ভোটের প্রস্তুতিতে এখন কাজ শুরুর পালা
মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের ‘প্রো-অ্যাকটিভ’ ও ‘দলনিরপেক্ষ’ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেছেন, এখন কাজ শুরুর পালা। পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা রেফারির ভূমিকায় থাকব। নির্বাচনে যে খেলবে খেলুক, যারা জিতবে জিতুক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন, চীনসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন করার অঙ্গীকার করছেন। ইসির ওপর আস্থা আছে বলেই তিনি বিশ্বব্যাপী এ ওয়াদা দিচ্ছেন। ওই ঐতিহাসিক নির্বাচন ইসির কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই হবে ইনশাল্লাহ। ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে রোববার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন। সেখানে লন্ডন বৈঠকে আলোচনার বিষয়টিও তুলে ধরেন সিইসি। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।রোববার নির্বাচন কর্মকর্তাদের বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার সংশোধনী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ও নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক/গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালার সংশোধনী ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। ওই প্রক্রিয়ায় এসব বিধিমালা ও নীতিমালা সংশোধনীর বিষয়ে মতামত চাইবে কমিশন। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রধান আইন আরপিও সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধে নির্বাচন কমিশন এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতা পুনর্বহালের উদ্যোগ নিতে ইসি সচিবালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন এবং সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ কাজও দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের প্রশিক্ষণের কর্মপরিকল্পনা ইসিতে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। এয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ম্যানুয়াল তৈরির জন্যও প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা, নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক/গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা এবং বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নীতিমালা ১৯ মার্চ অনুমোদন করে ইসি। এতদিন তা জারি করেনি কমিশন। সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার সংশোধনী ২১ মে কমিশন সভায় তোলা হলেও তা ফেরত পাঠানো হয়। ওইদিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় নীতিগত অনুমোদন করা হলেও তা চূড়ান্ত করেনি ইসি। ‘লন্ডন বৈঠক’-এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার কমিশন এসব বিধিমালা-নীতিমালার সংশোধনী দ্রুত শেষ করার ওপর জোর দিয়েছে।নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিয়ম সভায় লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়টি টেনে সিইসি বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত যত কাজ বাকি, এর অনেক আমরা এগিয়ে নিয়ে গেছি। নানা কারণে অনেক কাজ একটু ঝিমিয়ে গেছে। এখন সব কাজ জোরেশোরে শুরু করতে হবে। সবাই মিলে এখন ফিনিশিং দিতে হবে। তিনি বলেন, একটা সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেব, ইনশাল্লাহ। আপনারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন, সেই ওয়াদা গত রমজানে করেছেন। আজ আপনাদের শপথ হবে আইন অনুযায়ী কাজ করার, বিবেকসম্মত কাজ করার, লেজুড়বৃত্তিক হয়ে কাজ না করার।
শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর যৌথ ব্রিফিং করেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সেখানে একটি যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।লন্ডন বৈঠকের রেশ পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। ওই বৈঠকের পর প্রথম কর্মদিবসে ইসিতে কর্মকর্তাদের কাজে মনোযোগী দেখা যায়। রোববার সিইসি ও চার কমিশনার ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সিইসি চার নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
ইসি সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে বুধ বা বৃহস্পতিবার কমিশনের একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ খসড়া তালিকা ওই বৈঠকে উপস্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই তালিকা অনুমোদন হলে তার ওপর দাবি-আপত্তি চাইবে কমিশন। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০০১ সালের সীমানায় ফিরে যাওয়ার ইসির যে পরিকল্পনা ছিল, জটিলতা তৈরির আশঙ্কায় সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কমিশন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় রেখে সীমানায় পরিবর্তন করে খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। ওই খসড়ার ওপর যেসব দাবি-আপত্তি জমা পড়বে, সেগুলোর ওপর শুনানি করে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
সূত্র আরও জানিয়েছে, রোববার নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন কার্যক্রম নিয়ে ইসির কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। ২২ জুন নতুন দল নিবন্ধনে আবেদন করার সময় শেষ হবে। ইতোমধ্যে যেসব দল আবেদন করেছে, তাদের কাগজপত্র যাচাই করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এছাড়া আচরণ বিধিমালার সংশোধনী নিয়েও রোববার বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চলতি সপ্তাহে এ সংশোধনীর কাজ শেষ হওয়ার আশা করছেন তারা।
বৈঠকে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার বিষয়টি স্মরণ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, আমরা কারও নির্দেশনায় কাজ করি না। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, দলীয় স্বার্থরক্ষায় কাজ না করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী কাজ করার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, অতীতে যা হয়েছে, কেউ যদি মনে করে কেন্দ্র দখল, বাক্স লুট করবে, তা দিবাস্বপ্ন। সে সুযোগ এবার আর পাবে না, এটা করতে দেব না, ইনশাল্লাহ। সবাই সুন্দর নির্বাচন চায়।