হজ কী? কেন মুমিন-হৃদয়ে হজের এই আকুতি? - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হজ কী? কেন মুমিন-হৃদয়ে হজের এই আকুতি?


আলোকিত বার্তা:এখন হজের মৌসুম। মিম্বরে মিম্বরে হজের আলোচনা। চারদিকে সাজ সাজ রব। কারো মুখে তালবিয়া, কারো মনে আগামীর স্বপ্ন, আর কারো হৃদয়জুড়ে মক্কা-মদীনার স্মৃতি ও হাহাকার। এভাবেই হজের মৌসুম আসে আর গোটা মুসলিমজাহানের হৃদয় ও আত্মাকে মথিত ও আলোড়িত করে যায়। যতদিন থাকবে মুমিনের দেহে এক বিন্দু প্রাণ, থাকবে উম্মাহর হৃদয়ে কিছুমাত্র ঈমানের স্পন্দন ততদিন মক্কা-মদীনা, মীনা-আরাফা আমাদের আলোড়িত করবেই। জ্বী, আলোড়িত করবেই, এতে যতই বাড়–ক মুনাফিকজনের মর্মজ্বালা।

হজ কী? কেন মুমিন-হৃদয়ে হজের এই আকুতি?
হজ পরম করুণাময় আল্লাহর ইবাদত। বান্দার প্রতি স্রষ্টার হক্ব। ঈমানের আলোকিত নিদর্শন। কুরআন মজীদের ইরশাদÑ ‘মানুষের ওপর আল্লাহর বিধান ওই ঘরের হজ করা, যার আছে সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য। আর কেউ কুফর করলে আল্লাহ তো বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।’ (সূরা আলে ইমরান-৯৭) সুতরাং হজ আল্লাহর বিধান, আল্লাহর হক্ব। মেহেরবান আল্লাহ এ বিধান কত সহজ করে দিয়েছেন! শুধু সামর্থ্যবানদের জন্য তা ফরয। এরপর সারা জীবনে একবার মাত্র হজ করা ফরয। বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, একবার। এরপর যে বেশি করে তা ঐচ্ছিক। (মুসনাদে আহমদ-১২০৪) সুতরাং সামর্থ্য থাকার পরও যে হজ করে না কে আছে তার মতো বদনসীব?

হজ একটি ইবাদত এবং হজের সফর একটি ইবাদতের সফর। এ নিছক ভ্রমণ বা পর্যটন নয়। ইসলামে তো ভ্রমণ-পর্যটনেরও রয়েছে আলাদা নীতি ও বিধান, যা রক্ষা করা ও পালন করা কর্তব্য। সুতরাং ইবাদতের সফরে আদব রক্ষা করা এবং প্রচলিত ভ্রমণ-পর্যটনের স্বেচ্ছাচার থেকে পবিত্র রাখা তো অতি জরুরি। এরপর যে সময়টুকু ইহরামের হালতে থাকা হয় ওই সময়ের জন্য তো বিশেষ কুরআনী নির্দেশÑ ‘হজে কামাচার, পাপাচার ও ঝগড়া-বিবাদের অবকাশ নেই।’ (সূরা বাকারা-১৯৭)

আর এ নির্দেশ পালনের প্রতিদান কী তা সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। নবী (সা.) এর ইরশাদ, যে আল্লাহর জন্য হজ করল অতপর তাতে অশ্লীল কর্ম ও গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকল সে ওই দিনের মতো (নিষ্পাপ) হয়ে যায় যেদিন সে ভূমিষ্ট হয়েছিল। (সহিহ বুখারী-১৫২১) অন্য হাদিসে বলেছেন, মাবরূর হজের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। (সহিহ বুখারী-১৭৭৩) মাবরূর হজ ওই হজ যা শরীয়তের নিয়ম মোতাবেক গুনাহ থেকে বেঁচে আদায় করা হয়।

হজ একটি ইবাদত। আর ইবাদতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাওহীদ ও সুন্নাহ। এই দুই বৈশিষ্ট্যের কারণে ইসলামের ইবাদত অন্য সব ধর্মের ইবাদত-উপাসনা থেকে আলাদা। ইবাদত একমাত্র আল্লাহর, যিনি বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা এবং যাঁর ইচ্ছায় সৃজন-বর্ধন, লয়-ক্ষয়, উপকার-অপকার। তিনিই একমাত্র উপাস্য ও মাবুদ। তিনি ছাড়া ইবাদত-উপাসনার উপযুক্ত আর কেউ নেই। এই তাওহীদই হচ্ছে জগত-স্রষ্টার শাশ্বত বিধান। এই বিধান দিয়েই তিনি যুগে যুগে নবী রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ ‘আমি তো প্রত্যেক জাতির মাঝেই রাসূল পাঠিয়েছি (এ পয়গাম দিয়ে যে,) তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগূতকে বর্জন করো।’ (সূরা নাহল-৩৬) সবশেষে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কেও এ বিধান দিয়েই পাঠানো হয়েছে এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য পাঠানো হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘বলুন, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যিনি ঈমান আনেন আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে এবং তাঁর অনুসরণ করো, যাতে তোমরা সঠিক পথ পাও। (সূরা আরাফ-১৫৮)

সুতরাং ‘তাওহীদ’ ও ‘ইত্তিবায়ে রাসূল’Ñ এ দুই হচ্ছে আসমানী দ্বীন তথা স্রষ্টাকর্তৃক প্রেরিত ধর্মের প্রাণসত্তা এবং স্রষ্টার ইবাদত-উপাসনা ও সব ধর্ম-কর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সূরা মুলকের বিখ্যাত আয়াত‘ ..যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্যÑ কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম।’ (সূরা মুলক-২) পরম করুণাময় চান ‘উত্তম’ কর্ম; অধিক কর্ম নয়। আর উত্তম কর্ম তাই যা তাঁর প্রেরিত রাসূল (সা.)-র সুন্নাহ মোতাবেক সম্পন্ন হয়। মনগড়া পদ্ধতির ধর্ম-কর্ম তা পরিমাণে যতই হোক এবং যতই ত্যাগ-তিতিক্ষাপূর্ণ হোক আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

হজের মূল্যবান সময় অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় না করে ইবাদত-বন্দেগী ও দ্বীনী ইলম অর্জনে মশগুল থাকা কর্তব্য। এভাবে আমাদের হজ, যা এক মহান ইবাদত ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রোকন, সুসম্পন্ন হওয়ার আশা করা যায়। পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। (আমীন)

Top