দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে


প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ফেনী জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থান ভেঙে গেছে। এর ফলে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রবল বর্ষণে ভেসে গেছে হাজার হাজার পুকুর ও মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। সব মিলিয়ে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ভারতীয় পানি আগ্রাসনের ফলে গতবছর ২১ আগস্ট দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলা স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়। সেই দু:সহ স্মৃতি এখনো তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। স্মরণকালের ওই ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। তাতে অন্তত ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বন্যায় ওইসব জেলার হাজার হাজার মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গিয়েছিল। তলিয়ে গিয়েছিল কৃষকের ফসলি জমি। এবারও সেই ভয়াবহ বন্যার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে ফেনী, নেয়াখালি, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আরও কয়েকটি জেলার মানুষ।

বাংলাদেশে সাধারণত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রতি বছরই বন্যা দেখা দেয়। কিন্তু দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের মানুষ এর আগে কখনো এমন বন্যা দেখেনি। ফলে বন্যার সেই দুর্বিসহ স্মৃতি মনে হলে এখনো তারা আঁতকে উঠে। গতবছরের ভয়াবহ বন্যার পর ওই অঞ্চলে বন্যার্তদের পুর্নবাসন এখনো সম্পন্ন হয়নি। সরকারিভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণেরও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নদী দখলমুক্ত করা হয়নি, খাল খনন করা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করা হয়নি। এতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট। সাধারণ মানুষ এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এবারও টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় ঢলে যে ভাবে পানি বাড়ছে তাতে ফেনী, নোয়াখালি, কুমিল্লা এসব অঞ্চলের মানুল আবার বন্যার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ফেনীতে নৌকা না থাকায় তলিয়ে যাওয়া বাড়ি ঘর থেকে মানুষ ট্রাক্টরে করে অন্যত্র যাচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সারাদেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

ফেনী থেকে মো. ওমর ফারুক জানান, অতিবৃষ্টির ফলে ভারতের উজানের পানির ঢলে ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরামে প্রবাহমান মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বাঁধের ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ৩৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। সরেজমিনে দেখা যায়, ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় ফেনী বিলোনিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কসহ সংযোগ সড়কগুলো ডুবে গিয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তি ও ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক্টর ও পিকআপে গন্তব্যে ছুটছেন মানুষ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রি ও সাধারণ মানুষ।

এদিকে ভারি বৃষ্টির কারনে ফেনী পৌর শহর এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পুরো শহর এলাকায় কোমর সমান পানি উঠে গেলে এতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার জঙ্গলঘোনায় দুইটি, অলকায় তিনটি, শালধর এলাকায় একটি, ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় একটি ও ফুলগাজী দেড়পড়া এলাকার দুইটি স্থানে ভেঙেছে। এছাড়া কহুয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়ায় দুইটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি ও ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি স্থানে বাঁধ ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। গত দু’দিনে মোট নদীর বাঁধের ১৫টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এর মধ্য পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া,পশ্চিম অলকা, নোয়াপুর, সাতকুচিয়া, পূর্ব অলকা, পূর্ব সাহেব নগর, জঙ্গলঘোনা, পশ্চিম গদানগর, মধ্যম ধনীকুন্ডা, উত্তর ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, উত্তর মনিপুর, মধ্যম মনিপুর, ফুলগাজী সদরের দৌলতপুরসহ ৩৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। অনেকে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে। উত্তর মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুবকর ছিদ্দিক জানান, আমাদের বাড়ির প্রায় ৬০ টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। যাদের দোতলা ঘর আছে,অনেকে সেসব ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। পশ্চিম অলকার বাসিন্দা ছারোয়ার বলেন, গত বছরের ভয়াবহ বন্যার দকল এখনো কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবার বন্যার কবলে পড়েছি। ভারতের উজানের পানি প্রতিবছরই আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনে। আমরা চাই এর একটি স্থায়ী সমাধান করা হোক। এদিকে গতকাল দুই উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং চলমান অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। দুই উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে বলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে জানানো হয়। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, মুহুরী ও সিলোনীয়া নদীর বাঁধের ১১টি স্থানে ভাঙনের তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরা এসব বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি। নদীতে পানি এখনো বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতে পানি কিছুটা কমেছে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হলে নদীর পানি কমবে বাঁধ ভাঙনের শঙ্কাও কমবে।

