ফের শাহবাগ অবরোধ,আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল দেশ - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফের শাহবাগ অবরোধ,আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল দেশ


মু . এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:জুলাই গণহত্যায় জড়িত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ (শাহবাগ ব্লকেড) করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দলটি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কেউ শাহবাগ ছাড়বে না-শুক্রবার সন্ধ্যায় এমন ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারী সব পক্ষ। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, অভ্যুত্থানে নিহত পরিবারের সদস্যসহ কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং সাভারে ঢাকা-আরিচা মহসড়ক অবরোধ করা হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে গতকাল রাজধানী ঢাকা ছিল রীতিমতো উত্তাল। রাত ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছিলেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা।এর আগে জুমার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার কাছে ফোয়ারার সামনের সড়কে সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। ওই সমাবেশে এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহ ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠ ছাড়বেন না। এখান থেকে তাদের দ্বিতীয় অভ্যুত্থানপর্ব শুরু হবে। মঞ্চ থেকে বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে শাহবাগ অবরোধ করার ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। আর রাত ১১টার দিকে শাহবাগে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, আজ শনিবার বিকেল ৩টায় গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করা হবে। পাশাপাশি সারাদেশের জুলাই পয়েন্টে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান।

এদিকে শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দাবি আদায়ে কড়া বার্তা দেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শাহবাগের অবস্থান চলমান থাকবে। দলমতনির্বিশেষে আওয়ামী লীগ ও দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে জুলাইয়ের সব শক্তি এক থাকবে-এটাই প্রত্যাশা। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড চালু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে সমগ্র বাংলাদেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে। দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, জুলাইবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, ইসলামবিরোধী, নারীবিরোধী ও মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী মুজিববাদী সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণে বাংলাদেশপন্থি সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই।যমুনার নিকটবর্তী সড়কে ট্রাক দিয়ে তৈরি সমাবেশ মঞ্চে হাসনাত বলেন, ‘ইন্টেরিমের (অন্তর্বর্তী সরকারের) কানে আমাদের দাবি পৌঁছায়নি। তাই আমরা সমাবেশস্থল থেকে শাহবাগ অবরোধে যাচ্ছি। দাবি না আদায় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করব।’ তিনি বলেন, ১০০টা ফেরাউন একসঙ্গে করলেও একটা হাসিনা পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে কেন রাজনৈতিক দল বলা হয়? আমরা শুনতে পাচ্ছি, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তিনি নাকি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত লেগে আছে। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে তারা নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। ভারতীয়দের সহায়তায় আমাদের দেশপ্রেমিক বিডিআরদের পিলখানায় হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের ফিরিস্তি অনেক দেওয়া হয়েছে, আর নয়। আওয়ামী লীগনামক ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে থাকতে চাই না।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলনের নেতা আশরাফ আলী আকন, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদি, জুলাই শহিদের বোন সাবরিনা আফরোজ সীমন্তি, ইমাম হাসানের ভাই রবিউল ইসলাম, জুলাই আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ, মাজহারুল ইসলাম আপন প্রমুখ।আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ডাকে কানায় কানায় পূর্ণ হয় সমাবেশস্থল। তীব্র গরমের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন বিক্ষোভকারীরা। গরমে তাদের কিছুটা প্রশান্তি দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্প্রে কেনন দিয়ে পানি ছিটানো হয়।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জুলাই আন্দোলনের অংশীজন ও আন্দোলনকারী ছাত্ররা। বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থানের ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। পরে রাত ১০টার দিকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীরা হাসনাতের সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন। পরে রাত ১টার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং দলীয় নেতাকর্মীরা। এনসিপির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও রাতে বিক্ষোভে অংশ নেন। রাত ১টার পর হেফাজতে ইসলামের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীও যমুনার সামনে অবস্থান নেন। রাত দেড়টার দিকে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির নেতাকর্মীরাও সেখানে উপস্থিত হন। রাত ২টার দিকে যমুনার সামনে যান ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা। রাতভর চলে বিক্ষোভ। শুক্রবার সকালে সেখানে বিক্ষোভে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।

এদিকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঘোষণা দেন, বাদ জুমা যমুনার পাশে ফোয়ারার সামনে বড় সমাবেশ করা হবে। একই সঙ্গে থাকবে বিক্ষোভ কর্মসূচিও। এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ফোয়ারার সামনে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে বাদ জুমা জনসমুদ্র হবে। আজ তারা বুঝতে পারবেন কারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়। তিনি দলমতনির্বিশেষে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি, গত দেড় দশক ধরে নির্যাতিতরা, বিডিআর পরিবার, হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবার, গুম-খুনের শিকার পরিবার-সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমবেত হতে আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জুমার পর ছাত্র-জনতা ফোয়ারার সামনে অবস্থান নেবে। ফয়সালা করেই আমরা ঘরে ফিরব। কারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় আর কারা চায় না, তা আজ ফয়সালা হবে।’ বাদ জুমা সব নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ ইসলামপন্থি কয়েকটি দলের নেতাকর্মী হাসনাত ও নাসীরুদ্দীনের সঙ্গে ছিলেন। হাসনাতদের এ ঘোষণার পর সেখানে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে যমুনার সামনে থেকে সরে ফোয়ারার সামনের মঞ্চে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এনসিপির পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত ছাত্র মজলিসসহ বিভিন্ন সংগঠন ও দলের নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন সেখানে বক্তব্য দেন। পরে হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অবরোধ করার ঘোষণা দেন।

জুমার নামাজ আদায় : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে জুমার নামাজ আদায় করেছেন বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতা। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীদের নামাজের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। তপ্ত রোদের মধ্যেই তারা রাস্তায় নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে বসে পড়েন। জুমার নামাজ শুরু হয় দুপুর ১টা ১০ মিনিটে। নামাজে ইমামতি করেন এনসিপি নেতা মাওলানা সানাউল্লাহ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে কড়া পাহারায় দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

লাঠিচার্জ : শুক্রবার বাদ জুমা ফোয়ারার সামনে স্টেজ করে সড়কে যখন সমাবেশ চলছিল। তখনো প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান করেন ১৫-২০ জন আন্দোলনকারী। পুলিশ তাদের বুঝিয়েও সেখান থেকে সরাতে পারেনি। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

নিরাপত্তা জোরদার : প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যমুনার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি বাড়ানো হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে কাকরাইল মসজিদ পর্যন্ত সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পুলিশসহ অন্য বাহিনীগুলোর নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। সমাবেশ কেন্দ্র করে নিরাপত্তার স্বার্থে যমুনার সামনের সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে শাহবাগ মোড়সহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জলকামান, রায়ট কার। র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতিও চোখে পড়েছে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো পক্ষ স্যাবোটাজ ঘটাতে না পারে সেজন্য সাদা পোশাকের গোয়েন্দাদের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনবল বাড়ানো হয়েছে। সতর্ক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

অবরোধে যানজট, দুর্ভোগ : শাহবাগ অবরোধের ফলে ওই এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। অন্যদিকে একই দাবিতে উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কও অবরোধ করা হয়েছে। এতে সড়কের দুপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধের ফলে যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। অবরোধের কারণে শাহবাগের আশপাশের সড়কে আটকে পড়ে যানবাহন। পরে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। অন্যদিকে একই দাবিতে উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। এতে ওই সড়কের দুপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

উত্তরা প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর উত্তরায় মহাসড়ক ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা। বিকাল সাড়ে ৫টার পর উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় মহাসড়কের প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখা জুলাই ব্রিগেডের সংগঠক সরদার রিয়াদ বলেন, সোজা কথা হচ্ছে, যে আওয়ামী লীগ জুলাই-আগস্টে আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে তাদের অবশ্যই বাংলার মাটিতে নিষিদ্ধ করতে হবে। এটা ইন্টেরিম সরকারের আরও আগে করা উচিত ছিল। বক্তব্যে জুলাই রেভ্যুলেশন অ্যালায়েন্সের সক্রিয় সদস্য লাবিব মুহাম্মাদ বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে আর কোনো অজুহাত আমরা মানব না। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলতে থাকা ব্লকেড কর্মসূচি থেকে অনতিবিলম্বে আইন পাশ করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে মিছিল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশ প্রদক্ষিণ করেন জুলাই আন্দোলনের সদস্যরা।

