দ্রুত সংস্কার,নির্বাচন,অস্থিতিশীল করার যড়যন্ত্রের প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে নামছে বিএনপি - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্রুত সংস্কার,নির্বাচন,অস্থিতিশীল করার যড়যন্ত্রের প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে নামছে বিএনপি


মোহাম্মাদ মহাব্বাতুল্লাহ মাহাদ :দ্রুত সংস্কার, সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার যড়যন্ত্রের প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে তিন মাসব্যাপী কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করছে দলটি। ফের মাঠে নামছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে রোডমার্চ, বিভাগীয় সমাবেশ, আসনভিত্তিক পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করছে।বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সভায় এ নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন নেতারা। এতে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের উসকানিমূলক ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য আমলে না নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।প্রস্তাব করা হয়, প্রতিটি আসনে একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে যেন কোনো দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং না হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঐক্যবদ্ধভাবে একই প্ল্যাটফর্ম থেকে দলের কর্মসূচি সফল করবেন। তা না হলে কারও বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের কবর জিয়ারত ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার অঙ্গীকারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।ওই সভায় বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দিতে চায় না বিএনপি। এজন্যই সরকারকে সব ধরণের সহযোগিতা করে আসছে, সামনেও করবে। কিন্তু দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে অবনতি হচ্ছে। এ সুযোগে কেউ কেউ দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। সেক্ষেত্রে সরকারের কোনো কার্যকর ভূমিকাও দেখা যাচ্ছেন না। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল দল হিসাবে তা হতে দিতে পারে না। এজন্য তিন মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বড় দল হিসাবে একেকটি আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা রয়েছেন। কিছু কিছু এলাকায় এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বও আছে। এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এতে বলা হয়, আসনভিত্তিক পদযাত্রা কর্মসূচিসহ সামনের দিনে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হবে তা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সফল করবে। সেক্ষেত্রে দলে কোনো গ্রুপিং নেই-এই প্রত্যয়ে একসঙ্গে কাজ করবে। প্রস্তাবগুলো নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে আবারও সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বৈঠক করার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকে কর্মসূচিকে সুনির্দিষ্ট করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেওয়া হবে। পরে তা দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, ‘হঠাৎ করে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে দলের মাঠপর্যায়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড যেন আরও জোরদার করা হয়। যেসব জেলা-উপজেলায় নতুন কমিটি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারি। দ্রুত সময়ে এ কাজটি শেষ করার জন্য আরও নির্দেশনা দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের সংঘাতের রাজনীতি চায় না বিএনপি। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে চায় তাদের বিষয়ে সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থক যথেষ্ট সজাগ । ভোটের দাবিতে আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর রাজপথে আন্দোলন করে আসছি, এখনো আন্দোলনে আছি। এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব। দল ও সংগঠন শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সবকিছু মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে বিএনপি যা যা করার দরকার তাই-ই করবে।

সূত্রমতে, সাংগঠনিক সভায় আগামি দিনে করণীয় এবং কিভাবে আগামি তিন মাস মাঠে কর্মকাণ্ড রাখা যায় তা নিয়ে নেতারা মতামত দেন। বেশির ভাগ নেতাই মত দেন-পদযাত্রা, রোডমার্চ, বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়েও সমাবেশ করার জন্যও কেউ কেউ বলেছেন।

নেতাদের মতে, এসব কর্মসূচির লক্ষ্য হবে জনগণকে নির্বাচনমুখী করা। জনগণকে সম্পৃক্ত করে কেন নির্বাচন দরকার সে বিষয়ে বোঝানো। তবে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের কর্মসূচিকেও ব্যাপকভাবে মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও মত দেন কয়েকজন। এছাড়া ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব জনগণের মাঝে আরও ব্যাপকভাবে তুলে ধরার বিষয়েও সভায় নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে। সভায় নেতারা বলেন, বিএনপির মূল টার্গেট হচ্ছে যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন এবং সেজন্য দ্রুত তফশিল। লন্ডন বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন চায় বিএনপি।

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পাশে বিএনপি : এদিকে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের কবর জিয়ারত ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ইতোমধ্যে সিনিয়র নেতারা নিহতদের কবর জিয়ারত ও তাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শুরু করেছেন। এ সময় নিহতদের পরিবারকে সহমর্মিতা জানানোর পাশাপাশি তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা জানাবেন নেতারা।

Top