নোয়াখালী থেকে এহসানুল আলম খসরু জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত চার দিনের টানা বর্ষণে নোয়াখালী জেলার সর্বত্র জনজীবন থমকে দাঁড়িয়েছে। পানিবন্দি মানুষ দুর্ভোগাক্রান্ত হয়ে এজেলাকে বন্যাদূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি প্রবল হচ্ছে। জেলার নয়টি উপজেলার সবকটিই অতিবর্ষণের পানি নিমজ্জিত। রিকশা চালক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীনতার আতঙ্কে মুষড়ে পড়েছে।

জেলার অধিকাংশ এলাকা,রাস্তা-ঘাট পানিমগ্ন এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চলমান পরীক্ষা ৯-১০ জুলাই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীর মঙ্গলবার রাতে এতথ্য নিশ্চিত করেন। নোয়াখালী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি অফিস,ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে অচলায়তন অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় সকলের মাঝে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজমান আছে। জলাবদ্ধতা ও বন্যার শঙ্কায় জেলার ১৮০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন জানান, টানা তিনদিনের বর্ষনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুমিল্লার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কখনও হালকা, কখনও ভারি বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনমজুর, ফুটপাতের হকার, রিকশাচালক, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ। আষাঢ় মাসের এই বৃষ্টিতে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এদিকে ভারী বৃষ্টি ভারতীয় ঢলের ফলে কুমিল্লার গোমতী নদীসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়ছে। এতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন স্থানের রাস্তাঘাট এতাটাই পানিমগ্ন হয়ে পড়েছে, তাতে চলাচল করাটা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। পানিতে তলিয়ে বিশেষ করে নিচু এলাকাগুলোতে পানিবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে এবং ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পানিবদ্ধতার কারণে শহরের নিচু এলাকার ঘঘরবাড়ি ও দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে, যা জনজীবনে ব্যাপক সমস্যা তৈরি করছে। ড্রেন উপচে পড়া নোংরা পানির সঙ্গে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। গত দুইদিনে কুমিল্লায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের এ প্রবণতা বৃহস্পতিবারেও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আবহাওয়া অফিস। গতকাল বুধবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানি সড়কের গর্ত ও খানাখন্দে জমে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় থেকে রাণীর বাজার সড়কের নজরুল এভিনিউ এলাকায়, বিসিক শিল্পনগরী, ঠাকুরপাড়া, অশোকতলা, ছায়াবিতান এলাকায় হাঁটু পানি জমেছে। কান্দিরপাড় সড়ক, জিলা স্কুল রোড, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সামনের সড়ক, রেইসকোর্স, ছাতিপট্টি, শুভপুর, ঝাউতলা, মুরাদপুর, চর্থা, ইপিজেড এলাকা, ছোটরা এলাকাগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। তিনদিনের বৃষ্টিতে নগরীর ধর্মপুরে ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রি শাখা ও তৎসংলগ্ন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

