মুহাররমের দশ তারিখ বা আশুরার দিন
আলোকিত বার্তা :উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহেলী যুগে কুরাইশরা আশুরার দিন রোযা রাখত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ দিনে রোযা রাখতেন।মুহাররমের দশ তারিখকে বলা হয় ‘ইয়াওমু আশুরা’ বা আশুরার দিন। হাদিস শরীফে এ দিনের অনেক গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। (কারণ কুরাইশদের এই অভ্যাস মূলত শরীয়তসম্মত ছিল) পরবর্তীতে যখন তিনি মদীনায় এলেন (তখনও) নিজে রোযা রাখতেন, অন্যদেরকেও রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন। এরপর যখন রমযানের রোযা ফরয হলো তখন আশুরার (রোযার ব্যাপারে আগের মতো গুরুত্ব দেয়া) ছেড়ে দিলেন। তখন যার ইচ্ছা এ দিনে রোযা রাখত, যার ইচ্ছা রাখত না। (সহিহ বুখারী- ২০০২)
এখান থেকে জানা গেল জাহেলী যুগেও আশুরার দিনের গুরুত্ব ছিল। এ দিনে মানুষ রোযা রাখত। এক বর্ণনায় আছে, এ দিনে তারা কা‘বা শরীফের গায়ে গিলাফ জড়াতো। (সহিহ বুখারী-১৫৯২) জানা গেল, নবী (সা.) যখন মক্কায় ছিলেন তখনও এই দিন রোযা রাখতেন। এরপর যখন মদীনায় হিজরত করলেন তখন নিজেও রোযা রাখতেন, অন্যদেরকেও রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন। তবে রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পর আশুরার রোযা নফল হিসেবে নির্ধারিত হয়। (দ্রষ্টব্য : শরহু মুসলিম, ইমাম নববী-৮/৪) নবী (সা.) মদীনায় হিজরত করার আগে সেখানের লোকেরাও এই দিনে রোযা রাখত।
সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় এসে দেখলেন, ইহুদিরা আশুরার দিন রোযা রাখে। নবীজী তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এ দিন রোযা রাখ কেন? তারা বলল, এটি একটি মহান দিন। এই দিনে আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে (ফেরাউনের কবল থেকে) মুক্তি দিয়েছেন। আর ফেরাউনকে তার দলবলসহ (দরিয়ায়) ডুবিয়ে দিয়েছেন। তাই মূসা (আ.) এইদিন শুকরিয়াস্বরূপ রোযা রাখতেন। সেজন্য আমরাও রোযা রাখি।
একথা শুনে নবী (সা.) বললেন, মূসা (আ.)-এর ক্ষেত্রে তো আমরা তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার এবং আমরা তাঁর বেশি নিকটবর্তী। এরপর নবী (সা.) নিজেও রোযা রাখলেন, অন্যদেরকেও রোযা রাখতে বললেন। [নবীজী তো আগে থেকেই রোযা রাখতেন। মদীনায় এসে সাহাবীদেরকেও রোযা রাখতে বলেছেন। (দ্র. লাতাইফুল মাআরিফ, পৃ.-১২৩)] (সহিহ মুসলিম-১১৩০)
উপরিউক্ত বর্ণনাগুলো থেকে জানা যায়Ñ ক. প্রাচীন যুগ থেকেই এ দিনের অনেক গুরুত্ব ছিল এবং ইসলামও সেই গুরুত্ব বজায় রেখেছে। খ. এই দিনকে নবী (সা.) ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। গ. এই দিনে আল্লাহ তা‘আলা অনেক মানুষকে ক্ষমা করেছেন এবং তাদের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেক মানুষের তাওবা কবুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ঘ. এই দিনে ভয়ঙ্কর জালিমের কবল থেকে আল্লাহ তা‘আলা হযরত মূসা (আ.) ও তাঁর উম্মতকে মুক্তি দিয়েছেন এবং সেই জালিমকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে শাস্তি দিয়েছেন।
ঙ. নবী হযরত মূসা (আ.) এই দিনকে কৃতজ্ঞতা আদায়ের দিন হিসাবে গ্রহণ করেছেন এবং রোযা পালনের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। চ. আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)ও মাক্কী জীবনে এই দিন রোযা রেখেছেন এবং মাদানী জীবনে নিজে যেমন রোযা রেখেছেন, অন্যদেরকেও রোযা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া রমযানের রোযা ফরয হওয়ার আগে ইসলামে এই দিনের রোযা ফরয ছিল। রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পর এই দিনের রোযা নফল ও মুস্তাহাব হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। (আততামহীদ, ইবনে আবদুল বার-৭/২০৪-২০৭)