ইবনে আবি সালামা রা. বলেন, আমি ছোট অবস্থায় নবীজির কাছেই লালিত পালিত হয়েছি। একবার খাওয়ার সময় পাত্রের চতুর্পাশ থেকে খাচ্ছিলাম। তখন নবীজি (সা.) আমাকে বললেন, ‘হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলো, ডান হাতে খাও এবং তোমার পাশ থেকে খাও।’ (সহিহ মুসলিম-২০২২) এভাবে শিশুকে ছোট থেকেই হাতে-কলমে সুন্নত, আদব ইত্যাদি শেখানো।
সতর্কতার অভাবে অনেক সময় শিশুরা আমাদের থেকেও বিভিন্ন মন্দ কাজ শেখে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে পূর্ণ সতর্কতা কাম্য। কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা যায়। ক. অনেক সময় জ্বালাতন থেকে বাঁচার জন্য আমরা শিশুর হাতে ডিভাইস-স্মার্টফোন দিয়ে দেই। অথচ আমরা কি একটু চিন্তা করেছি! সামান্য সময়ের জ্বালাতন থেকে বাঁচার জন্য আদরের সন্তানের হাতে এমন একটি অগ্নিখ- তুলে দিলাম, যার কারণে তার ঈমান, আমল, আখলাক এককথায় দুনিয়া ও আখিরাত কোনো কিছুই রেহাই পাবে না। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন!
বিষয়টি ব্যাপক হওয়ায় হয়তো আমাদের কাছে তেমন কিছু মনে হয় না। মনে করি, কী আর এমন হবে! কিন্তু একটু ভাবলে দেখা যাবে, সন্তানের বহু আচরণ আমাদের এই কর্মের ফল। এর সুন্দর সমাধান হলোÑ সন্তানকে সময় দেয়া। তার আনন্দ-বিনোদনের উত্তম পথ খুঁজে বের করা।
খ. শিশুকে কখনো মিথ্যা আশ্বাস না দেই। একে তো তা কবিরা গুনাহ, তারপর আবার এ থেকে বাচ্চাও শিখবে যে, প্রয়োজনে মিথ্যা কথা বলা যায়। অতএব এ ক্ষেত্রেও সতর্কতা কাম্য। এ বিষয়ে নবীজি (সা.) কী বলেছেন শুনুন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমের রা. বলেন, (ছোট বেলায়) একদিন (আমি খেলার জন্য ঘর থেকে বের হতে চাইলে) আম্মা ডাক দিয়ে বললেন, এদিকে আসো, তোমাকে একটি জিনিস দেবো। তখন নবীজি আমাদের ঘরে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘তুমি তাকে কী দিতে চেয়েছ? মা বললেন, আমি তাকে খেজুর দিতে চেয়েছি। তখন নবীজি বললেন, তুমি যদি তাকে কিছু না দাও তবে তোমার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়ার গুনাহ হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ-৪৯৯১)
গ. রাগের সময় কোনো অসমীচীন শব্দ না বলি। কেউ কেউ এই সময় সন্তানকে গালিগালাজ করে। অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে; যা কোনো সভ্য মানুষ থেকেও কাম্য নয়। এতে অনেকগুলো ক্ষতিÑ ১. এটি কবিরা গুনাহ, ২. এর কারণে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধাবোধ বাকি থাকে না. ৩. সন্তানও পিতা-মাতার উপর এগুলো প্রয়োগ করে।
এক নারীকে দেখেছি, সে তার ছেলেকে খুব গালিগালাজ করত। কিছুদিন পর দেখি, ছেলেও তার মাকে গালিগালাজ করছে এবং ওই শব্দগুলোই বলছে, যেগুলো তার মা একসময় বলত। এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা আমাদের আচরণ থেকে সন্তান শেখে। সুতরাং আমরা সন্তানের সাথে এমন আচরণ করব না, যা তার থেকে কামনা করি না।