খুলনা ব্যুরো জানায়, গত দুদিনের টানা বৃষ্টিতে খুলনার রাস্তাঘাট, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ঘরের উঠান পর্যন্ত হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর কোথাও রিক্সা চলছে না, কোথাও আবার রিক্সা ভাড়া আকাশচুম্বী, তারপরও যাত্রীরা পৌঁছাচ্ছেন ভিজে গা আর ভেজা মন নিয়ে। সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে নগরীর বয়রা পুলিশ লাইন, আবু নাসের হাসপাতাল এলাকা, লবণচরা, টুটপাড়া, নতুন বাজারসহ অন্তত এক ডজন এলাকায়। যেখানে সড়কে হাঁটুপানি, সেখানে আবার চলছে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি, ফলে ভোগান্তি দ্বিগুণ। অথচ এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিতে ২০১৮ সালে ৮২৩ কোটি টাকার ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্প হাতে নেয় খুলনা সিটি করপোরেশন। সাত বছরে খরচ হয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে জলাবদ্ধতা কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। অনেক খাল এখনো দখলমুক্ত হয়নি, রাস্তার চেয়ে উঁচু নালা তৈরি হয়েছে, নালার মুখ বন্ধ। নাগরিকদের মুখে এখন একটাই কথা-খাল খুঁড়ে শুধু হয়রানি, সমাধান শূন্য। বৃদ্ধ নূর ইসলাম, যিনি বয়রা পুলিশ লাইনের পাশে চায়ের দোকান চালান, বললেন, যতবার বৃষ্টি হয়, ততবার ভেসে যাই। দোকান খুলেই লাভ হয় না। অন্যদিকে রিক্সাচালক জাহাঙ্গীর মিয়া হতাশ স্বরে জানান, ভাড়া হয় না, আয় নেই, পরিবার কেমনে চালাব? রূপসা নন্দনপুর এলাকার ব্যবসায়ী মো. মেহেবুব হাসান মামুন জানান, গত দুদিন ঘর থেকে বের হওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাড়ির সামনে রাস্তায় হাটু পানি। মাছের পুকুর তলিয়ে গেছে। এখন নদী, পুকুর, রাস্তা সবই যেন এক সমতায় চলেছে। আমনের বীজতলা পানির নিচে। পাইকগাছার. কয়রা, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া উপজেলার চিত্র আরও ভয়াবহ। হাজার হাজার চিংড়ি ঘের, সবজি ক্ষেত, আমন ধানের বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। কোটি টাকার ফসল ও মাছের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। পাইকগাছা উপজেলার কৃষক সামাদ গাজী কাঁপা গলায় বলেন, “তিন হাজার ফলের চারা পানির নিচে। ঘরের উঠানও তালিয়ে গেছে।

লক্ষ্মীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, লক্ষ্মীপুরে ২৪ ঘণ্টায় ১৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা এই মৌসুমে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টির রেকর্ড। লক্ষ্মীপুরের রামগতি- কমলনগরের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। গত দুই সাপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি ও মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। শহরের শমসেরাবাদ, জেবি রোড, কলেজ রোড, বাঞ্ছানগর, মজুপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পানি জমে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পৌরবাসী। রামগতি-কমলনগরের লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। দুই সাপ্তাহ ধরে টানা প্রচন্ড বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে দুই উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে নিচু এলাকাগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং অনেক রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে। জানা যায়, বৃষ্টির পানি ও মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা ও কমলনগর উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের অন্তত ২৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেড়িবাঁধ এবং শত শত বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দু-একদিনের মধ্যে এবারো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

রাঙামাটি থেকে শাহ আলম জানান, গত সোমবার থেকে পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে চলছে টানা বর্ষণ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের আশঙ্কা। পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসের খবর পাওয়া গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণ আজ বুধবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত অব্যাহত আছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে রাঙ্গামাটি পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ থেকে মোঃ মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, গত দুদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে নির্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে শাক সবজির ক্ষতি হয়েছে। রামপালের কৃষক কবির হোসেন জানায় ২ গন্ডা জমিতে লালশাক ছিল। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আতিরিক্ত উপ পরিচালক ড. আনোয়ারুর ইসলাম জানান মুন্সীগঞ্জে উচু জমিতে শাক সবজি চাষ হয়। বর্তমানে জেলায় প্রায় ৮০০ একর জমিতে শাক সবজি রয়েছে। গত দুদিনের বৃষ্টিতে লাল শাক , মূলা শাক , ঢেরস ও করলার কিছু ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পানি জমতে পারেনি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জমিতে পানি জমলে শাক সবজির আরও ব্যাপক ক্ষতি হবে।

