ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলে ভোট হওয়া উচিত
মোহাম্মাদ মহাব্বাতুল্লাহ মাহাদ : আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এ সময়ে সম্ভব না হলে নির্বাচনের জন্য এপ্রিল মাস পার হওয়া উচিত নয়। শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে ঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি। একটি ফেব্রুয়ারিতে অর্থাৎ রোজার আগে। তবে যদি এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে, তাহলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এপ্রিল মাস পার হওয়া উচিত নয়।যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলে আসছেন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন নির্বাচনের সময়সীমা। এ প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এখানে আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিকতার বিষয় আছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ এবং মার্চ মাসের তিন ভাগের দুই ভাগ রোজা থাকবে। সে সময়ে নির্বাচন সম্ভব নয়। সংস্কার কার্যক্রম যেটা হাতে নেওয়া হয়েছে, তা যদি আক্ষরিকভাবেই গতিশীল করা হয় এবং অংশীজনরা সে রকম সহযোগিতা করেন, তাহলে সরকারের ঘোষিত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন সম্ভব।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. শফিকুর রহমান। বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে হলে ওখান (উপদেষ্টা পদ) থেকে বের হয়ে এসে দিন। ওখানে থেকে নয়। রাজনীতি করার আপনারও অধিকার আছে। কিন্তু দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কেউ যদি রাজনীতি করেন, সেটা জাতি মেনে নেবে না, জাতি চায় না।জামায়াত আমির বলেন, ‘দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দল তাদের কর্মীদের থেকে জাতিকে সুরক্ষা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য যেখানে যাই শুনতে হয়, রেট আগের চেয়ে বেশি। কেন ভাই রেট আগের চেয়ে বেশি হবে? রেটই তো থাকবে না।তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা চালিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি পিলখানা হত্যাকাণ্ড, দ্বিতীয়টি ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড এবং চব্বিশের জুলাই আগস্ট মাসে চালানো হত্যাযজ্ঞের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দল বাংলাদেশকে শোষণ করেছে পুরো সময়জুড়ে। তারা এ দেশের বিরোধী দল-মত এবং বিশেষভাবে ইসলামপন্থি জনগণের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদের হাতে নির্যাতিত নিহত জামায়াতের নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের এ সময় স্মরণ করেন তিনি।বিগত সরকারের আমলে ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত পাচারের ঘটনার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান শফিকুর রহমান। পেশিশক্তি ও কালোটাকার প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, বিশ্বের ৬২টি দেশ এই পদ্ধতিতে নির্বাচন করে। এটা যারা একবার শুরু করেছে, তারা আর বাদ দেয়নি।নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা দেখে বিস্মিত হয়েছেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদ্যমান কালচারের সম্পূর্ণ বিপক্ষে তারা কিছু সুপারিশ এনেছেন। সেগুলো বিবেচনা করার প্রশ্নই ওঠে না। এ রকম বিষয় যদি সমাজে কখনো ভুলক্রমে ঢুকে পড়ে, তাহলে সামাজিকব্যবস্থা তছনছ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তাদের কিছু সুপারিশ আল্লাহর বিধানের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে তারা করেছেন।’ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব কাণ্ডজ্ঞানহীন উল্লেখ করে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করার কথা বলেন। এ সময় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।