রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য ২১ দফা প্রস্তাব হালনাগাদ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য ২১ দফা প্রস্তাব হালনাগাদ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন


মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য ২১ দফা প্রস্তাব হালনাগাদ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। এগুলো চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পেশ করা হবে। রাজধানীর খামারবাড়ীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত-‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে জাতীয় সনদ উপস্থাপন’ শীর্ষক সেমিনারে ২১ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।সেমিনারে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়-দেশের নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে ২১ দফা প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে-দ্বিকক্ষ সংসদ, মন্ত্রিপরিষদ ‘শাসিত’ সরকার, ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদ-সদস্য প্রত্যাহার, মৌলিক অধিকারের পরিধি বাড়ানোসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সুবিধার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের জন্য স্বৈরতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করতে জাতীয় সরকার গঠনের কথাও বলা হয়েছে।সেমিনারে সুজন সদস্য একরাম হোসেন তার উপস্থাপনায় জানান, রাষ্ট্র সংস্কারে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার লক্ষ্যে সুজন-এর পক্ষ থেকে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদের জন্য একটি খসড়া তৈরি করা হয়। তার ওপর জনমত যাচাইয়ের লক্ষ্যে দেশের সব এলাকার মানুষের অংশগ্রহণে অনেকগুলো সংলাপের আয়োজন করা হয়।

তিনি আরও জানান, এসব সংলাপ থেকে প্রাপ্ত নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সুজন প্রস্তাবিত জাতীয় সনদটি হালনাগাদ করেছে। সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তা উপস্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, সুজনের ২১ দফা প্রস্তাবে যেসব বিষয় এসেছে তার মধ্যে কয়েকটির ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। সেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা। তবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ (উচ্চকক্ষের গঠন ও সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি), নারী আসন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন পদ্ধতিসহ আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শেষে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত জাতীয় সনদ প্রকাশ করার অঙ্গীকার রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের, যার আলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা বলা হয়েছে।সেমিনারে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদটি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এছাড়া কোনো সরকার যেন স্বৈরতান্ত্রিক হতে না পারে সেজন্য জাতীয় সরকার গঠন জরুরি। তাহলে কোনো রাজনৈতিক সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারবে না।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করলে কারও বিরোধিতা কাজে আসবে না। সবকিছুই রাজনৈতিক দলগুলোর ঠিকাদারি দেওয়া হয়নি। সারা দেশের মানুষ উৎসাহ নিয়ে ভোটে নেমে পড়বে। এতে এক ধরনের ভারসাম্য আসবে। কারণ তৃণমূলে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জনগণ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকার চাইলে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে পারে।

তিনি বলেন, যারা পালিয়েছে, আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেসব প্রতিষ্ঠান চালু রাখা যেত। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হওয়ার কথা ছিল। কারণ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকলে অন্তত কিছু এলাকা সামাল দেওয়া যেত।তিনি জানান, পার্বত্য তিন জেলা পরিষদের নির্বাচনের পক্ষে ৮৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে। স্থানীয় সরকারের একটি একীভূত আইন থাকা দরকার। প্রস্তাবিত সংস্কারের পর আইনগুলো ৬ মাসের মধ্যে করতে হবে। পরবর্তী সময়ে বাদ দিলে জনগণ দেখবে।তিনি আরও জানান, রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও সিভিল সোসাইটিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। শুধু রাজনীতিবিদদের প্রাধান্য দেওয়ায় মতানৈক্য কমিশনে পরিণত হয়েছে। অথচ সব কিছুর ঠিকাদারি রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, বৈপ্লবিক পরিবর্তন না আসলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেগুলোতে ঐকমত্য এসেছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সত্যিকার অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসবে।জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনুভা জাবিন বলেন, এনসিপি নির্বাচনকে ভয় পায় না। তবে নির্বাচন ব্যবস্থায় গলদ পরিবর্তন করতে চাই। বিদ্যমান সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনগণ শেখ হাসিনার সরকারকে ফেলে দিয়েছে।তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা উপেক্ষিত। তাদের মানুষ হিসাবে না দেখে নিছক নারী হিসাবে দেখা হচ্ছে। বড় কোনো সিদ্ধান্তে নারীদের রাখা হচ্ছে না। যেমন বিএনপির সেলিমা রহমানকে কেন নীতিনির্ধারণীপর্যায়ে দেখা যায়নি। তিনি নারীদের সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার পক্ষে মত দেন। সংরক্ষিত আসন নারীদের জন্য লজ্জার। গণতন্ত্রের বাক পরিবর্তনে সুজনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে সাধুবাদ জানান তিনি।সংলাপে সভাপতিত্ব করেন-সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন। আলোচনায় অংশ নেন-সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার, বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

Top