সাতক্ষীরা থেকে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। আর এই পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৪৬ হেক্টর ফসলি জমি। এরমধ্যে আউশ ধানের জমি রয়েছে ২ হাজার ৩৪৮ হেক্টর, আমন ধানের বীজতলা ৫৩২ হেক্টর। আর শাক সবজির ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর জমি। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি) এর উপ-পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করে বলেন, পানিতে নিমজ্জিত মোট জমির পরিমাণ জানা গেলেও টাকার পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। কয়েকদিন পরে টাকার পরিমাণ জানা যাবে। এদিকে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবিরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার কাটিয়া, মনজিতপুর, রাজারবাগান,বদ্দীপুর কলোনী, মাছখোলা, মধু মোল্লারডাঙ্গী,কামাননগর,ইটাগাছা, কুখরালীসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। হাজারেরও অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া, সদর উপজেলার ভোমরা বন্দর এলাকাসহ অধিকাংশ জায়গায় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমতে দেখা গেছে। ভোমরার রাশিদা বেগম মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। মাঠ ঘাট পানিতে তলিয়ে আছে। শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। পানিবন্দী এসম্ত পরিবারগুলো খাবার পানি, রান্নাবান্না ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়েছেন।

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, টানা বৃষ্টিতে ফরিদপুরের রাস্তা ঘাট বিপর্যস্ত রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতা। রাস্তার মধ্যেই খাল। যানবাহনের গতি কমে যায় যানজট সৃষ্টি হয়। গত ৬ জুলাই থেকে ৮ জুলাই টানা বৃষ্টিপাতে এমন সমস্যার তৈরি হয়েছে। গভীর নি¤œচাপের ফলে রোববার ভোর থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়। সোমবার সন্ধ্যার পর বৃষ্টির তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। এতে ফরিদপুর শহর উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, দেখা দিলে শহরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বহু যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে অনেক গাড়ি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থেকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। ফরিদপুর ভাঙ্গা মহাসড়কের গাড়ি চালক মোঃ আরমান ঢালী ইনকিলাব কে বলেন, ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা এবং ফরিদপুর থেকে রাজবাড়ী মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় খানাখন্দকেভরা সেখানে পানি জমলে পুরো রাস্তাই ছোট ছোট পুকুরে রূপ নেয়। এতে দেখে শুনে গাড়ি চালাতেও গাড়ির গতি কমে যায়। সৃষ্টি হয় জনদুর্ভো।

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টিতে ভাসছে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ জেলার ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর আগে ২০২১ সালের ২৭ জুলাই পটুয়াখালীতে সর্বোচ্চ ২৫১.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এই অতিভারী বৃষ্টিপাতে পটুয়াখালী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ছোট চৌরাস্তা, তিতাস মোড়, এসডিও রোড, সবুজবাগ, নতুন বাজার, জুবলী স্কুল রোড, টিবি ক্লিনিক, পুরান বাজারসহ বেশ কিছু নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো বিটাইপ এলাকা, এলজিইডি কার্যালয়ের সামনে, এখনো জলাবদ্ধতায় আটকে আছে। তিতাস মোড় এলাকার রাব্বি বলেন, টানা বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো পানির নিচে চলে গেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ময়লা আবর্জনা থাকায় সব কিছু আটকে পানি যায় না। চরপাড়া এলাকার নোমান মিঠু বলেন, টানা বৃষ্টির পাশাপাশি আমাদের কারণে ড্রেনে ময়লা আবর্জনা সরাসরি ফালানোয় ড্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পানি দ্রুত চলাচল করছে না, বৃষ্টির পানি শহরে থেকে যায় এই কারণেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এদিকে শুধু শহরেই নয়, জেলার গ্রামাঞ্চলেও দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। সদর উপজেলার বড় বিঘাই এলাকার মাছচাষি মুছা সিকদার জানান, আমার মাছের ঘের আর পুকুর পানিতে ছুঁইছুঁই অবস্থা। বৃষ্টিতে নাজেহাল অবস্থা, গ্রামের রাস্তা ঘাট ডুবে আছে।