শাহবাগ উত্তাল : ঢাবি প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ রীতিমতো উত্তাল। এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছেন সেখানে। তারা ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ এমন নানা বক্তব্য দেন তারা।

এদিকে, রাত ৮টা থেকে শাহবাগে জায়ান্ট স্ক্রিনে জুলাই গণহত্যার ডকুমেন্টারি দেখানো শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা নানা স্লোগানে শাহবাগ উজ্জীবিত করে রাখেন।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে পল্টন মোড় অবরোধ গণঅধিকার পরিষদের : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার পল্টন মোড় অবরোধ করে গণঅধিকার পরিষদ। এদিন দুপুরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এক গণমিছিল শুরু করে পল্টন মোড় থেকে। মিছিলের শুরুতে পল্টন মোড়ে পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা করে। এ সময় ১৫-২০ জন আহত হন। এরপর পল্টন মোড় ও বিজয়নগর ঘুরে পল্টন মোড় অবরোধ করে গণঅধিকার পরিষদ। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত গণঅধিকার পরিষদের এই অবরোধ চলবে।

ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়-সারজিস আলম : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন ছাড়া সব রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে। বিএনপি এলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ কথা বলেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়। আজকের এই শাহবাগ ইতিহাসের অংশ এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির মানদণ্ড।’ এই শাহবাগ জুলাই অভুত্থানের, এই শাহবাগের বিজয় আবশ্যক।

বিকেল ৩টায় শাহবাগে গণজমায়েত : শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এর পাশাপাশি শনিবার বিকেল ৩টার দিকে শাহবাগে গণজমায়েত ঘোষণা করেন তিনি। হাসনাত বলেন, জুলাই আন্দোলনের শক্তি, আওয়ামী নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, যারা পিলখানা, শাপলা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, মোদিবিরোধী আন্দোলনের শিকার হয়েছেন, সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শাহবাগে গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। তারই সঙ্গে সারা দেশে যেসব পয়েন্টে জুলাই আন্দোলন হয়েছে, সেসব পয়েন্টে গণজমায়েত ঘোষণা করেন তিনি। হাসনাত বলেন, এই লড়াই বাংলাদেশপন্থি ও ফ্যাসিবাদপন্থিদের লড়াই। যারা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশকে ভয় বানিয়ে আমাদের শাসন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। তিনি বলেন, তিন দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে। এই তিন দফা হলো-আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এই তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ : সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা ছাড়া মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কে বাঁশ, লাঠি ফেলে ও ট্রাকসহ বেশ কিছু যানবাহন আড়াআড়ি রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে যানচলাচল বন্ধ করে দেন তারা। অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ব্যতীত সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ : সাভারে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাভারের পাকিজা মোড় (শহিদ ইয়ামিন চত্বর) এলাকায় প্রথমে মহাসড়কের আরিচামুখী লেন এবং কিছু সময় পর ঢাকামুখী লেন অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক আন্দোলনকারী। এ সময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ প্রত্যাহার করবেন না।

জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : জাবি প্রতিনিধি জানান, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ফের বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাত ১০টায় বটতলা থেকে মিছিল শুরু হয়। পরে তা নতুন রেজিস্ট্রার ভবন, কলা ও মানবিক অনুষদের নতুন ভবন ও সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনের সড়ক হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিষিদ্ধ করতে হবে-সেলিম উদ্দিন : জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ছাত্রদের আর কষ্ট দেবেন না। কারণ, আপনারা কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা শ্রেণি দ্বারা নির্বাচিত নন বরং ছাত্ররাই আপনাদের মনোনীত করেছেন। তাই আর অপেক্ষা না করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রূপনগরের কড়ইতলা মোড়ের ইস্টার্ন হাউজিংয়ে সহযোগী সদস্য সংগ্রহ উপলক্ষ্যে রূপনগর থানা জামায়াত আয়োজিত এক যুব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

Top