সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য নবম পে কমিশন গঠন
মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য নবম পে কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ কমিশনের প্রধান করা হয়েছে সাবেক অর্থসচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে। নবগঠিত এই কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।বর্তমানে ২০১৫ সালের অষ্টম পে-স্কেল অনুসারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতনভাতা পাচ্ছেন। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২০টি বেতন গ্রেড রয়েছে। এক থেকে নবম গ্রেড পর্যন্ত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণি, ১০ থেকে ১২তম দ্বিতীয় শ্রেণির, ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেড তৃতীয় শ্রেণি এবং ১৭ থেকে ২০তম গ্রেড চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত। বর্তমানে প্রথম গ্রেডের বেতন নির্ধারিত ৭৮ হাজার টাকা।
২০তম গ্রেডের বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা। সরকারি চাকরিতে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি পদ রয়েছে। তবে কর্মরত আছেন ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
দুই বছরের বেশি সময় দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। এতে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে নতুন পে কমিশন গঠন করা হলো। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বভার গ্রহণের পর গত বছর নভেম্বরে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা প্রদানে কমিটি গঠন করে সরকার।
কমিটির অন্যতম সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান জানান, পে কমিশন গঠন একটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল প্রক্রিয়া। বাজারদরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছেন না সরকারি কর্মচারীরা। এতে সাধারণ কর্মচারীদের জীবনের ওপরে বিস্তর প্রভাব পড়ছে। সেই ক্ষেত্রে পে কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দু-একটি মিটিংয়ের পর মহার্ঘ ভাতার হার চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি আরও জানান, নিচের দিকের কর্মচারীদের তুলনায় ওপরের দিকের অর্থাৎ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মহার্ঘ ভাতার হার বাড়বে কম। এমনকি অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেন জনপ্রশাসন সচিব। এর কয়েকদিন পর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার মতো অর্থ সরকারের তহবিলে নেই।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার জন্য একটি কমিটি কাজ শুরু করে। এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা শুরু হলে সরকার পিছিয়ে যায়। পরে চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেট সংক্ষিপ্তসার অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ১৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ও কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৩০ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাদের ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। বেতনভাতায় মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।
এদিকে, ২০১৫ সালের পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। যেসব কর্মচারী বেসরকারি বাসায় বসবাস করেন, তারা সবচেয়ে সমস্যায় আছেন। তারা কষ্টকর জীবনযাপন করছেন। সাধারণ জীবনযাপনেও যেখানে মাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা দরকার, সেখানে একজন কর্মচারীর মাসিক আয় মাত্র ৮ হাজার ২৫০ টাকা।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবীর সরকারের পে কমিশন গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমরা পে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। দেরিতে হলেও পে কমিশন গঠন করায় তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।তিনি আরও বলেন, গঠিত কমিশনের কাছে বেতন গ্রেড ২০ থেকে কমিয়ে ১২তে নামিয়ে আনার অনুরোধ জানাই। এতে বেতনবৈষম্য কমে আসবে এবং কর্মচারীরা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, প্রতি ৮ বছর অন্তর পে-স্কেল দেওয়ার নিয়ম। সেখানে আরও প্রায় আড়াই বছর বেশি অতিবাহিত হয়েছে। কর্মচারীর এসব আর্থিক ক্ষতি কমিশনকে পুষিয়ে দিতে হবে।