সাতক্ষীরার আশাশুনি থেকে জি এম মুজিবুর রহমান জানান, আশাশুনি উপজেলায় ৮ দিনের টানা মুষলধারায় বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জনবসতি, মৎস্য ঘের, সবজি ক্ষেত জলমগ্ন ও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাঁধ হুমকীর মুখে পড়েছে। উপজেলার ১১ ইউনিয়নে নিচু এলাকার বসতবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘরে পানি উঠেছে। চলাচলের রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় যাতয়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। নাগরিক জীবন এখন মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছেছে। উপজেলার বুধহাটা, কুল্যা, দরগাহপুর, কাদাকাটি, আশাশুনি সদর, শ্রীউলা, খাজরা, আনুলিয়া, প্রতাপনগর, বড়দল ও শোভনালী ইউনিয়নের অধিকাংশ নি¤œাঞ্চলের ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মাছের ঘেরগুলোর বাঁধ বহু স্থানে তলিয়ে গেছে, কিছু কিছু এলাকায় ডুবুডুবু করছে। ঘের মালিকরা ঘের রক্ষা করতে বাঁধের উপর দিয়ে নেটজাল টানিয়ে শেষ রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাগেরহাট থেকে এস এম সামছুর রহমান জানান, টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে জেলা শহরের সড়ক থেকে গলি, বাড়ি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হাঁটুপানি জমেছে শহরের অধিকাংশ এলাকা। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে সবজি ক্ষেত ও আমন বীজতলা। বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের খানজাহান আলী রোড, রেল রোড, সাধনার মোড়, শালতলা, পিটিআই মোড়, খারদার স্কুল রোড, জেলা হাসপাতাল মোড়, জেলা ডাকঘরের সামনে, বাসাবাটি, মিঠাপুকুরপাড় মোড়, পৌরসভার পাশের এলাকা, জাহানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়ক, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পিছনসহ অনেক জায়গায় হাঁটুপানি জমে আছে। এছাড়া, অনেক দোকান ও বাসাবাড়িতে পানি উঠে গেছে। রাস্তা-ঘাটে পানি জমে থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। শুধু বাগেরহাট জেলা সদর নয়। নয়টি উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে জানা গেছে। বিশেষ করে উপকূলে উপজেলা মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল মংলার হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে ছোট ছোট মাছের ঘের ও পুকুর। বাগেরহাট শহরের চাল ব্যবসায়ী ঋষিকেশ পাল বলেন, বৃষ্টিতে তার দোকানে গত দুদিন ধরে পানি উঠে গেছে। এতে তার দোকানে অনেক চাল নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি চাল রক্ষার জন্য তিনি আপ্রাণ যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে আমানত উল্যাহ জানান, গত বছরের ন্যায় এবারো লক্ষ্মীপুরের রামগতি- কমলনগরের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। গত দুই সাপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি ও মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় অঞ্চল রামগতি-কমলনগরের লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। দুই সাপ্তাহ ধরে টানা প্রচন্ড বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে দুই উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে নিচু এলাকাগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং অনেক রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে।

