জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে একমত - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে একমত


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এছাড়া সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনে একমত তারা। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একমত হলেও গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার বৈঠকে এসব বিষয় ওঠে আসে।

বৈঠক শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ তৈরি হবে। রাষ্ট্রকে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা না হয়। আলোচনার বিষয় ছিল প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকে না। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

ড. আলী রীয়াজ আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি মত এসেছে। এগুলো হলো-‘কর্মে নিযুক্ত জ্যেষ্ঠতম একজন’কে, নাকি ‘কর্মে জ্যেষ্ঠ’ দুইজনের মধ্যে একজন নিয়োগ করা হবে সেটি নিয়ে আলোচনা এসেছে। কমিশন এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে গত ৭ জুলাই আলোচনা হয়েছিল। ওইদিন রাজনৈতিক দলগুলো দুটি বিষয়ে একমত হয়েছিল। এরমধ্যে রয়েছে সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা যেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে অপব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করা। বৃহস্পতিবারের আলোচনায় অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধনের ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধান অপসারণের আলোচনা হয়েছে। একইভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে এ বিষয়টা আরও সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন কী কী বিষয় সংযুক্ত করা যায়, সে সব আগামী সপ্তাহে সুস্পষ্ট হবে। তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এমন একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যা কার্যত যতদূর সম্ভব ত্রুটিহীন হয়। যে ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান আন্দোলন-সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে, এই বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, প্রথম পর্যায়ের দুই মাসের আলোচনায় অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এর ফলে জাতীয় সনদ তৈরির ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে আমাদের একমত হওয়া প্রয়োজন। আর রাষ্ট্রকে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা না হয়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের যে সব বিষয়ে অগ্রসর হয়েছে, তা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চায় কমিশন। কমিশন এবং দলগুলোর মধ্যে লক্ষ্যে কোনো মতভিন্নতা নেই। সবার উদ্দেশ্য এক। সবার অব্যাহত সহযোগিতায় জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের দাবির চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে লিখিত প্রস্তাবনাও দিয়েছে তার দল। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি প্রস্তাবনা বিএনপির কাছে দিয়েছে সরকার। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যের বৈঠকে আলোচনাও হয়েছে। তারমতে, ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকে না। গণ-অভ্যুত্থানকে যথাযথ মর্দাযায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায় বিএনপি। তারমতে, স্বাধীনতার পর জনপ্রতিনিধিরা ঘোষণাপত্র তৈরি করেছিলেন। তারা আলোচনা করে সংবিধান প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে ঘোষণাপত্রকে সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়নি। সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, জ্যেষ্ঠ দুজনের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার পক্ষে বিএনপি। তবে এ বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হয়নি। বিচার বিভাগকে বাইরে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার ব্যাপারে সবাই একমত। কাদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হবে তা নিয়ে ঐকমত্য তৈরি হয়নি। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে উচ্চকক্ষের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা আরও সহজ হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা জারি যাতে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে সবাই একমত। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হবে নাকি দুইজনের মধ্যে থেকে একজন হবেন, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রের সব অঙ্গনেই যেন ভারসাম্য থাকে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গত ১৬ বছরের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে অনুগত লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে রেখে নিয়োগ দিতে হবে। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুইজনের মধ্যে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আমরা একমত। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেও জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, যোগ্যলোককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছে, তা যথাযথ হয়নি। একটি নীতিমালার ভিত্তিকে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। প্রথমে একমত না হলেও এখন ঐকমত্যের স্বার্থে দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির মধ্যে একজনকে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে আমরা একমত। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ সুনির্দিষ্ট করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিরোধীদলের সঙ্গে আলোচনা করার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে।

Top