কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা


মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, সেবা কার্যক্রম সচল রাখাসহ জাতীয় স্বার্থে এনবিআরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ দপ্তরে অবস্থান করে কাজে মনোনিবেশের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কেউ বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ, বিলম্বে অফিসে উপস্থিত হলে তার বিরুদ্ধে সরকারি বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পৃথকভাবে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়।এদিকে সরকারের এ নির্দেশনাকে প্রত্যাখ্যান করে আজ থেকে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন অব্যাহত এবং সারা দেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তবে, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতাবহির্ভূত থাকবে বলে ঐক্য পরিষদ তাদের বিবৃতিতে বলেছে।

শুক্রবার পাঠানো এনবিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, চলমান আন্দোলনের কারণে এনবিআরের মাঠপর্যায়ের দপ্তরগুলোতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য বিধিবিধান অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে কর্মে অনুপস্থিত, বিনা অনুমতিতে অফিস ত্যাগ এবং বিলম্বে অফিসে উপস্থিতি অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সেখানে আরও বলা হয়, দাপ্তরিক শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা এবং অর্থবছরের শেষ তিনটি কর্ম দিবসে কার্যক্রম সচল রাখতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায় আরও গতিশীল করতে কাস্টমস হাউজ, কর কমিশনারেট এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সব কমিশনারগণকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সব দপ্তরে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করে সেবা প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া অফিস চলাকালীন দাপ্তরিক বা জরুরি প্রয়োজনে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্ব-স্ব দপ্তর প্রধানের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রক্ষিত ‘অফিস ত্যাগের রেজিস্টার’-এ এন্ট্রি করে অফিস ত্যাগ করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের চলমান আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয় অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিনের সভাপতিত্বে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। সেখানে তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কমপ্লিট শাটডাউন এবং মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার। অন্য দুটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে এনবিআর কর্তৃক ইস্যুকৃত কর্মকর্তাদের দুটি সাম্প্রতিক বদলির আদেশ পুনঃবিবেচনা এবং রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধনের বিষয়টি আলোচনার বৈঠকে সমাধান করা। ওই বৈঠকে অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৬ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।

অর্থ বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধনের বিষয়ে আগামী ১ জুলাই মঙ্গলবার ৪টায় পুনরায় বৈঠক করা হবে। সেখানে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ, রাজস্ব বোর্ড সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্যরা অংশগ্রহণ করবেন।

সেখানে আরও বলা হয়, সরকার প্রত্যাশা করে ওই বৈঠকের মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে ৩১ জুলাই, ২০২৫-এর মধ্যে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা সম্ভব হবে।এদিকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় কোনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যে কারণে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। সেখানে আরও বলা হয়, দেশ ও রাজস্বের স্বার্থে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানাতে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে ঐক্য পরিষদ প্রস্তুত রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে এনবিআর সংস্কার বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

গত ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করা হয়। এরপর থেকেই আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, গঠন করা হয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ঐক্য পরিষদের আহ্বানে মাসে কলমবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মে সরকার ঘোষণা দেয়, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এনবিআর নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিত করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। পরবর্তী সময়ে অধ্যাদেশ সংশোধনে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের রাখা হয় বলে অভিযোগ করে ঐক্য পরিষদ। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবারও কলমবিরতি, কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

Top