বরগুনা থেকে জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা জানান, একটানা তিন সপ্তাহ অব্যাহত প্রবল বৃষ্টিপাতে বরগুনার পৌর শহর ও গ্রামীণ জনপদের নীচু এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টির পাশাপাশি জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক, খেটে খাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষ ও ফুটপাতে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বরগুনা পৌর শহরসহ বেশ কয়েকটি নি¤œ অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে একটানা বিরামহীন বৃষ্টির কারণে পানি জমে থাকায় আবাদী জমি, রাস্তাঘাট ও বাজারে চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের কোথাও কোথাও ড্রেন উপচে পানি রাস্তায় উঠে এসেছে। তলিয়ে রয়েছে আবাদি জমি। নদ-নদী, খাল-বিল ও পুকুরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় মাছের ঘেরসহ, সবজি ক্ষেতের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।ৎএছাড়া জেলার চারটি পৌরসভা ও ৪২টি ইউনিয়নের অধিকাংশ নীচু এলাকা ও বসত বাড়ির সামনে হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। বরগুনা সদরের বদরখালী, গৌরীচন্না, আয়লা পাতাকাটা, বুড়িরচর, এম বালিয়াতলী, নলটোনা, পাথরঘাটার সদর ইউনিয়ন, কালমেঘা, কাকচিড়া, রায়হানপুর, বেতাগীর বুড়ামজুমদার, হোসনাবাদ, আমতলী, চাওড়া, হলদিয়া, আঠারগাছিয়া, কুকুয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলে। অতিবৃষ্টিতে নীচু জমিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় বসত ঘরের চারপাশ ও ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, গফরগাঁও উপজেলায় গত মঙ্গলবার ও বুধবার দিনভর লাগাতার বৃষ্টির ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এতে করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর দোকানে বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গফরগাঁও বাজারের বুধিয়া মার্কেটের মনোহারি দোকানের মালিক মো. রোমান জানান, ভাই, গত দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি অনেক কমে গেছে। লোকজন বৃষ্টির জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছে না।”রাস্তাঘাটে মানুষহীন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। রিক্সা, অটোরিক্সাহ নানান ধরনের যানবাহনের চালকদের দৈনিক রোজগার আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এতে করে তাদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।অন্যদিকে লাগাতার বৃষ্টির ফলে আমন ধানের বীজতলায় পানির কারণে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে শাকসবজিসহ নানান ধরনের সবজির দামও বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন মৎস্য খামার থেকে পোনা মাছ ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা।স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাসুদ পারভেজ জানান, লাগাতার বৃষ্টির জন্য সরকারি উন্নয়নমূলক সড়ককাজসহ নানান মুখী কাজে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মনিরামপুর পৌরবাসীর প্রধান সমস্যা এখন জলাবদ্ধতা। ভারী বৃষ্টিপাতে পানি নামার ব্যবস্থা নেই। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মূলত সড়কে জমে থাকে পানি। এতে দূর্ভোগে পড়তে হয় পথচারী, ব্যবসায়ী ও যানবাহনের আরোহীদের। গতকাল বুধবার দুপুরে এমনই চিত্র দেখা যায় পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায়। জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ১০ নভেম্বর মনিরামপুর উপজেলার ১২টি গ্রাম নিয়ে মনিরামপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করা হয়। তা ২০০৬ সালের ৩১ জুলাই ‘খ’ শ্রেণিতে এবং ২০১৯ সালে ৪ মে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। এখাতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। প্রথম শ্রেণির পৌরসভাতে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে প্রায়শই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, যা নাগরিক জীবনে চরম ভোগান্তি নিয়ে আসে। পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও তা কোথাও ড্রেনের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম, আবার কোথাও সঠিক নকশার অভাব। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথ বন্ধ হয়ে যায়, যা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার পাশের বেশির ভাগ ড্রেন দিয়ে পানি নামছে না। কিছু কিছু সড়কের কার্পেটিং উঠে বড়বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনদূর্ভোগ বাড়ছে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। পাড়া, মহলার রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি পানিতে এশাকার হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আঞ্চলিক অনেক সড়কে চলাচলার সময় যানবাহনের চাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। পায়ের জুতা হাতে নিয়ে অনেককে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়। আবার অনেককে রাস্তার নোংরা পানি এড়াতে ভ্যান যোগে পার হতে দেখা যায়। বৃষ্টির কারণে অনেক রাস্তার ওপর দিয়ে ¯্রােত বইতে দেখা যায়। পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা না থাকায় ড্রেনে পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

মোংলা থেকে মনিরুল ইসলাম দুলু জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় মোংলার নি¤œাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। গত ৭ থেকে ৯ জুলাই দুপুর পর্যন্ত ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, শহরের বহু এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। সব নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে, লঘুচাপের প্রভাবে উত্তাল বঙ্গোপসাগরের কারণে সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, সুপতি, দুবলা, শরণখোলা ও মোংলা এলাকার খালে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে শত শত মাছ ধরা ট্রলার। মোংলা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

Top