সরকারি আদেশ অমান্যে বাধ্যতামূলক অবসর - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারি আদেশ অমান্যে বাধ্যতামূলক অবসর


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :কোনো কর্মচারী একক বা দলগত ভাবে সরকারি কাজে বাধা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর ও নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হবে। কমিটি গঠনের পর ৩১ কার্যদিবসের মধ্যে এসব শাস্তি দিতে পারবে সরকার। দণ্ড আরোপের আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রিভিউ করা যাবে। এমন সব বিধান রেখে সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে সরকার।বুধবার গভীর রাতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়।বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর বলেন,সরকারি কর্মচারী আইনের দ্বিতীয় সংশোধনীতে কর্মচারীদের আপত্তির ধারাগুলো সংশোধন করা হয়েছে।এতে আমরা সন্তুষ্ট।এ সংশোধনীকে আমরা স্বাগত জানাই।অধ্যাদেশটির প্রথম সংশোধন জারি করা হয়েছিল চলতি বছর ২২ মে। সেখানে ৭ দিনের নোটিশে এবং কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই যে কোনো কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতিসহ অন্যান্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছিল। এরপর অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। এর পরিপ্র্রেক্ষিতে অধ্যাদেশটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই হিসাবে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিন মাসের ব্যবধানে দুবার সংশোধন করল।

প্রথম সংশোধন অধ্যাদেশে অনানুগত্যের কারণে যে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান ছিল। এ নিয়ে কর্মচারীদের সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল। দ্বিতীয় সংশোধনে অনানুগত্য শব্দটি তুলে দিয়ে তদস্থলে সরকারের বৈধ আদেশ যুক্ত করা হয়েছিল।সর্বশেষ অধ্যাদেশের ৩৭ এর (ক) ধারায় বলা হয়েছে,কোনো কর্মচারী যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ছাড়া সরকারের কোনো আদেশ,পরিপত্র ও নির্দেশ অমান্য করেন বা এর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এসব কাজে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন, তবে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।এছাড়া ছুটি বা যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে নিজ কর্মে অনুপস্থিত, অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কাজে উপস্থিত হতে বাধাদান, তবে সেটা সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ হিসাবে গণ্য করে শাস্তি দেওয়া যাবে। এসব অপরাধের জন্য তিন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। প্রথমত, নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিত করা। দ্বিতীয়ত, বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া। তৃতীয়ত, চাকরি থেকে বরখাস্ত।

প্রথম সংশোধিত অধ্যাদেশে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি ছিল, দ্বিতীয় সংশোধনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মচারী নারী কর্মজীবী হলে তদন্ত কমিটিতে একজন নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব, কিছু কর্মচারীর কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ,অফিসে হাজিরা দিয়েই কর্মকর্তাদের না জানিয়ে, ছুটি না নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ, পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের রুমে হাতাহাতি, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ কমিশনারদের অবরুদ্ধ রেখে দাবি আদায়ের চেষ্টা এবং সচিবদের রুম আটকিয়ে আন্দোলনসহ বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে ২০১৮ সালে বাতিল হয়ে যাওয়া ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ-১৯৭৯’ এর কঠোর বিধান ভিন্ন আঙ্গিকে ফেরত এলো।

সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুসারে, অভিযোগ ওঠা কর্মচারীকে প্রথমে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। অভিযুক্ত কর্মচারীর জবাব সন্তোষজনক না হলে বা নির্ধারিত সময়ে কারণ না দর্শালে কর্তৃপক্ষ তিন কার্যদিবসের মধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করবে। সংশ্লিষ্ট কমিটি তদন্তের আদেশ পাওয়ার ১৪ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করবে। তবে কোনো কারণে তদন্তের সময় বৃদ্ধি প্রয়োজন হলে তা সর্বোচ্চ সাত কার্যদিবস বাড়ানো যাবে। আর যদি কোনো তদন্ত কমিটি উল্লিখিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে না পারে, সেক্ষেত্রে নতুন কমিটি গঠন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। যে তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হবে, সেই কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়েরের বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে এ কারণে প্রাপ্ত শাস্তি সংশ্লিষ্ট অফিসারের এসিআরে যুক্ত করার বিধানও অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে।তবে আগের অধ্যাদেশের মতো রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ দ্বিতীয় সংশোধনীতে রাখা হয়নি। অধ্যাদেশের ৩৭(ক)(১১) তে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। তবে দণ্ড আরোপের আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রিভিউ করা যাবে।

অধ্যাদেশটির প্রথম সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এটিকে বৈষম্যমূলক কালো আইন দাবি করে আন্দোলনে নেমেছিলেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এরপর ৪ জুন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি আন্দোলনরত কর্মচারীদের সংগঠনগুলোর কাছ থেকে তাদের আপত্তির বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এরপর ৩ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সংশোধিত সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়। যা বুধবার গভীর রাতে অধ্যাদেশ আকারে জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।

Top