ইসি এনসিপির জন্য ‘নরম’ অন্যান্য দলগুলোয় ‘কঠোর’‘নিবন্ধন’ - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসি এনসিপির জন্য ‘নরম’ অন্যান্য দলগুলোয় ‘কঠোর’‘নিবন্ধন’


মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: জামায়াতকে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা এবং নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ছাপাতে বিজি প্রেসে চিঠি পাঠানো হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নিবন্ধন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।কিন্তু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা অন্যান্য দলগুলোর বিষয়ে ‘কঠোর আইনকানুন’ দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইসিতে আবেদন করা কয়েকটি দল। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেন, নিবন্ধনের জন্য কাগজপত্র জমা নেয়ার সময়ও নানা ধরনের কাগজপত্র চাওয়া হয়। অথচ এনসিপিকে অন্যদের মতো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। অন্যান্য দলগুলোর জন্য সভা-মিটিংয়ে ডাকা হয়নি। অথচ এনসিপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে এনসিপি। ইসির কাছে স্বজনপ্রীতি নয়, রোজার আগে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজনেই দ্রুত নিবন্ধন পেতে চাই। নিবন্ধনে সমস্যা হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলের নেতা জানান, তারা দ্রুত নিবন্ধন চান। কিন্তু ইসির কর্মকর্তাদের আচরণে মনে হচ্ছে তারা যেন আমাদের ভুল দেখার জন্য বসে রয়েছেন। জমির দলিলের মতো আমাদের কাগজে ভুল ধরছেন। অথচ এনসিপির ব্যাপারে তারা উদার।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিবন্ধন আবেদনকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা এ যাবৎ কালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি হতে পারে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও শহরে গড়ে ওঠেছে রাজনৈতিক দল। তবে এসব রাজনৈতিক দলের অনেকেই নিবন্ধন আবেদন জমা দেয়নি। সর্বশেষ নিবন্ধনের আবেদন জমা দেয়া রাজনৈতিক দলের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৭টি। তবে অনেকেই নির্বাচন কমিশনের শর্তপূরণ করে নিবন্ধন জমা দিতে পারেননি। তাদের দাবি এতকম সময়ের মধ্যে কখনোই সব শর্তপূরণ করা সম্ভব না। নির্বাচন কমিশনের এই আইন সহজ না হলে অনেকে নিবন্ধন পাবে না এটা সকলেই জানে। তবে এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে নির্বাচন কমিশনের কম-বেশি প্রাধান্যমূলক আচরণের শঙ্কা রয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেবল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই কমিশনকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে এবং দলীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করে কার্যালয় ঘেরাও করেছিল। তাদের নেতারা তখন থেকে বলে আসছে এই নির্বাচন কমিশনকে আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলা যাচ্ছে না। এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কারণ তারা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছে না, কোনো দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চাচ্ছে। তবে নিবন্ধনকারী নতুন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছে এগুলো অভিনয় হচ্ছে। এনসিপি যে প্রাধান্য পাচ্ছে তা অন্য কেউ পাচ্ছে না। সেখানকার সচিবরা তাদের ভয়ে থাকে কারণ তাদের একটা ফোনে অনেক সচিবের পরিবর্তন হতে পারে। ফলে তারা এই ভয়টাকে জিইয়ে রেখে তাদের কাজ সেড়ে ফেলছে। নিবন্ধন জমা দেয়ার আগেও তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে দুইবার দেখা করেছে। প্রথম ধাপে নিবন্ধনের জন্য ১৪টি দল দলীয় প্যাডে আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করে দেয়া হয় এবং তাদের নিয়মানুযায়ী সংশোধনের জন্য বলা হয়। তবে তাদের মধ্যে কেউ সাক্ষাৎ করে আলোচনা করতে চাইলেও সময় দেয়া হয়নি। ফলে এই কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে পারেও বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টির চেয়ারম্যান মো. জয়নুল আবেদিন জমিদার বলেন, আমরা প্রথমে দলীয় প্যাডে আবেদন দিয়েছিলাম পরে কমিশন তা নামঞ্জুর করে আমাদের ডেকেছিল। আমরা গঠনতন্ত্র নিয়ে কাজ করছি এবং জেলা-উপজেলার কমিটি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের মতো যারা বিভিন্ন শর্তপূরণ না করে যদি নিবন্ধন পায় সেখানে আমরা না পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিব। এনসিপি আমাদের মতোই রাজনৈতিক দল তাদের যেভাবে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে অন্যদলগুলোকে দেয়া হচ্ছে না। শর্তপূরণ না করে যদি তারা নিবন্ধন পায় তাহলে আমরা আমাদের পার্টির নিবন্ধনের জন্য মামলা করব। অনেকেই তো মামলা করে নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কোনো পক্ষপাতিত্ব করছে কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের দলের কার্যালয় ঢাকায় নয় ফলে আমরা চাইলেই যখন তখন কমিশনারের সাথে দেখা করতে পারি না। এনসিপির কার্যালয় ঢাকায় তারা নিবন্ধন জমা দেয়ার আগেও দেখা করেছে কিন্তু অন্য কোনো দলকে এ সুযোগ দেয়া হয়নি। এখানে তাদের লোকবল থাকতে পারে যারা তাদের সহায়তা করছে কিন্তু আমাদের মতো নতুন দলের তা নেই।

