আল্লাহ সমগ্র জাহানের প্রতিপালক
আলোকিত বার্তা :মানুষ ছাড়াও আরো শত সহস্র প্রজাতি ছড়িয়ে আছে আমাদের চারপাশে। অনেক কিছু আমরা দেখি। খোলা চোখে দেখি। প্রাণীজগৎ নিয়ে যাদের গবেষণা, তারা যান্ত্রিক চোখে দেখেন আরো অনেক কিছু। আল্লাহ তা‘আলা সেসব প্রাণীরও রব, প্রতিপালক। সেগুলোকে তিনি সৃষ্টি করেন। মানুষের মতোই সেসব প্রাণীরও খাদ্যের প্রয়োজন হয়। মানুষের মতো ওসবের জীবনেও রয়েছে নানা ধাপÑ বাচ্চা থেকে বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত। ওদের কোনোটা থাকে মানুষের অধীন হয়ে। সেসবকে আমরা গৃহপালিত পশু বা পাখি বলে থাকি।গৃহপালিত পশুপাখির খাদ্য আবাস চিকিৎসাÑ এসব বাহ্যত মানুষই ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি প্রাণীÑ হাস-মুরগি আর গরু-ছাগলের বাইরে রয়ে গেছে বিশাল প্রাণীজগৎ। সেসব মানুষের অধীন নয়। ওগুলোর বেঁচে থাকার কোনো উপকরণের ব্যবস্থা করার দায়িত্বও মানুষের নয়। কথা হলোÑ এ ব্যবস্থাপনা কার দায়িত্বে? কার কাঁধে অর্পিত প্রাণীকুলের জীবিকা সরবরাহের দায়িত্ব? কে নিয়েছেন আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ থেকে শুরু করে তুচ্ছ কীটপতঙ্গ পর্যন্ত সব প্রাণীর সব প্রয়োজন মেটানোর ভার? এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেইÑ মহান আল্লাহ তা‘আলাই এসবের ব্যবস্থা করে থাকেন। তিনি একাই করেন।
জগতের পরিচালনা, জগতের সকলের এবং সবকিছুর প্রতিপালনে তাঁর কোনো শরীক নেই, যেমন শরীক নেই তাঁর মাবুদ হওয়ার ক্ষেত্রেও। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর ঘোষণা লক্ষ্য করুনÑ ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি সকলের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্পর্কে অবহিত।’ (সূরা হূদ-৬)আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, জগতে কত প্রজাতির প্রাণী রয়েছে? কোন্ প্রজাতির কত শত-সহস্র সদস্য রয়েছে? স্বাভাবিক কথা, যিনি রব ও প্রতিপালক, যিনি সৃষ্টি করেন, যিনি সৃষ্টির পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যখন যা প্রয়োজন হয়, সবকিছু সরবরাহ করেন, তিনিই তো জানবেন। শুধুই জানেন, এমনও নয়। বরং সবকিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। মানুষ ও অন্য সব জীবÑ প্রতিটি প্রজাতির সদস্য কত হবে, কার জীবন কত দিনের হবে, জন্ম-মৃত্যু কার কবে হবেÑ এর জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণই এককভাবে তাঁর হাতে। তিনিই লিখে দিয়েছেন সবকিছু : সবকিছুই এক সুস্পষ্ট কিতাবে রয়েছে। [সূরা হূদ (১১)-৬]
মানুষ বলি আর পশুপাখি-কীটপতঙ্গ, সবই তো প্রাণী। এ প্রাণীকুলের বাইরে আরো যত জগৎ, আরো যত বিচিত্র সৃষ্টি, আল্লাহ তা‘আলা সেসবেরও প্রতিপালক। আর কেবল খাদ্যই নয়, বরং জীবনের যত প্রয়োজন, সবকিছুরই ব্যবস্থাপক তিনি, একমাত্রই তিনি। তিনি যেমন রিযিকের ব্যবস্থা করেন, তিনি তেমন সুস্থতাও দান করেন। বিপদাপদে তিনিই সাহায্য করেন। ধনসম্পদ বিদ্যাবুদ্ধি প্রভাব-প্রতিপত্তি যশখ্যাতিÑ সবকিছু তিনিই দিয়ে থাকেন। পথহারা মানুষকে তিনিই পথ দেখিয়ে থাকেন।তাঁর এ প্রতিপালন যে কত বৈচিত্র্যময়, এর কিছুটা নমুনা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে। কুরআনের এ বর্ণনাও আমাদেরকে কল্যাণের পথ দেখায়। আবার কল্যাণের পথ দেখানো, সত্যের পথে পরিচালনাÑ এও তো রবুবিয়্যাতেরই অংশ। ‘রব্বুল আলামীন’-এর পরিচয় নবী মূসা আলাইহিস সালাম তুলে ধরেছিলেন ফেরাউনের সামনে। ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করে বসেছিল। তার কথা ছিলÑ ‘আমি তোমাদের সবচেয়ে বড় রব!’ (সূরা নাযিআত-২৪)
ফেরাউন ছিল প্রতাপশালী বাদশাহ। জ্যোতিষীদের কথায় বনী ইসরাইলের অসংখ্য নিষ্পাপ ছেলেসন্তানকে সে হত্যা করেছিল। তাকে ঠেকায় কে? মূসা আলাইহিস সালাম যখন তাকে ঈমানের দাওয়াত দিলেন, দম্ভভরে সে বলেছিল : ‘তুমি যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদরূপে গ্রহণ করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাকে জেলে ঢুকাব!’ (সূরা শুআরা-২৯) ফেরাউনের সঙ্গে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কথোপকথনের বর্ণনা পবিত্র কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই উল্লেখ করেছেন। ‘রব্বুল আলামীন’-এর পক্ষ থেকে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গেলে ফেরাউন তাঁকে বললÑ ‘রব্বুল আলামীন আবার কী?’ (সূরা শুআরা-২৩)
মূসা আলাইহিস সালাম উত্তর দিলেনÑ আকাশসমূহ পৃথিবী আর এ দু’য়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে সবকিছুর রব ও প্রতিপালক যিনি। এরপর বললেনÑ তিনি তোমাদেরও রব, তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও রব। শেষে বললেনÑ তিনি পূর্ব-পশ্চিম আর এ দু’য়ের মাঝে যত কিছু আছে, সবকিছুর রব। জগতের কী আর বাকি থাকল? আল্লাহ তা‘আলার রবুবিয়্যাত স্থান-কাল-পাত্রÑ সব বিবেচনাতেই সর্বব্যাপী। আকাশ-জমিন সবকিছুর তিনি রব। তিনি এ কালেরও রব, অতীত কালেরও রব। ভবিষ্যতেরও তিনিই রব। পূর্ব-পশ্চিম আর আকাশ-জমিনের মধ্যকার অস্তিত্বশীল যত বস্তু, তা নিষ্প্রাণ জড় পদার্থ হোক, কিংবা কোনো প্রাণী, তিনি সবকিছুরই রব।