শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে


মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সামাজিক ব্যবসা (সোশ্যাল বিজনেস) শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। পৃথিবীতে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার একমাত্র সঠিক পথ হলো সামাজিক ব্যবসা। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। শুক্রবার সাভারের জিরাবো সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনব্যাপী ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা সর্বোত্তম পন্থা’-এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এবারের সোশ্যাল বিজনেস ডে উদযাপন করা হচ্ছে। এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ৩৮টি দেশ থেকে এক হাজার ৪০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির অনারারি প্রেসিডেন্ট থমাস বাক। এছাড়া বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস, বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সেরাগেলদিন, গ্রামীণ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল হাসান, জাপানের ইউগলিনা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মিটসুরু ইজমো, ইউনূস সেন্টারের রিলেশনস ম্যানেজার জিনাত ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত বছর আয়োজন করেও সরকারের বাধার কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।

অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস আরও বলেন, আমরা সোশ্যাল বিজনেসের মাধ্যমে ‘থ্রি জিরো বা তিন শূন্যের পৃথিবী’ বাস্তবায়ন করতে চাই। যে পৃথিবীতে দরিদ্র থাকবে না। পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণের হার হবে শূন্য এবং বেকারত্ব থাকবে না। চাকরির খোঁজ না করে ব্যবসায় মনোযোগ দিতে তরুণদের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, চাকরি প্রত্যাশী নয়, চাকরি দাতা হতে হবে। প্রথম জীবনের প্রথম থেকেই চিন্তা করতে হবে উদ্যোক্তা হওয়ার। স্বপ্ন দেখতে হবে। না হলে কিছুই হবে না। মিটসুরু ইজমোর উদাহরণ দিয়ে ড. ইউনূস আরও বলেন, একজন তরুণ, যার কোনো পরিষ্কার লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু বর্তমানে তিনি শুধু নিজেকে নয়, জাপানের মতো একটি পরিপক্ব অর্থনীতিকেও পরিবর্তনের পথে নিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছেন। এটাই ব্যবসার শক্তি।

ড. ইউনূস বলেন, ভুল পথে চলছে বিশ্ব। মানুষে মানুষে হিংসাবিদ্বেষ বাড়ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়ে গেল। এরপর বিশ্ব দেখল-ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কবে শেষ হবে-তা কেউ জানে না। এসব যুদ্ধ পৃথিবীতে অশান্তি ডেকে আনছে। তিনি বলেন, আমরা যখন সামাজিক ব্যবসা দিবসে একত্র হই, সেটা পরিবারের মিলনমেলায় রূপ নেয়। সামাজিক ব্যবসা দিবসকে আমরা সবসময় ব্যাটারি রিচার্জ করার উপলক্ষ্য হিসাবে দেখি। কাজ করতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে মনে হয় আমাদের শক্তি কমে যাচ্ছে। তখন এমন একটি মিলনমেলা আমাদের সবাইকে আবার উদ্দীপ্ত করে। একজন আরেকজনকে দেখে, আলিঙ্গন করে, চোখে চোখ রেখে, আমরা আবার শক্তি সঞ্চার করি।

জাপানের ইউগলিনা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মিটসুরু ইজমো বলেন, ১১ বছর সামাজিক ব্যবসা করছি। নিজেকে পরিবর্তন করেছি। আর একটি বার্তা দেওয়ার জন্য জাপান থেকে এসেছি-সামাজিক বাণিজ্য বিশ্বকে বদলে দিতে পারে। নিজের শক্তিকে ব্যবহার করে সুন্দর পৃথিবীর গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত সবাইকে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসহ বিবিধ খাতে বৈষম্য ও সীমাবদ্ধতা দূর করে একটি টেকসই, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক মূল্যবোধের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এ আয়োজন। এটি জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গির এক অনন্য মিলনমেলা। এতে পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ এবং আটটি ব্রেকআউট সেশন রয়েছে। ৩৮টি দেশ থেকে এক হাজার ৪০০ জন লোক অংশ নিয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শতাধিক বক্তা, সামাজিক ব্যবসা বিষয়ে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। এর মধ্যে রয়েছেন- প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণবিষয়ক সহকারী প্রফেসর সাইদুর রহমান, মেডট্রনিকের সাবেক সিইও ওমর ইশরাক, বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. ইসমাইল সেরাজেল্ডিন, নরওয়ের সাবেক পরিবেশ ও জলবায়ুমন্ত্রী এরিক সোলহেইম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, এ আয়োজনের ধারাবাহিকতায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ২৯ জুন অনুষ্ঠিত হবে ‘একাডেমিয়া ডায়লগ’। সেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের অংশগ্রহণে সমাজের সামগ্রিক প্রসারে সামাজিক ব্যবসার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হবে।

Top