ইবাদত হবে শুধুই আল্লাহর জন্য
আলোকিত বার্তা :আল্লাহ তা‘আলাই যেহেতু যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণের আধার। সর্বপ্রকার লাভ-ক্ষতি, শুভ-অশুভ এবং উপকার ও অপকারের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব যেহেতু তাঁরই নিকট। সুতরাং ইবাদত করতে হবে একমাত্র তাঁরই। দৈহিক ও আর্থিক সব ধরনের ইবাদত হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই উদ্দেশে। নজর-মানত, রুকু-সিজদা তথা যাবতীয় উপাসনা ও আরাধনা করতে হবে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ (নূহ আলাইহিস সালাম তার অবাধ্য সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে) বলেছেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, আল্লাহকে ভয় করবে এবং আমার আনুগত্য করবে। তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহর নির্দিষ্টকাল যখন চলে আসবে, তখন অবকাশ দেয়া হবে না। যদি তোমরা তা জানতে।’ (সূরা নূহ্ : ২-৪)মহান আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম তো আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও একত্ববাদের বিশ্বাসের উপর এমন অটল-অনড় ছিলেন, কোনো দুঃখ-কষ্ট তাদের স্পর্শ করলে তারা অভিযোগ করতেন কেবল সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে, মাখলুক বা সৃষ্টির কাছে নয়। কুরআনুল কারীমের ভাষ্য মতে, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৎ ভাইয়েরা যখন তাকে শিকারের নামে সাথে করে নিয়ে গভীর কুয়ায় নিক্ষেপ করল, তখন পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালাম পুত্র ইউসুফের শোকে কাতর হয়ে তাঁর দুঃখ কষ্ট কোনো মানুষের নিকট প্রকাশ না করে আপন রবের নিকট ব্যক্ত করে বললেনÑ ‘আমি আমার অসহায়ত্ব ও দুঃখ-কষ্টের অভিযোগ শুধু আল্লাহর নিকটই করছি।’ (সূরা ইউসুফ : ৮৬)
কারণ, তিনি নিশ্চিতভাবে জানতেন, ইউসুফ আলাইহিস সালাম আল্লাহর ইচ্ছায়ই নিখোঁজ হয়েছেন এবং তাঁর ইচ্ছাতেই তিনি ফিরে আসবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তুমি যখন কোনো কিছু চাইবে আল্লাহর নিকট চাও। আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো।হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম পুত্র সন্তানের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করলেন। পুত্র সন্তান লাভের সব উপকরণ অনুপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বললেন, ‘হে আমার পালনকর্তা! আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গিয়েছে, আমার মাথা শুভ্রোজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে। হে আমার রব! তোমাকে আহ্বান করে আমি কখনো ব্যর্থ মনোরথ হইনি। আমি আশঙ্কা করছি, আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাকে দান করো একজন উত্তরাধিকারী। যে আমার (নবুওত ও দ্বীনী শিক্ষার) উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুবের বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার পালনকর্তা! আপনি তাকে করুন সন্তোষজনক।’ (সূরা মারইয়াম : ৪-৬)
উপরোক্ত আয়াতসমূহে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এ সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে, বান্দা আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করবে সুদৃঢ় আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে। জনৈক আরব বেদুঈন হজের উদ্দেশে এলো। কা‘বা শরীফের পাশে দাঁড়িয়ে সে আপন রবকে সম্বোধন করে তার সহজ সরল ভাষায় বলতে লাগলÑ হে কা‘বার মালিক! হে কা‘বার মালিক! তোমার দরজায় আমি হাজির। পরিবার-পরিজন আমার বাড়িতে রেখে এসেছি। আমায় তুমি ক্ষমা করবে না? তোমার ক্ষমার চাদরে আমায় ঢেকে নেবে না?দু‘আর ফলে বান্দা কখনো তো যা চেয়েছে তাই তৎক্ষণাৎ পেয়ে যায়, কিংবা তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি পায়। আবার কখনো দু‘আর ফলাফল বিলম্বে প্রকাশ পায়। এমনিভাবে বান্দার দু‘আ কখনো সারা জীবনে কবুল হয় না; কিন্তু বৃথাও যায় না; বরং জীবনের সব দু‘আ কিয়ামত দিবসে নেকীর বিশাল স্তুপে পরিণত হবে। বান্দা বলবে, রাব্বুল আলামীন! আমি তো দুনিয়াতে এত নেক আমল করিনি।আল্লাহ তা‘আলা বলবেনÑ ‘তুমি দুনিয়াতে আমার নিকট অবিরাম দু‘আ করেছিলে। আমি তা তোমার আজকের এ দিনের জন্য রেখে দিয়েছিলাম। সুতরাং নেক আমলের এ বিশাল স্তুপ তোমার সেসব দু‘আর ফসল।এজন্য দু‘আ থেকে কখনোই হাত গুটিয়ে নেয়া উচিত নয়। দু‘আর তাৎক্ষণিক কোনো ফলাফল দৃশ্যমান না হলেও অবিরত দু‘আ করে যাওয়া মুমিনের কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, দু‘আ হলো যাবতীয় ইবাদতের নির্যাস। (জামে তিরমিযী-৩৩৭১) নির্যাস ব্যতীত শুধু খোসার উপর নির্ভর করা নির্বুদ্ধিতা বৈ কিছু নয়।