গোপালগঞ্জজুড়ে থমথমে অবস্থা, গ্রেফতার ২৫ - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গোপালগঞ্জজুড়ে থমথমে অবস্থা, গ্রেফতার ২৫


মোহাম্মাদ মহাব্বাতুল্লাহ মাহাদ : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলা ও সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠা গোপালগঞ্জে কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। টানা দ্বিতীয় দিন সেখানে কারফিউ চলছে। এতে শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী। তবে আরও বড় ধরনের অভিযান হতে পারে-এমন খবরে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয়দের অনেকে এলাকা ছেড়েছেন। জেলায় নিত্যপণ্যের বাজার থেকে শুরু করে মুদি দোকানও বন্ধ। এদিন জেলার কোথাও দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি।

এদিকে কারফিউর মধ্যে শহরের মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জেলাজুড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলার কোথাও কোনো ধরনের মিছিল বা রাজনৈতিক শোডাউনের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দেরও খুব একটা বাইরে বের হতে দেখা যায়নি। বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। সংঘাতে নিহত ৪ জনের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন ও দাহ হয়। এদিন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। বুধবার সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে চারজনের মৃত্যু ঘটনায় পরিস্থিত ব্যাখ্যা করে বিবৃতি দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এতে বলা হয়, সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ এবং ব্যাপক ভাঙচুরের মুখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। পরে আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী। তবে গোপালগঞ্জে হতাহতের ঘটনায় সরকারকে দায় নিতে বলেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

নিহতদের পরিচয় : সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী চারজনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা, কোটালীপাড়ার কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী, টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা মোল্লা ও গোপালগঞ্জ সদরের ইমন তালুকদার। তবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তারা কীভাবে সংঘর্ষে জড়ালেন, সে সম্পর্কে পরিবার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে কিছু খোলাসা করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক অথবা কর্মী। এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার একাধিক ভিডিও ফুটেজে তাদের মারমুখী অবস্থায় দেখা গেছে। প্রসঙ্গত রক্তাক্ত জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের অংশ হিসাবে পহেলা জুলাই থেকে মাসব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে এনসিপি। এরই মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বুধবার এনসিপির নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জে উপস্থিত হলে তাদের ওপর হামলা হয়। একপর্যায়ে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনার জেরে সেখানে কারফিউ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।

কারফিউ চলবে : চলমান কারফিউর সময় বাড়ানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জেলায় কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে কারফিউর বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচি আয়োজনের ক্ষেত্রে পুলিশি নিরাপত্তায় কোনো ধরনের ঘাটতি ছিল কি না-এমন প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, না, ছিল না। তারপরও তদন্ত করে ঘটনার বিশ্লেষণ করা হবে। যদি কারও গাফিলতি পাওয়া যায় তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবার জেলা কারাগারে ভাঙচুরের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর হাসান।

দায় এড়াতে পারে না সরকার : সংঘর্ষ চলাকালে চারজন নিহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। বৃহস্পতিবার সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় চারজনের মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না। একই সঙ্গে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। আসকের দাবি-অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করতে হবে। এনসিপির নেতা ও সমর্থকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। নাগরিকের জীবন রক্ষা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। গোপালগঞ্জের ঘটনায় রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং গুলির শব্দ স্পষ্টভাবে শোনার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে আসক বলেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক গণমাধ্যমে বলেছেন পুলিশ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেনি। তাহলে এই আগ্নেয়াস্ত্র কারা ব্যবহার করল? আসক মনে করে, এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট ও প্রামাণ্য ব্যাখ্যা দেওয়া না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, ভয় ও প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা আরও বাড়বে।

Top