জানতে চাইলে গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দিতে গিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে নিরপেক্ষতা আশা করেছিলাম। কিন্তু সেটা পাইনি নিবন্ধনেও পাবো বলে মনে হচ্ছে না। সিইসি কিংস পার্টি এনসিপি সভাপতির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক করলেন; অথচ আমাদের দেখা দেননি। মনে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের মতোই নির্বাচন কমিশন কিংস পার্টি এনসিপির পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে।

বাংলাদেশ জনতা পার্টির চেয়ারম্যান এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুর রাজনৈতিক দল হিসেবে অনেকেই শর্তপূরণ করতে পারেনি। মাত্র কয়েকমাসে তা সম্ভবও নয়। তবে নির্বাচন কমিশনের শর্তসমূহ আরো সহজ করলে হয়তো অনেকে নিবন্ধন পাবে। সকলেই বর্তমানে অনিবন্ধিত দল এবং মর্যাদার দিক থেকে সকলেই সমান। নির্বাচন কমিশনকে সেভাবেই সকলের সাথে আচরণ করা উচিত। কাউকে বেশি গুরুত্ব দেয়া আবার কাউকে কম তা পুরনো আমলের নিয়মনীতি। এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুতই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে এই নির্বাচন কমিশনের নামে অভিযোগ করবে। তিনি আরো বলেন, কোনো নির্দিষ্ট দলের নাম বলতে চাই না তবে সকলের সাথে যেন সমান ব্যবহার করা হয় তা চায়।

অহিংস গণআন্দোলনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ বলেন, এনসিপির সাথে নির্বাচন কমিশনের যে সখ্যতা গড়ে ওঠেছে তা নিঃসন্দেহে পক্ষপাতিত্বমূলক। অন্যান্যদল যে আবেদন দিয়েছে অনেকের সাথে নির্বাচন কমিশন তা মিলিয়ে দেখছে না। রাজনৈতিক দল হিসেবে সকলের সমান গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার কথা কিন্তু তা হচ্ছে না। কাউকে বেশি সুযোগ দেয়া হচ্ছে, কারো পরিচিত লোক রয়েছে তা দিয়ে সুপারিশ শুরু হয়েছে এমনকি প্রতীক নিয়েও নানাভাবে সুপারিশ হচ্ছে। তারা শাপলা প্রতীক চেয়েছে যেটি জাতীয় ফুল, আমিও জাতীয় ফল কাঠাল প্রতীক চেয়েছি। এখন দেখা যাক এখানে পক্ষপাতিত্ব হয় কিনা। আমরা আশা করব রাজনৈতিক দল হিসেবে সকলের সাথে সমান ব্যবহার করার জন্য এবং আইন অনুযায়ী স্পষ্টভাবে তা বাস্তবায়ন করার জন্য। সকলে যে নিবন্ধন পাবে তা নয় তবে এই কমিশনের নামে যেন অভিযোগ না ওঠে সেজন্য সব আবেদনকৃত রাজনৈতিক দলকে বিভিন্ন মিটিংয়ে সকলকে রাখা উচিত।

জনতার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান এ্যাড. সফিকুল ইসলাম সবুজ খান বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন এনসিপির সাথে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ অবশ্যই করছে। তাদের মাথার ওপর ছায়া হচ্ছে এই সরকার, তাদের একটা ফোনে একটা সচিব বদলি হয়। সেখানে তাদের ভয়ে সরকারি কর্মকর্তারা তো তাদের সাথে সমাদরমূলক আচরণ করবেই।

তিনি আরো বলেন, আমাদের নতুন দল হিসেবে আইনানুযায়ী নিবন্ধন পাবার কথা নয় তবে নির্বাচন কমিশন আমাদের সকলকে একটা মিটিং করে ডাকতে পারে, সেখানে তারা আলোচনা করুক। আমরা চাই নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন মিটিংয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের ডাকা হোক। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এনসিপির নেতাদের অবদান রয়েছে আমাদের কি অবদান নেই? আমি সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, জুলাইয়ের রাজপথে আমিও ছিলাম। আমাদের সাথে তো সে আচরণ করা হচ্ছে না, যা তাদের সাথে করা হচ্ছে।

Top